ছবি : সংগ্রহ।
মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনা, একটা তরতাজা প্রাণের আচম্বিত অন্ত, এক জনপ্রিয় অভিনেতার দুর্ঘটনাগ্রস্ত হওয়া, সেলেবদের ছোটাছুটি— ঘটনার আকস্মিকতায় হতচকিত হয়ে গিয়েছিলাম হয়তো আমরা অনেকেই। প্রাথমিক কর্তব্যগুলো সম্ভবত পালন করা হয়ে ওঠেনি অনেকেরই। সম্বিৎ ফিরতে একটু সময় লাগল। তার পর জরুরি প্রশ্নগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হল। কিন্তু সেখানেও ভারসাম্যের অভাব, আবেগের আধিক্য। ভাগ হয়ে গেলাম আমরা বিভিন্ন শিবিরে। প্রশ্ন তুলতে শুরু করলাম— কিন্তু এক দল বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের হয়ে, এক দল সোনিকা সিংহ চৌহানের হয়ে। আর কেউ কেউ আবার গোটা সেলেব-সমাজের দিকেই কটূ-কাটব্য ছুড়তে শুরু করলাম।
যে ঘটনা ঘটে গিয়েছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক! সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত যে দু’জন, তাঁদের এক জনকে আর ফিরে পাওয়ার কোনও উপায় নেই, অন্য জনের দ্রুত আরোগ্যই কাম্য। কিন্তু কোন রন্ধ্রপথে দুর্ভাগ্য এ ভাবে হানা দিল, তা সুনির্দিষ্ট ভাবে জানাটাও জরুরি। সত্যের শিকড়ে পৌঁছনো জরুরি। তার জন্য দৃষ্টিপথের সামনে ঝুলতে থাকা আবেগের পর্দাগুলো খসিয়ে দেওয়া সর্বাগ্রে জরুরি।
সত্যে পৌঁছনোর পথে বাধা কিন্তু শুধুমাত্র আবেগ নয়। পুলিশ-প্রশাসনের তরফে অপরিমেয় গাফিলতি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সেই গাফিলতির জেরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূত্র নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের রক্তের যে নমুনা সংগৃহীত হয়েছিল, দুর্ঘটনার ন’দিন পর তা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হল। দুর্ঘটনার সময় ঠিক কী অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন বিক্রম, আদৌ কি আর তা আঁচ করা সম্ভব ন’দিন আগে সংগৃহীত রক্তের নমুনা থেকে? বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান।
কেন এই গাফিলতি? অপদার্থতা বা অকর্মণ্যতার অভিযোগ তো উঠছেই। উঠে আসছে প্রভাবশালীদের সক্রিয় হওয়ার তত্ত্বও। এই তত্ত্বে যদি সারবত্তা থাকে, তা হলে সে কিন্তু আরও দুর্ভাগ্যজনক! যখনই কোনও অপরাধ নাড়িয়ে দেবে সমাজকে, যখনই কোনও প্রভাবশালীর নাম জড়াবে সে অপরাধে, তখনই আরও অনেক প্রভাব-পাল্টা প্রভাব ছায়া ফেলবে সত্যের উপর, ঘোলাটে করে তুলবে পরিস্থিতিটা— এমনটা কিন্তু নিতান্তই অনভিপ্রেত।
বিক্রম চট্টোপাধ্যায় অপরাধী না নির্দোষ, তা বিচারের অধিকার শুধুমাত্র আদালতের। এ নিয়ে অন্য কোনও পক্ষের আগাম মতামত বা মন্তব্য কাঙ্খিত নয়। সত্যের উন্মোচনের জন্য যে সব শর্ত রয়েছে, সে সব পালিত হওয়াই এখন সবচেয়ে জরুরি। ঠিক কী ঘটেছিল সোনিকা এবং বিক্রমের সঙ্গে, তার বিশদ বিবরণ উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ-সহ আদালতে পৌঁছনো জরুরি। কিন্তু সব তথ্য আদালত পর্যন্ত অবিকৃত পৌঁছবে তো? কোনও অযাচিত কু-প্রভাব সত্যকে ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করবে না তো? এই প্রশ্ন বার বার উঁকি দিতে শুরু করেছে।
একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে গিয়েছে। তার সূত্র ধরে আরও এক দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির জন্ম যেন না হয়। আইন যেন স্ব-পথেই থাকে, আইনের চোখে যেন প্রত্যেকের স্থানই সমান হয়। আপাতত প্রার্থিত এটুকুই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy