Advertisement
১১ জানুয়ারি ২০২৫
COP Summit

সম্পাদক সমীপেষু: ধ্বংসের আহ্বান

২০১৫ সালে প্যারিস সম্মেলনে স্থির হয় প্রাক্-শিল্পায়ন যুগের তুলনায় দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস অধিকের মধ্যে বিশ্ব উষ্ণায়নকে ধরে রাখতে হবে।

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৪:২০
Share: Save:

পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায়ের উত্তর সম্পাদকীয় ‘প্রাপ্তি যৎসামান্য’ (১৭-১২) সঠিক প্রসঙ্গই তুলে ধরেছে। সব রাজনীতিবিদ জলবায়ু সম্মেলনে উপস্থিত থেকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে প্রস্তাব রাখেন, যা থেকে জলবায়ু সংক্রান্ত সমস্যার কোনও সমাধান হয় না। আজ়ারবাইজানের বাকু-তে অনুষ্ঠিত সিওপি-২৯ শূন্যগর্ভ মনে হয়েছে উন্নয়নশীল দেশের কাছে।

২০১৫ সালে প্যারিস সম্মেলনে স্থির হয় প্রাক্-শিল্পায়ন যুগের তুলনায় দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস অধিকের মধ্যে বিশ্ব উষ্ণায়নকে ধরে রাখতে হবে। ঠিক হয় বার্ষিক দশ হাজার কোটি ডলারকে ভিত্তি ধরে একটি ‘ভর্তুকি ফান্ড’ গড়ে তোলা হবে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলিকে জলবায়ু পরিবর্তন রোখার পরিকাঠামো গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। রাষ্ট্রপুঞ্জের ২৬তম আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় প্রথম দু’সপ্তাহ ধরে আলোচনার বিষয় ছিল জলবায়ু পরিবর্তনে কয়লার বিপজ্জনক প্রভাব এড়াতে চুক্তিবদ্ধ হবে সম্মেলনে অংশ নেওয়া ১৯৭টি দেশ। প্রাধান্য পায়, বিভিন্ন দেশগুলিতে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণে আনার আলোচনা। তার জন্য কয়লা, খনিজ তেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে অচিরাচরিত শক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ শক্তি বা পরমাণু শক্তিকে হাতিয়ার করে এগোতে হবে। দরিদ্র উন্নয়নশীল দেশগুলো, যাদের কয়লা, খনিজ তেল বা কাঠের জ্বালানিই একমাত্র ভরসা, তারা কী করবে, প্রযুক্তি কোথায় হাতে! প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের উন্নতিকে হাতিয়ার করে বিকল্প অচিরাচরিত শক্তিতে ভরসা করলেও তা উন্নয়নশীল দরিদ্র দেশগুলোর পক্ষে কতটা সহজলভ্য হয়েছে!

বায়ুমণ্ডলে জমে থাকা কার্বন ডাইঅক্সাইড দীর্ঘ সময় তার প্রভাব ধরে রাখে। এই উষ্ণায়নের প্রভাবে আইসল্যান্ডের বরফের চাদর গলছে, সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে। অরণ্যনিধন করে, নগরায়ণের নেশায় বুঁদ হয়ে, জলাভূমি গ্রাস করে আমরা নিজেদের পায়ে কুড়ুল মারছি। কথার কথায় চিঁড়ে ভিজবে না, সুপরিকল্পিত নীতি ও তার বাস্তবায়নে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে নিজেদের সামর্থ্য নিয়ে। প্রবন্ধকার ঠিকই বলেছেন, রাজনীতিকদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবের মধ্যে বিস্তর ফাঁক থাকে।

সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, কলকাতা-১৫৪

নির্যাতিত

বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘রাখোনি বাঙালি করে?’ (১৬-১২) এক কথায় বাঙালদের স্মৃতি উস্কে দেওয়ার মতো প্রবন্ধ। নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝি ‘হিন্দু বাঙাল’ হওয়াটা সব সময়েই আতঙ্কের ও অপমানের। এই অপমান যে শুধু দেশভাগের ফলে ভিটেমাটি ফেলে অন্য দেশে কোনও ক্রমে বাঁচার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, তা নয়। বাঙালদের উপর সামাজিক অন্যায়ও বিস্তৃত অনেক গভীরে। অনেক ক্ষেত্রে এই দেশে হিন্দু বাঙালিদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা সামাজিক বয়কটের থেকে কিছু কম ছিল না। যেমন তখনকার বাঙালি বলতে দুধে-ভাতে বাঙালি যাঁদের বলি, তাঁরা ছিলেন উঁচুতলার মানুষ। তাঁদের মধ্যে অনেকে পূর্ববঙ্গ থেকে আসা পরিবারের ছেলে-মেয়ের সঙ্গে নিজেদের ছেলে-মেয়েদের বিয়ে তো দূর, মিশতে পর্যন্ত দিতেন না। হয়তো কলোনি লাগোয়া কোনও এ-দেশীয় ধনীর বাড়ি অনুষ্ঠান হচ্ছে, পাশের কলোনির লোকের কিন্তু নিমন্ত্রিত হওয়ার অধিকার ছিল না। এক অদৃশ্য সামাজিক দেওয়াল সব সময় তোলা থাকত— ওরা তো ‘উদ্বাস্তু’! আজ হয়তো সমাজ বদলেছে কিন্তু এই সব বেদনাদায়ক স্মৃতি এই দেশের মানুষদেরই দেওয়া। এখন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর আছে, মাথার উপর ছাদ হচ্ছে। তখনকার সরকার কী করেছিল? এক চিলতে দরমার ঘরে ৭-৮ জনের বাস। আর জীবিকা? হয় বিড়ি বাঁধা নয়তো মজুর খাটা। এটাই ছিল তখনকার ভারতীয় নেতাদের দান।

বিগত কয়েক বছর যাবৎ আবার হঠাৎ করেই ও পার বাংলায় হিন্দু বিদ্বেষ মাথাচাড়া দিতে শুরু করে। পুজোয় মূর্তি ভাঙা, মন্দিরের ক্ষতিসাধন-সহ হিন্দু মেয়েদের উপর শারীরিক নির্যাতন, ধর্মান্তরণ— কোনও কিছুই বাদ যায় না। গোদের উপর বিষফোড়ার মতো ছাত্র আন্দোলন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে জামায়াতে নামে এক মূর্তিমান বিভীষিকা বাংলাদেশে হিন্দুদের জীবন নতুন করে বিপন্ন করে তুলেছে। এক জন হিন্দু ধর্মগুরু বিনা বিচারে মাসাধিক কাল ধরে বন্দি, তাঁর হয়ে কোনও উকিল আদালতে সওয়াল করতে পারছেন না। প্রতিনিয়ত প্রকাশ্যে হুমকি, মার, কী নেই? ইউনূস সরকার চোখে ঠুলি পরে আছে। কুষ্ঠিয়া, রংপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা, ঢাকা সব জায়গায় হিন্দুরা আক্রান্ত। এই বাংলাদেশে রবিঠাকুর ব্রাত্য। কারণ, তিনি হিন্দু, সর্বোপরি ‘ইন্ডিয়া’র কবি। এ কোন পৃথিবীতে বাস করছি আমরা? দরকার সে দেশের রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ, কিন্তু কোথায় সেই বলিষ্ঠ পদক্ষেপ?

স্বপন চক্রবর্তী, জগৎবল্লভপুর, হাওড়া

শিক্ষাছুট

সম্পাদকীয় ‘বিপন্ন শৈশব’ (২১-১২) প্রসঙ্গে কিছু কথা। পশ্চিমবঙ্গে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা শূন্য, শ্রমমন্ত্রীর এমনই বক্তব্য শুধু অবিশ্বাস্য নয়, উদাসীনতা ও বাস্তবজ্ঞানহীনতার পরিচায়কও বটে। প্রায় ত্রিশ বছর শহরের এক কলোনি অঞ্চলের মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতা করার অভিজ্ঞতা থেকে এটুকু বলতে পারি যে, স্কুলপড়ুয়াদের স্কুলছুট বা ড্রপ আউট এক চিরন্তন সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথ ভাবে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রকল্প গ্ৰহণ করেছে। ৬-১৪ বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার লক্ষ্যে ও স্কুলছুট বন্ধ করতে সিলেবাস ও মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তন, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল তুলে দেওয়া, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক ও স্কুল ইউনিফর্ম প্রদান, মধ্যাহ্নকালীন আহারের বন্দোবস্ত প্রভৃতি নানাবিধ প্রকল্পের পরেও পড়ুয়াদের মধ্যে স্কুলছুটের প্রবণতা থেকে গেছে।

২০০৪ ও ২০০৭ সালে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্পে সরকারি ও সরকার পোষিত প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুলগুলিতে পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগ করা হয়। তাঁদের মূল কাজ হিসাবে বলা হয়েছিল, স্কুলছুট বা স্কুলে না আসা পড়ুয়াদের শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে আনার এবং তাদের আলাদা ভাবে শিক্ষা দানের মাধ্যমে শিক্ষার মূল স্রোতে পঠনপাঠনের উপযোগী করে তোলা। অভিভাবক-অভিভাবিকাদের বুঝিয়ে স্কুলছুট বা স্কুলে ভর্তি না হওয়া পড়ুয়াদের একটা বড় অংশকে স্কুলে ফেরানো সম্ভব হলেও তাদের আলাদা ভাবে শিক্ষা দানের ব্যবস্থা কতটুকু হয়েছে? অধিকাংশ স্কুলে স্কুলছুট শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনার পর আবার শিক্ষার মূল স্রোতের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করা হয়েছে। কিছু দিন স্কুলে আসার পর তারা আবার স্কুলছুট হয়ে পড়েছে।

সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলগুলিতে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষালাভের সুবিধা ও মধ্যাহ্নকালীন আহারের ব্যবস্থা সত্ত্বেও বিপুল সংখ্যক পড়ুয়ার স্কুলছুট বিশেষ ইঙ্গিতবাহী। কর্মহীনতা ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি নিয়োগে অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেন এবং উচ্চশিক্ষিতদের ভয়াবহ বেকারত্বের বাস্তব পরিস্থিতিতে সাধারণ মেধার পড়ুয়া ও তাদের অভিভাবকদের মনে বদ্ধমূল হয়েছে— পড়াশোনা মানে সময়ের অপচয়। তাই অল্প বয়স থেকেই তারা রোজগারে নেমে পড়ছে। ব্যাগ তৈরির কারখানা, আনাজ বিক্রি, ধাবা-রেস্তরাঁ, ইটভাটা, বাজি কারখানার প্রভৃতি কাজে শিশুরা দৈনিক বা মাসিক মজুরির ভিত্তিতে কাজে নিযুক্ত হচ্ছে।

সম্পাদকীয়ের পরিশেষে যথার্থই বলা হয়েছে, সরকারের কর্তব্য, প্রতিটি শিশুর শৈশব, কৈশোর সুরক্ষিত ও অর্থপূর্ণ করে তোলা। পশ্চিমবঙ্গে কত স্কুলছুট, কত শিশু কর্মনিযুক্ত, এখনই তার সমীক্ষা প্রয়োজন। এদের স্কুলে ফেরানোই সরকারের কাজ, সমাজেরও।

হারান চন্দ্র মণ্ডল

অন্য বিষয়গুলি:

Climate Change
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy