সম্পাদকীয় ‘উদো ও বুধো’ (৭-১০) পড়ে জানতে পারলাম, গ্রেট নিকোবরে বিমানবন্দর, পাওয়ার প্লান্ট ও টাউনশিপ-সহ বিরাট এক প্রকল্পের বাস্তবায়নে দু’বছর আগেই সায় দিয়েছিল কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক। দেখা যায়, যে জায়গায় এ সব হবে তার ৮০% জমিই ঘন অরণ্যে ঢাকা, কাটতে হবে প্রায় ১০ লক্ষ গাছ। এ ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী একটি ‘নন-ফরেস্ট ল্যান্ড’-এ ক্ষতিপূরণ হিসাবে অরণ্য সৃষ্টি করা বাধ্যতামূলক। তারই জায়গা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে হরিয়ানার পাঁচটি জেলাকে, এবং সরকার সেই লক্ষ্যে জমি চিহ্নিত করার কাজও শুরু করেছে। এই সংবাদ এক জন সাধারণ নাগরিক হিসাবে উদ্বিগ্ন করেছে।
দু’টি স্থানের ভৌগোলিক দূরত্ব কেবল ২৪০০ কিমিই নয়, দু’টি স্থানের জলবায়ুগত পার্থক্যও আছে। গ্রেট নিকোবরে যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত প্রায় ৩৮০০ মিলিমিটার, সেখানে হরিয়ানাতে প্রায় ৫৯২ মিলিমিটার। ফলে দু’টি অঞ্চলের বৃক্ষের চরিত্রগত পার্থক্যও থাকবে। কিছু দুষ্প্রাপ্য বৃক্ষ, যা ওই অঞ্চলেই দেখা যায়, তা হারিয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। বৃক্ষ নিধন মানে ওই সকল বৃক্ষের উপর থাকা অসংখ্য প্রাণীকে নিরাশ্রয় করা, যা পরিবেশের বাস্তুতন্ত্রের উপর বিপুল প্রভাব ফেলবে। আর একটা কথা মনে রাখা বোধ হয় দরকার যে, রোপণ করা চারাগাছ কখনও পরিণত বৃক্ষের সমতুল্য হতে পারে না।
এ বিষয়টি নিয়ে পরিবেশবিদ পঙ্কজ শেখসারিয়া একটি বই লিখেছেন। ১২৪ পৃষ্ঠার গ্রন্থটির নাম দ্য গ্রেট নিকোবর বিট্রেয়াল। একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি পত্রিকার সাক্ষাৎকারে লেখক জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের ফলে সবচেয়ে অসুবিধায় পড়বেন এখানে বসবাসকারী নিকোবরি ও শম্পেন জনজাতি গোষ্ঠীর মানুষ। এঁদের সংখ্যা এমনিতেই ক্রমহ্রাসমান, এখন বিপুল সংখ্যক বাইরের মানুষ এখানে এলে তাঁদের বিবিধ রোগ এই জনজাতি গোষ্ঠীর মানুষদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে, যা প্রতিরোধ করার শারীরিক সক্ষমতা এই জনজাতি শ্রেণির মানুষের নেই। ধরা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ এই দ্বীপে তিন লক্ষ বাইরের মানুষ বসবাস করবেন এবং তখন জনজাতি গোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে তাঁদের অনুপাত হবে ১:১০০০। প্রভাব পড়বে এখানকার আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও জীবিকার উপরে। লেখক ও সংগ্রাহক পঙ্কজ শেখসারিয়ার মতে, এই প্রকল্পের মূল অংশটাই হল বাণিজ্যিক। বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হবে মূলত টাউনশিপ বানাতে এবং পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে। অথচ, এই দ্বীপটির অবস্থান সম্বন্ধে বলা হয়— দ্বীপটি অবস্থিত ‘অগ্নিবলয়’ অর্থাৎ ভূত্বকের ক্ষেত্রে এই পৃথিবীর সবচেয়ে সক্রিয় অঞ্চলের উপর। এখানে প্রতি সপ্তাহেই তাই ভূমিকম্প হয়। সেই কারণে এই ধরনের বিশাল প্রকল্প দ্বীপ ও দ্বীপের বসবাসকারী মানুষের অস্তিত্ব সঙ্কটের কারণ হয়ে উঠতে পারে। তবে আশার কথা, কেন্দ্রীয় জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রক এই প্রকল্প বিষয়ে পুনরায় বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে এবং প্রকল্প শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন।
প্রশান্ত দাস, খলিসানি, হুগলি
ই-বর্জ্যের বিপদ
সারা বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা তথা এই রাজ্য ও দেশে উত্তরোত্তর বাড়ছে ইলেকট্রনিক বর্জ্য। বর্তমানে প্রত্যেক বছর বিপুল পরিমাণ ই-বর্জ্য উৎপাদিত হয় বিশ্ব জুড়ে। আশ্চর্য হলেও সত্যি, গত ২০২০ সালের অলিম্পিকের স্বর্ণ রৌপ্য ও ব্রোঞ্জের পদকগুলি তৈরি হয়েছিল এই সমস্ত ই-বর্জ্যে থাকা ধাতু থেকে।
গৃহস্থালির পুরনো টেপ, টিভি, ফ্রিজ, ব্যাটারি, মোবাইল থেকে ল্যাপটপ— যে কোনও সমস্যা হলেই এখন এক শ্রেণির মানুষ মেরামতির বদলে নতুন কেনায় বেশি আগ্রহী। দামি জিনিস হলে সে ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলি পুরনো জিনিসের বদলে কিছু ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা রাখে। কিন্তু হেডফোন, স্মার্টওয়াচ কিংবা কি-প্যাডওয়ালা মোবাইল, চার্জার-এর মতো ইলেকট্রনিক সামগ্রীগুলির ক্ষেত্রে এমন কোনও সুযোগ প্রায় না থাকায় তা মানুষ ফেলে দিচ্ছে আবর্জনার স্তূপে কিংবা ভাঙাচোরা জিনিস ব্যবসায়ীর কাছে। পরবর্তী কালে আবর্জনার স্তূপে ফেলা এই সব ইলেকট্রনিক বর্জ্যে থাকা বেশ কিছু পদার্থ দূষণ ঘটাচ্ছে মাটির তথা পরিবেশের। রয়েছে সার্বিক সচেতনতার অভাব। প্রশাসনিক তরফে নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে এই ই-বর্জ্য গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনার কেন্দ্র। ফলে সচেতন মানুষও খানিক বাধ্য হয়েই তা অবৈজ্ঞানিক ভাবে চার পাশে ফেলে দূষণ ঘটাচ্ছে। বর্তমানে ইলেকট্রনিক গাড়ি-সহ টোটো, বাইক ইত্যাদির চাহিদা বাড়ছে। ফলে ভবিষ্যতে ব্যাটারি ই-বর্জ্যের তালিকায় গোড়ার দিকে উঠে আসবে, এমনটা প্রায় নিশ্চিত। পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে ব্যাটারিতে থাকা লিথিয়াম থেকে।
পূর্ব বর্ধমান জেলায় বেসরকারি উদ্যোগে একটি ই-বর্জ্য গ্রহণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। কিন্তু সকল পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলিতে যদি অন্তত একটি করেও এই ই-বর্জ্য গ্রহণ ও প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র গড়ে তোলা যায়, তা হলে আগামী দিনে এই সমস্যার খানিকটা সমাধান সম্ভব। অন্যথায় এটি বিশ্ব উষ্ণায়ন ও পরিবেশ দূষণের অন্যতম অধ্যায় হতে চলেছে। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সন্দীপন সরকার,পাল্লারোড, পূর্ব বর্ধমান
সীমাহীন স্পর্ধা
বনগাঁ নহাটার এক মহাবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রে সম্প্রতি আমার স্ত্রী’র স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষ হল। পরীক্ষা শুরুর প্রথম দিন পাশে বসা পরীক্ষার্থীকে অবাধে নকল করতে দেখে উপস্থিত পরিদর্শককে আমার স্ত্রী অভিযোগ জানায়। পরীক্ষা পর্বের চতুর্থ তথা শেষ দিনের অন্তিম লগ্নে ওই পরীক্ষার্থীর দলভুক্ত অন্য এক পরীক্ষার্থী আমার স্ত্রী’কে বলে, “হল থেকে বেরোন, তার পর আপনার ব্যবস্থা হচ্ছে!” যদিও আমার স্ত্রী’র প্রতিবাদের তীব্রতায় তারা এক প্রকার পালাতে বাধ্য হয়।
ঠিক সেই দিন, অর্থাৎ ২৯ সেপ্টেম্বর যখন আমি বাড়ি থেকে বহু দূরে স্ত্রীর পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষমাণ, তখন ছেলের ফোনে জানতে পারি, স্থানীয় দুর্গাপুজো কমিটির জনৈক (সে আমার সমবয়সি, সহপাঠী, প্রতিবেশী) পুজোর চাঁদা নিতে এসেছে। মাসখানেক আগে আমার পিতৃবিয়োগ হওয়ার কারণে এ বার আমার বাড়ির দুর্গাপুজোও স্থগিত। রীতি অনুযায়ী এই ‘অশৌচ পর্ব’-এ পুজোর চাঁদা চাওয়া কতটা মানবিক, বোধগম্য হল না।
এই ঘটনার দিন কয়েক আগে, পিতার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের দিন রাতের বেলায় রাস্তায় কলহরত কিছু কুকুরকে বিরত করার জন্য সক্রিয় ছিলাম। ঘণ্টাখানেক পর এক রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থক সপরিবারে আমার কৈফিয়ত তলব করতে আসেন। কুকুরগুলোর উদ্দেশে আমার বলা কথা কর্ণগোচর হওয়ার কারণে নাকি ওই পথ দিয়ে চলা তাঁর স্ত্রীর ‘ভাবাবেগ’ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে! তিনি আমাকে ‘সম্মান’ করেন বলে কিছু বললেন না! আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে...!
ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্ন বলে অগ্রাহ্য করা যেতেই পারে। কিন্তু সমাজের প্রতি ক্ষেত্রে সীমাহীন ঔদ্ধত্য, অমানবিকতা, নীতিহীনতা যে ভাবে মাথা চাড়া দিচ্ছে, তাতে ‘অচ্ছে দিন’-এর কল্পনার আকাশেও ক্রমেই সিঁদুরে মেঘ জমছে।
অরিন্দম দাস,হরিপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
অর্ধেক ভাড়া
সম্প্রতি এনজেপি থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত আরএসি টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করার ‘সৌভাগ্য’ হল। অন্যের সঙ্গে অর্ধেক বার্থ ভাগাভাগি করে সারা রাত না ঘুমিয়ে বসে এলাম। কিন্তু ভাড়া দিতে হল একই। প্রস্তাব, হয় আরএসি নামক প্রহসনটি বন্ধ হোক, নয়তো অর্ধেক বার্থ ভাগাভাগির জন্য টিকিটের অর্ধেক দাম ফেরত দেওয়া হোক।
সায়নী মজুমদার, কলকাতা-৫৭
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy