আমাদের প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম বলেছিলেন, আনএমপ্লয়মেন্ট নয়, আনএমপ্লয়েবিলিটিই হল ভারতের বেকার সমস্যার মূল কারণ। অসাধারণ পর্যবেক্ষণ। তাজুদ্দিন আহমেদও বোধ হয় সেই দিকেই ইঙ্গিত করেছেন (‘গ্ল্যামার বেশি, ঝক্কিও বেশ’, প্রস্তুতি, ২৩-১০)। তাঁরও মতে, ইংরেজি নিয়ে উচ্চশিক্ষার ছাড়পত্র পেতে অন্য রকম যোগ্যতা প্রয়োজন। সেই ‘অন্য রকম যোগ্যতা’ আসলে কী, তা অনুধাবন করার ক্ষমতাই অনেকের নেই।
উচ্চ মাধ্যমিক বা সমতুল্য পরীক্ষায় দু’জন পরীক্ষার্থী শতকরা ৯০ নম্বর পেলেও, তারা ইংরেজিতে সমান দক্ষ নয়। কেন নয়? এই প্রশ্নের উত্তরের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে মেধা, মনন, সৃষ্টিশীলতা ইত্যাদি অনেক কথা। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যকে ভালবেসে, দক্ষ তত্ত্বাবধানে নিবিড় ও নিরলস অনুশীলনের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষায় এগিয়ে যাওয়া বর্তমান আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ও ঝুঁকিপূর্ণ। বাস্তবের রুক্ষ ভূমিতে দাঁড়িয়ে সেটা সম্ভব হয় না বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিষয়ে মুখ থুবড়ে পড়ার পর, অনেকেই স্নাতক স্তরে ইংরেজি নিয়ে পড়ার ধৃষ্টতা দেখাতে যায়। এদের একমাত্র পুঁজি উচ্চ মাধ্যমিকে ইংরেজিতে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো একটা ‘ভাল’ নম্বর।
বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিকে লেখা বিষয়ে বরাদ্দ আছে মাত্র ১০ নম্বর। সৃষ্টিশীল অথবা বিশ্লেষণধর্মী লেখালিখির জায়গা সেখানে নেই। গদ্য-পদ্য-নাটকের তথাকথিত বড় প্রশ্নগুলিকেও ভেঙে ভেঙে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যেখানে পুরো পেপারটাই হয়ে গিয়েছে স্মৃতিশক্তির পরীক্ষা। সাবলীল ভাবে ইংরেজি লেখার ক্ষমতা, অনুবাদ শিক্ষা, ইংরেজি শব্দভাণ্ডারের জ্ঞান— কোনও কিছুরই মূল্যায়ন হয় না। এমনকি বোধপরীক্ষণের প্রশ্নের মানও মাধ্যমিক স্তরের তুলনায় নিম্নমানের বললেও কম বলা হয়।
এ রকম মানের একটা প্রশ্নপত্রে যত নম্বরই কেউ পাক না কেন, পরবর্তী স্তরে বা সর্বভারতীয় স্তরে লড়তে গেলে তাকে অন্য রকমের যোগ্যতার অনুশীলন যে করতেই হবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ আছে কি?
পার্থ প্রতিম চৌধুরী
কোন্নগর, হুগলি
আসলে অসম্মান
‘কে বড়, ছবি নাকি চলচ্চিত্র?’ (১৫-১১) পড়লাম। অনীক দত্ত যে কথাটা প্রকাশ্যে বলেছেন এটা বহু জনের মনের কথা। এমনকি যাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এবং ওঁকে পছন্দ করেন, তাঁদেরও। প্রকাশ্যে নিজেরাও যেমন বলতে পারছেন না, তেমনই অনীকবাবুর প্রতিবাদকে সমর্থন করাও সম্ভব হচ্ছে না। নিজেদের অপছন্দের কথা স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলাও তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়।
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব পাড়ার কোনও নেতার জলসা নয়, পার্টির নিজস্ব সভাও নয়। এটি হয় সম্পূর্ণই সরকারি উদ্যোগে ও অর্থে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তেমন অনুষ্ঠানের প্রধান প্রেক্ষাগৃহ মুখ্যমন্ত্রীর মুখে ঢেকে থাকতে পারে না। এই চলচ্চিত্র উৎসবের স্রষ্টাও তিনি নন। শুরু করেছেন পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তাঁর নিজস্ব প্রচেষ্টায়। কোথাও তো তাঁর ছবি বা কাট-আউট কেউ কোনও দিন দেখেনি!
এই যে বিভিন্ন জায়গার সিনেমাপ্রেমী মানুষজন আসছেন, বিভিন্ন দেশেরও, তাঁরা এ সব মেনে নিতে পারেন? চলচ্চিত্র উৎসব চলচ্চিত্রের দিকপালদের ছবিতে ভরে থাকবে— সেটাই তো স্বাভাবিক চাহিদা ও সাংস্কৃতিক পরিচ্ছন্নতা। বিভিন্ন দেশে এ ধরনের উৎসবে তা-ই হয়ে থাকে। অথচ তাঁরা এসে দেখছেন, মূল প্রবেশদ্বারের সামনেটা কেবল এক জন রাজনৈতিক ব্যক্তির মুখে ভরে আছে। যাঁর সঙ্গে কিনা চলচ্চিত্র শিল্পের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই! এতে তো মুখ্যমন্ত্রীর অসম্মানই হচ্ছে।
শুধু কি চলচ্চিত্র উৎসব! প্রায় প্রতিটি সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ঝোলানো এখন যেন বাধ্যতামূলক। সঙ্গে লেখা থাকে তাঁর ‘অনুপ্রেরণায়’! এটাও কি খুব শোভনীয়? অধিকাংশ সরকারি অনুষ্ঠান, যেমন, ‘নাট্য উৎসব’ ‘চারুকলা উৎসব’, ‘সঙ্গীত মেলা’ থেকে বিভিন্ন মেলা, পূর্বতন সরকারের সময় শুরু হয়েছে। তা হলে কী করে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর ‘অনুপ্রেরণায়’ হচ্ছে বলা যায়? এ সব ব্যাপার নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করেন এবং সামান্য বোধসম্পন্ন মানুষ অসন্তুষ্ট হন। পশ্চিমবঙ্গে আগে কেউ কখনও এ সংস্কৃতি দেখেনি।
প্রদোষ পাল
কলকাতা–৬০
গণ উৎসব
নন্দন চত্বরে অধিক স্বচ্ছন্দ বোধ করা, মায়াকভস্কি পড়া বুদ্ধবাবু কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবকে নিখাদ সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন। মা-মাটি-মানুষ (বুদ্ধবাবুর ভাষায় ‘‘যাত্রাপালা নাকি!’’) সরকারের সুপ্রিমো প্রথমেই চলচ্চিত্র উৎসবকে ‘গণ’-তে পরিণত করলেন। অমিতাভ-শাহরুখ এবং টলিউডের নক্ষত্র সমাবেশ ঘটিয়ে বাজার মাত করে দিলেন। তাঁর দর্শক তারকা-বুভুক্ষু, সিনেমাপ্রেম সেখানে গৌণ। করতালি ও সিটি বাজিয়ে, তারকা চাক্ষুষ করে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মৌতাত উপভোগ করেন, তাঁরা পরের বছরের জন্য অপেক্ষা করেন। গোদার, ফেলিনি, বার্গম্যান, পোলানস্কি-র নাম ও শিল্পকর্ম তাঁদের অনেকের অজানা থেকে যায়। আগে তাও আনসেন্সর্ড ছবি দেখার জন্য অনেকে হলে ভিড় করত, কিন্তু বর্তমানে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতায় সেই শ্রেণির দর্শকও হারিয়ে গিয়েছে।
চলচ্চিত্র উৎসবকে নির্দিষ্ট গণ্ডি থেকে আর পাঁচটা মেলামোচ্ছবের মতো হাটের মাঝখানে আনার কৃতিত্ব মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি প্রচার ও বিপণনে যথেষ্ট দড়। তাই সব কিছুই তাঁর ছবি ও অনুপ্রেরণায় গড়ে ওঠে, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের আঙিনাও তাঁর ছবিতে সেজে ওঠা স্বাভাবিক।
দক্ষিণপন্থী দলে ব্যক্তিপূজার বাড়াবাড়ি লক্ষ করা যায়। দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে বড় বড় কাট-আউট দিয়ে রাজপথ শোভিত হয়। শোনা যায়, জয়ললিতার হেলিকপ্টার উড়ে গেলে তাঁর অনুগামীরা কপ্টারের উদ্দেশে প্রণাম ছুড়ে দিতেন। ভাগ্যিস নোট ছাপানোর অধিকার কোনও অঙ্গরাজ্যের হাতে নেই। তা হলে কবেই গাঁধী-ছবি বিদায় নিত!
রাজশেখর দাস
কলকাতা-১২২
লক্ষ্মী-সরস্বতী
‘‘মঞ্চে মহিলা শিল্পী, ‘অভব্যতা’ পুলিশের জলসায়’’ (১৩-১১) প্রতিবেদন পড়তে পড়তে চিরন্তন লক্ষ্মী-সরস্বতী দ্বন্দ্বের কথাই মনে পড়ে গেল। শিল্পসাধনা বনাম সাধনার মাধ্যম দিয়ে রোজগার— এই চিরকালীন দ্বন্দ্বের মধ্যে বরাবরই সাধনার জায়গাতেই ‘কম্প্রোমাইজ়’ হয়ে এসেছে; এর বিপরীত উদাহরণ হাতেগোনা। যুগে যুগে বহু সাধক তাঁদের শিল্পকে ‘বেচতে’ চাননি, ভারতীয় শাশ্বত ভাবধারায় তাঁদের স্থান অতি উচ্চ হলেও ইতিহাস তাঁদের স্মরণে রাখেনি। তাঁদের শিল্পসাধনা, সৃষ্টির স্রোত বয়ে গিয়েছে মানুষের অলক্ষ্যে।
সঙ্গীতশিক্ষা যে কত বড় সাধনা, তা আলাদা করে বলার দরকার নেই। কিন্তু যে কোনও পরিবেশে যে কোনও অনুষ্ঠানে যে কোনও শ্রোতা তা বুঝবেন, সেই দাবি জানানোও মূঢ়তা বলে মনে হয়।
সব স্তরের মানুষের সামনে নিজের সাধনাকে হাজির করতে গেলে তার চ্যুতি ঘটবেই, সেটাই তো স্বাভাবিক; হয় তাকে মেনে নিতে হবে, নয়তো স্তরের সংখ্যার বিষয়ে খুঁতখুঁতে হতে হবে— তাতে আবার আর্থিক দিকে পড়ে টান।
আমাদের বুঝে নিতে হবে, আমরা নাক সিঁটকোচ্ছি কেন? মানুষ চটুল গান শুনতে চেয়ে কটূক্তি করল বলে, না কি সেই মানুষগুলো পেশায় পুলিশ, তাই?
প্রিয়ম মজুমদার
শ্রীরামপুর, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy