Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: তাঁর স্মৃতিরক্ষা

বর্তমানে সামান্য দু’পাঁচ টাকা এন্ট্রি ফি নিয়ে হুগলি জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীনে এটিকে পার্ক হিসেবেই ব্যবহার করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

রাজা রামমোহন রায়ের ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে হুগলি জেলার, খানাকুল থানার অন্তর্গত রঘুনাথপুরের শ্মশানভূমিতে তৈরি বসতবাড়িটি আজ চূড়ান্ত অবহেলিত। এই দেড়শো-দু’শো বছর ধরে প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে ভগ্ন ধ্বংসাবশেষের শেষ পর্যায়ে যে ছাদহীন ইট বেরিয়ে থাকা শ্যাওলা ধরা দেওয়াল এবং ‘ওঁ তৎসৎ’ লেখা সাধনবেদিটি এখনও টিকে আছে, সেটিকে যদি সঠিক ভাবে সংরক্ষণ না করা হয়, তবে আর কত দিন এটি টিকে থাকবে? এখানেই নির্মিত আছে সতীদাহ বেদি। এই বিষয়ে কিংবদন্তি হল— রামমোহনের দাদা জগমোহনের মৃত্যুর পর তাঁর দ্বিতীয়া স্ত্রী অলকমঞ্জরীকে এইখানে সহমরণে বাধ্য করা হয় এবং সেই সংবাদ পেয়ে রামমোহন এখানে এসে সতীদাহ প্রথা নিবারণের প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেন। এই ঐতিহাসিক স্থানটি কেন্দ্রীয় সরকার অথবা রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করে কোনও হেরিটেজ বিল্ডিংয়ের মর্যাদা দিয়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবে না কেন?

বর্তমানে সামান্য দু’পাঁচ টাকা এন্ট্রি ফি নিয়ে হুগলি জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীনে এটিকে পার্ক হিসেবেই ব্যবহার করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, এখানে বসে অবাধে নিয়মিত মদ্যপান ও ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনাও ঘটে থাকে।

দুঃখের বিষয়, রামমোহনের স্মৃতিবিজড়িত এই খানাকুল থানায় নেই রামমোহনের কোনও পূর্ণাবয়ব মূর্তি। খানাকুল এলাকাবাসীদের বহু দিনের দাবি— স্থাপিত হোক রামমোহনের পূর্ণ-অবয়ব ব্রোঞ্জের মূর্তি। রামমোহনের জন্মস্থানটিকে সংরক্ষণ করে জায়গাটিকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলুক রাজ্য সরকার।

সৈকত রায় সেকেন্দারপুর, খানাকুল, হুগলি

বৈদিক শিক্ষা

‘‘বৈদিক শিক্ষা’র পক্ষে সওয়াল মন্ত্রীর” (২৯-৪) শীর্ষক সংবাদ প্রসঙ্গে এই চিঠি। উজ্জয়িনীতে এক অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর এবং প্রতিমন্ত্রী সত্যপাল সিংহ বলেন, ‘আধুনিক শিক্ষা’ অনেক ক্ষেত্রেই পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। কেবল ‘বৈদিক শিক্ষা’ই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রকৃত দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। বর্তমান পাঠ্যক্রমের কয়েকটি অংশ বাদ দিয়ে প্রকৃত ‘মূল্যবোধ’ শেখানোর ব্যবস্থা করতে চান তাঁরা। এ কথা মাথায় রেখে নয়া শিক্ষানীতি তৈরি হচ্ছে।

আমরা জানি, আমাদের দেশে নবজাগরণের সূচনালগ্নে মধ্যযুগীয় ধর্মীয় অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রথম জ্ঞানের আলো নিয়ে এসেছিলেন রাজা রামমোহন রায়। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘সংস্কৃত শিক্ষাপদ্ধতি দেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। এই দেশে ইতিমধ্যেই দু’হাজার বছর ধরে এই শিক্ষা চলে আসছে। ব্রিটিশ সরকার হিন্দু পণ্ডিতদের দিয়ে পুনরায় তাই চালু করছে। যার ফলে মিথ্যা-অহঙ্কার জন্মাবে। অন্তঃসারশূন্য চিন্তা, যেটা স্পেকুলেটিভ মানুষেরা করেছেন, সেটাই বাড়বে। বেদান্ত শিক্ষার দ্বারা যুবকরা উন্নত নাগরিক হতে পারবে না। বেদান্ত যেটা শেখায় সেটা হচ্ছে, এই পরিদৃশ্যমান জগতের কোনও কিছুরই অস্তিত্ব নেই। উন্নততর ও উদার শিক্ষার জন্য প্রয়োজন অঙ্কশাস্ত্র, প্রাকৃতিক দর্শন, কেমিস্ট্রি, অ্যানাটমি ও অন্যান্য কার্যকর বিজ্ঞান শিক্ষা’’ (লেটার টু লর্ড আমহার্স্ট— রামমোহন রায় রচনাবলি)।

বিদ্যাসাগর মহাশয় আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে বলছেন, ‘‘কতকগুলি কারণে সংস্কৃত কলেজে বেদান্ত-সাংখ্য-অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ আমাদের পড়াতেই হচ্ছে। কিন্তু সাংখ্য-বেদান্ত যে ভ্রান্ত দর্শন, তা আর বিবাদের বিষয় নয়। ...ফলে ইউরোপ থেকে এমন দর্শন পড়ানো উচিত, যে দর্শন পড়লে আমাদের দেশের যুবকরা বুঝবে যে বেদান্ত এবং সাংখ্য ভ্রান্ত দর্শন’’ (বিদ্যাসাগর রচনা সংগ্রহ)।

বিজেপি-আরএসএস নেতারা প্রচার করছেন, আধুনিক পৃথিবীর নামকরা বিজ্ঞানীরা কিছুই নতুন আবিষ্কার করেননি। সবই নাকি প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থে ছিল। ভারতে প্রাচীন কালে যে বিজ্ঞানচর্চা ছিল না, তা নয়। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় দুঃখ করে বলেছেন, প্রাচীন ভারতেও গ্রিসের মতো বিজ্ঞানচর্চা শুরু হয়েছিল। কিন্তু বেদান্তের মায়াবাদ বস্তুজগতের অস্তিত্ব অস্বীকার করায়, তার প্রভাবে এ দেশে বিজ্ঞানের অগ্রগতি থেমে গিয়েছিল। স্বয়ং বিবেকানন্দ ধর্ম ও বিজ্ঞানের নিরন্তর পারস্পরিক দ্বন্দ্ব দেখে বলেছিলেন, ‘‘ব্রহ্মাণ্ড সম্বন্ধে আধুনিক জ্যোতির্বিদ ও বিজ্ঞানীদের মতবাদ কি, তাহা আমরা জানি; আর ইহাও জানি যে, উহা প্রাচীন ধর্মতত্ত্ববাদিগণের কি রূপ ভয়ানক ক্ষতি করিয়াছে। যেমন যেমন এক-একটি নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার হইতেছে, অমনি যেন তাঁহাদের গৃহে একটি করিয়া বোমা পড়িতেছে, আর সেইজন্যই তাঁহারা সকল যুগেই এই সকল বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান বন্ধ করিয়া দিবার চেষ্টা করিয়াছেন’’ (স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, উদ্বোধন কার্যালয়, ৩য় খণ্ড)।

রবীন্দ্রনাথ ঈশ্বরবিশ্বাসী হয়েও বলেছেন, ‘‘ধর্মের মোহ মানুষকে নির্জীব করে রাখে। তার বুদ্ধিকে নিরর্থক জড় অভ্যাসের নাগপাশে অস্থিতে-মজ্জাতে নির্দিষ্ট করে ফেলে।’’ শরৎচন্দ্রের কথায়, ‘‘কোনও ধর্মগ্রন্থই অভ্রান্ত হতে পারে না। বেদও ধর্মগ্রন্থ। সুতরাং এতেও মিথ্যার অভাব নেই’’ (চরিত্রহীন)।

আরএসএসের গুরু গোলওয়ালকর তাঁর উই অর আওয়ার নেশনহুড বইতে লিখেছেন, ‘‘হিন্দুস্থানের সমস্ত অ-হিন্দু মানুষ হিন্দু ভাষা ও সংস্কৃতি গ্রহণ করবে। হিন্দুধর্মকে শ্রদ্ধা করবে ও পবিত্র বলে জ্ঞান করবে। হিন্দু জাতির গৌরবগাথা ভিন্ন অন্য কোনও ধারণাকে প্রশ্রয় দেবে না। ...না হলে সম্পূর্ণ ভাবে এই দেশে হিন্দু জাতির অধীনস্থ হয়ে, কোনও দাবি ছাড়া, কোনও সুবিধা ছাড়া, কোনও রকম পক্ষপাতমূলক ব্যবহার ছাড়া, এমনকী নাগরিকত্বের অধিকার ছাড়া তাদের এ দেশে থাকতে হবে।’’ এ দেশের কোনও স্বদেশি নেতাই এ রকম বলা তো দূরের কথা, ঘুণাক্ষরেও কি ভেবেছিলেন?

শুধু তা-ই নয়, গোলওয়ালকর ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, যে হেতু এই আন্দোলন অখণ্ড ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে মূল শত্রু গণ্য করে পরিচালিত হয়েছিল, তার ফলে এটি ভারতবাসীকে হিন্দু জাতীয়তাবাদের সদর্থক ও প্রেরণাদায়ক চিন্তা থেকে বঞ্চিত করেছিল। অর্থাৎ সমগ্র স্বাধীনতা আন্দোলনটাই প্রতিক্রিয়াশীল ছিল এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতার মধ্যে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ ছিল না, যে হেতু এটা হিন্দু জাতীয়তাভিত্তিক ছিল না। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী নেতাজি, দেশবন্ধু, তিলক, লালা লাজপত, গাঁধীজি, ক্ষুদিরাম, ভগৎ সিংহ, চন্দ্রশেখর আজাদ, সূর্য সেন প্রমুখ দেশপ্রেমিক ও যথার্থ স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন না। আরএসএস-বিজেপি কি বৈদিক শিক্ষার মধ্য দিয়ে তাদের চিন্তার ছাঁচে গড়া দেশপ্রেমিক গড়ে তুলতে চাইছে?

গৌরীশঙ্কর দাস সাঁজোয়াল, খড়গপুর

ঘরের খাবারেও

বাইরের খাবারে বিভিন্ন রকম দূষণ-বিষ নিয়ে খবর-অভিযোগ অহরহ দেখি। ঘরের খাবারও যে এমন বিষ থেকে দূরে নয়, তার একটা উদাহরণ দিই। এক ছুটির দিনে বাড়িতে প্রচুর আত্মীয়স্বজন, বিশেষ এক খাবার বানানো হবে বলে আদেশ হল— দোকান থেকে একটু রং আনতে হবে। বাজারের সবচেয়ে বড় মুদিখানায় গিয়ে চাইলাম। দোকানি জিজ্ঞেস করলেন, কোনটা দেব, বেশি দামিটা না কম দামিটা? বললাম, কম। জিনিসটা হাতে পেয়ে প্যাকেটের গায়ের লেখাগুলো পড়ে আমার চক্ষু তো চড়কগাছ— ‘‘ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইউজ অনলি’’! তার পর দেখি, দামিটার প্যাকেটে লেখা— ফুড গ্রেড কালার। ব্যাপারটা দোকানদারের গোচরে আনতে তিনি বললেন, কিন্তু খরিদ্দাররা তো দু’রকমটাই নেয়, আর এখানকার সমস্ত খাবারের দোকানদাররা তো ওই কম দামিটাই কেনেন!

কল্লোল সরকার রথতলা (পশ্চিম), উত্তর ২৪ পরগনা

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

অন্য বিষয়গুলি:

Ram Mohan Roy Government tourist center
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE