Advertisement
১০ জানুয়ারি ২০২৫
Corruption

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন

সম্প্রতি প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সরকারি দফতরকে তুলোধোনা করলেন— পুকুর ভরাট, সরকারি জমি দখল ইত্যাদি যে তিনি বরদাস্ত করবেন না, জানিয়ে দিয়েছেন।

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ০৫:৪৩
Share: Save:

রাস্তার ধারে পাঁচিলের উপরে, লোকাল ট্রেনের কামরায়, ল্যাম্পপোস্টের গায়ে এবং সম্ভাব্য-অসম্ভাব্য বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত বিজ্ঞাপনী পোস্টার সাঁটা হয়: ‘এক মাসে ফ্যাট-ভুঁড়ি কমান; বিনা ওষুধে, বিনা ব্যায়ামে’। বছরের শুরুতে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষনেতৃত্বের ‘নিউ ইয়ার্স রেজ়োলিউশন’ শুনে সেই বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ে যাওয়া বিচিত্র নয়। অবশ্য, মুখ্যমন্ত্রী পুরনো বছর থেকেই বিভিন্ন উপলক্ষে দলের বিধায়ক-নেতাদের বকুনি দিচ্ছেন, তাঁদের টাকার উৎস জানতে চাইছেন, শিল্পমহলকে বিরক্ত করতে মানা করছেন। নববর্ষে তিনি ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একমত হলেন যে, দলের মেদ ঝরাতে হবে। অনুমান করা চলে, তাঁরাও ‘বিনা ওষুধে’ এবং ‘বিনা ব্যায়ামে’ মেদ ঝরানোর পন্থা খুঁজছেন। কারণ, ‘ওষুধ’ এবং ‘ব্যায়াম’, দুটোই বহু কাল যাবৎ জানা, এবং তা প্রয়োগে দলের শীর্ষনেতৃত্বের অনীহার কথাও অজানা নয়। যেমন, আবাস যোজনাকে কেন্দ্র করে যে দুর্নীতির সংবাদ কার্যত প্রতি দিন প্রকাশ্যে আসছে, তার চরিত্রও যেমন রাজ্যবাসীর চেনা, দলীয় নেতৃত্ব কোন দাওয়াই প্রয়োগ করলে এই দুর্নীতি বন্ধ করা যেত, সে কথাও জানা। মাঝেমধ্যে টাকা ফিরিয়ে যে এই দুর্নীতির মূলোচ্ছেদ করা যাবে না, তা নিয়ে অন্তত রাজ্যবাসীর কোনও সংশয় নেই। কিন্তু, যে ওষুধ বা ব্যায়ামে কাজ হওয়ার ছিল, নেতারা তা প্রয়োগ করেননি। সম্প্রতি প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সরকারি দফতরকে তুলোধোনা করলেন— পুকুর ভরাট, সরকারি জমি দখল ইত্যাদি যে তিনি বরদাস্ত করবেন না, জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁর বকুনিতে এ সব অনিয়ম বন্ধ হবে, এতখানি আশা করার মতো মনের জোর রাজ্যবাসীর আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীও সম্ভবত বকুনির অতিরিক্ত আর কিছু করতে নারাজ।

এই ‘মেদ’ ঝরানোর দাওয়াই হল, আইনকে আইনের পথে চলতে দেওয়া। পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের মেরুদণ্ড খোয়া যাওয়ার ঘটনাটি আগের জমানাতেই সম্পন্ন হয়েছিল— এই জমানা পুলিশের সেই প্রশ্নাতীত শাসক-আনুগত্যকে পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করেছে। শাসক দলের সঙ্গে লতায়-পাতায় যোগ, এমন দুষ্কৃতীরাও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়, তাদের কেশাগ্র স্পর্শ করার সাহস বা ইচ্ছা পুলিশের নেই। প্রয়োজন ছিল পুলিশকে এই শিকল থেকে মুক্ত করার। সিন্ডিকেট-রাজ বা কাটমানি, বালি-কয়লা-চাল চুরি অথবা শাহজাহান শেখ-জেসিবি’র মতো বাহুবলীদের দাপট— সবই আটকানোর সামর্থ্য পুলিশের আছে। অবশ্য, তার জন্য পুলিশকেও প্রসাদী চাল-কলার লোভ ত্যাগ করতে হবে। দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নেতা-মন্ত্রীদের প্রথমে চেতাবনি দেওয়া যেত, এবং তাতে কাজ না হলে বহিষ্কার করা যেত। দুর্নীতিগ্রস্ত আমলা-আধিকারিকদের শাস্তি দেওয়াও এমন কিছু কঠিন কাজ নয়। সবচেয়ে বড় কথা, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সর্বব্যাপী অভিযোগ, তাদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় দেওয়ার অভ্যাসটি পরিত্যাগ করা বিধেয় ছিল। অবশ্য কেউ বলতে পারেন, এ ভাবে দুর্নীতির লোম বাছতে বসলে তৃণমূলের কম্বলটি আর টিকত না।

আশঙ্কাটি যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ আকছার মেলে। জনমানসে বিশ্বাস যে, দলটির সর্বাঙ্গে দুর্নীতি। কেন, তার কারণটিও স্পষ্ট— উত্তর-আদর্শবাদ রাজনীতির চেহারা কেমন, তৃণমূল তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। দলের সঙ্গে থাকলে অবৈধ খাজনা আদায়ের অধিকার অর্জন করা যায়, এ ভিন্ন আর কোনও কারণে ক’জন তৃণমূল করেন, সে প্রশ্ন গবেষকদের কাছে আকর্ষণীয় হতে পারে। খাজনা আদায়ের অধিকারটিই যদি কেড়ে নেওয়া হয়, তবে পড়ে থাকে কী? কিসের টানে দল করবেন তাঁরা? এই কথাটি দলের নেতা-কর্মীরা যেমন জানেন, শীর্ষনেতৃত্বও তেমনই জানেন।ফলে, বিনা ওষুধ ও ব্যায়ামে মেদ ঝরানোর কথা বলা ভিন্ন উপায়ান্তর নেই। কারণ, বিজ্ঞাপনের ভাষায়, ‘এর কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই’।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC police Advertisement Mamata Banerjee Avishek Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy