সুদূর নাশিক শহর থেকে বাণিজ্য-রাজধানী মুম্বই পর্যন্ত এই দীর্ঘ পথ হাজার-হাজার কৃষকেরা পায়ে হেঁটে সুশৃঙ্খল আন্দোলনে সামিল হলেন। আন্দোলন ছিল একেবারে শান্তিপূর্ণ এবং জনসাধারণের জীবনযাত্রায় তা কোনও রকম বিঘ্ন বা অসুবিধা সৃষ্টি করেনি। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে মহারাষ্ট্রের এই কৃষক আন্দোলনের পার্থক্য হল, আমরা যে কোনও আন্দোলনে জনসাধারণকে চূড়ান্ত হয়রানি, বিপদ ও কষ্টের মধ্যে ফেলি। প্রতিবাদের নামে পথ অবরোধ, ঘেরাও, ভাঙচুর, খুন-জখম পশ্চিমবঙ্গে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এখানকার আন্দোলনে বিশৃঙ্খলাই একমাত্র বড় বৈশিষ্ট্য। আমরা বাঙালিরা আমাদের সংস্কৃতির বড়াই করি। কিন্তু এই সংস্কৃতি হল সাঙ্গীতিক বা আনুষ্ঠানিক সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রা ও বোধের সংস্কৃতি মেলে না। সেই সভ্য সংস্কৃতি আমরা বরং এই কৃষকদের কাছে শিখে নিতে পারি।
সুনীল কুণ্ডু কলকাতা-৪৭
জল বাঁচান
২২ মার্চ চলে গেল বিশ্ব জল দিবস। ১৯৯৩ সাল থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জ এই দিনটি পালন করে আসছে। এ বছরের ভাবনা: প্রকৃতির জন্য জল। পৃথিবীতে তিন ভাগ জল, তা সত্ত্বেও সভ্য মানুষকে জল-সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। এর কারণ পৃথিবীর মোট জলের পরিমাণের মাত্র ২.৫% পানযোগ্য। এই পানযোগ্য জলের আবার ৬৮.৭% বরফ বা হিমবাহের আকারে আছে। ২৯.৯% ভূগর্ভে সঞ্চিত থাকে। বাকি ২.৬৬% হ্রদ, পুকুর, জলাশয়ে জমা থাকে। আমরা মূলত কৃষিকাজ, গৃহস্থালি ও পানের জন্য ভূগর্ভের জলকে বেছে নিয়েছি। প্রকৃতির এই অমূল্য সম্পদটি সর্ব সাধারণের হলেও দিনে দিনে এর প্রাপ্তিযোগ্যতা কমে যাচ্ছে, কারণ: যথেচ্ছ ও অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভের জলের উত্তোলন এবং জলের অপচয়।
ভারতে এই অবস্থা উদ্বেগজনক। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন জানায়, এ-দেশের ভূপৃষ্ঠ ভাগের ৬০-৭০ শতাংশই জলের অভাবে ভুগছে। এখানে উত্তোলিত ভৌম জলের ৮৯% সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়। গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত হয় ৯% আর ২% মাত্র ব্যবহৃত হয় শিল্পের প্রয়োজনে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, ২০৩০ সালের অগস্ট-এর মধ্যে ভারত তার প্রয়োজনের মাত্র অর্ধেক জল পাবে।
জল সংরক্ষণের উপায় হিসাবে বর্ষার জল সংগ্রহ, কৃষিকাজের পদ্ধতি ও সেচব্যবস্থার পরিবর্তন, বর্জ্য জলের পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের অভ্যাসের পরিবর্তন দরকার। বৃষ্টির জল সংরক্ষণের উদ্যোগ প্রায় দু’দশক আগে থেকেই করা হয়েছে। তেমন সাফল্য না পাওয়ায় পার্থসারথি কমিটি গঠিত হয়েছে (টেকনিক্যাল কমিটি অন ওয়াটার কোড ডেভেলপমেন্ট)। তারা একটি রিপোর্টও জমা দিয়েছে সরকারের কাছে। লাল ফিতের ফাঁসে আবদ্ধ সেই রিপোর্ট।
সাধারণ মানুষের মাথায় থাকে না, জল ব্যবহারের যথাযথ ব্যবস্থাপনা না করলে জল ফুরিয়ে যেতে পারে। দৈনন্দিন জীবনে আমরা যদি একটু অভ্যাসের পরিবর্তন করি, তা হলে জল সাশ্রয় হতে পারে। যেমন স্নানের সময় শাওয়ার না খুলে, বালতিতে জল ভরে যদি স্নান করি, জলের কল খুলে কাপড় না কেচে যদি বালতিতে রেখে জল ব্যবহার করি, জলের পাইপ দিয়ে গাড়ি না ধুয়ে ভেজা কাপড় দিয়ে কাজটি যদি করি, তা হলে অনেকটা জল বাঁচবে। এর জন্য কোনও প্রযুক্তির দরকার নেই। দরকার একটু সচেতনতা।
অনুভব বেরা জাহালদা, পশ্চিম মেদিনীপুর
রাঘব বোয়াল
সুগত মারজিৎ-এর ‘ঋণ দেওয়ার সুপারিশ করলে দায়ও নিতে হবে’ (১০-৩) নিবন্ধ প্রসঙ্গে দু’একটি কথা বলতে চাই। লেখক ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণ আদায়ের এবং তছরুপ বন্ধ করার যে দাওয়াইয়ের কথা বলেছেন, সে-সব তো ব্যাঙ্কের দৈনন্দিন কার্যকলাপের অঙ্গীভূত। ঋণগ্রহীতা যে সম্পদ বন্ধক রেখে ঋণ নিচ্ছেন, তার মূল্যায়ন, নিরীক্ষণ, পরীক্ষণ সবই চলে নিয়ম মেনে। কিন্তু তা কোন শ্রেণির ঋণগ্রহীতার ক্ষেত্রে— সেটাই বিচার্য বিষয়। যাঁরা ক্ষুদ্রঋণ, কৃষিঋণ বা স্বল্পমেয়াদি রিটেল লোন নিচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই সব ব্যবস্থা সর্বৈব কার্যকর করা হয়। কিন্তু যাঁরা রাঘব-বোয়াল তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কতটা পালিত হয়, বা হলেও কোন-কোন দিক দেখেও দেখা হয় না, সেটাই জানার বিষয়।
অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বর্তমানে ব্যাঙ্কে অনাদায়ী ঋণ আদায়ের বা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার যে আইন আছে, তা দিয়ে এই বিপুল পরিমাণ এনপিএ (নন পারফর্মিং অ্যাসেট)-এর মোকাবিলা করা, বা যে রাঘব-বোয়ালদের জন্য ব্যাঙ্কগুলোতে এই এনপিএ-র বোঝা, তাদের কেশাগ্র স্পর্শ সম্ভব নয়।
আছে SARFAESI আইন (সিকিয়োরিটাইজেশন অ্যান্ড রিকনস্ট্রাকশন অব ফিনানশিয়াল অ্যাসেটস অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট অব সিকিয়োরিটিজ ইন্টারেস্ট)। সে এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া— ১) যদি কোনও ঋণগ্রহীতা ৬০ দিনের মধ্যে বকেয়া সুদ বা আসলের কিস্তি জমা দিতে না পারেন, তবে তাঁকে ১৩(২) ধারায় নোটিস পাঠানো হবে। ২) তার পর আরও ৯০ দিন পর তাঁর সম্পত্তির প্রতীকী দখল নেওয়া হবে ১৩(৪) ধারা অনুযায়ী। ৩) তার পর অনেক চিঠি-চাপাটি দিয়ে পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ে তাঁর সম্পত্তির দখল নেওয়া হবে। ৪) তার পর সেই সম্পত্তির নির্ধারিত মূল্যমান (রিজার্ভ প্রাইস) নিরূপণ করা হবে। ৫) তার পর নিলামের জন্য খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। ৬) তার পর আসবে নিলামের দিন।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, রিজার্ভ প্রাইস না পাওয়ার জন্য নিলাম ব্যর্থ হয়েছে। আবার যদি-বা নিলাম সম্পূর্ণ হল, অনেক সময় নানা জ্ঞাত এবং অজ্ঞাত কারণে সম্পত্তির ‘সাকসেসফুল বিডার’কে সম্পত্তি হস্তান্তরিত করা যায় না। আবার শুরু হয় আদালতে দৌড়ঝাঁপ। এ ছাড়াও আছে ডিআরটি, জাতীয় লোক-আদালত— যেগুলো প্রায়শই ব্যাঙ্ককর্মী ও অফিসারদের ক্ষেত্রে পণ্ডশ্রমে পরিণত হয়। তবে এটাও ঠিক, এই সমস্ত ব্যবস্থা দিয়ে যদি-বা চুনোপুঁটি দু’একটা ধরা যায়, তিমি-হাঙর কিন্তু অধরাই।
বর্তমানে প্রায় বছর দু’এক হল আর একটি আইন বলবৎ করা হল, ইনসলভেন্সি অ্যান্ড ব্যাঙ্করাপ্সি কোড। যে আইনে বলা হয়েছে, ঋণগ্রহীতার এনপিএ-র অর্ধ শতাংশ ব্যাঙ্কগুলোর নিজস্ব লভ্যাংশ থেকে প্রভিশন করে, বাকি অর্ধাংশটা কীভাবে আদায় করা যায় সেটা এনসিএলটি (ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইবুনাল) দেখবে। অর্থাৎ এ-সবই ফাঁকফোকর সংবলিত বিবিধ আইন। আমরা মনে করি, যদি ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ফৌজদারি দণ্ডবিধির আওতায় আনা যায় এবং প্রতি ছ’মাস অন্তর এই অসাধুদের নাম সরকারিভাবে প্রকাশ করা যায়, তবে কিছু সত্যিকারের ব্যবস্থা হলেও হতে পারে। কারণ টাকাটা কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের, যা তাঁরা ভবিষ্যতের জন্য গচ্ছিত রেখেছেন ব্যাঙ্কের কাছে।
একটা জিনিস স্পষ্ট যে লক্ষ-কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা ব্যাঙ্কের করণিক, পিয়ন, সাফাই কর্মচারী, এমনকী প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় শ্রেণির শাখা-প্রবন্ধকেরও নেই। এই বৃহৎ ঋণ অনুমোদন পায় ব্যাঙ্কগুলির বোর্ড-এ। সেখানে কে কার ‘তুতোভাই’ এটাই এখন প্রকাশিত হওয়া দরকার।
দুর্গাশ্রী বসু রায় হাওড়া
ভ্রম সংশোধন
‘ম্যান ইউ ছন্দে, শেষ মুহূর্তে জয় লিভারপুলের’ (১-৪, পৃ ১৬) প্রতিবেদনে মহম্মদ সালাহ-কে মিশরের বদলে মরক্কোর ফুটবলার লেখা হয়েছিল। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy