শ্যাম্পেনে চুমুক দিন, মিষ্টিটা এগিয়ে দিন। ভারত তার প্রাপ্য পেতে শুরু করেছে। কোন দেশে কত সহজে ব্যবসা করা যায়, সেই মাপকাঠিতে প্রথম একশোয় এসেছে। বিশ্বসভায় সামনের সারিতে ভারতকে পৌঁছে দেওয়ার যে স্বপ্ন সব ভারতীয় দেখেন, তা পূরণে মোদী অনেক এগিয়ে গেলেন।
এখন ভাবতে হবে— কী ভাবে ওপরের আশিটি দেশের মধ্যে নিজের স্থান করে নেওয়া যায়। কঠোর পরিশ্রম করে যে ভিতটা আমরা তৈরি করে ফেলেছি, তার পরে এটা কোনও ব্যাপারই নয়, একটু যত্ন করে কাজটা করলেই হল। কী ভাবে, বলছি।
প্রথম কথা হল, জিততে হলে অন্যদের হারাতে হবে। বিশ্বব্যাংকের তালিকায় ভারতের ওপরে যারা আছে, তাদের কয়েকটা দেশকে টেনে নামাতে হবে, তা হলেই ভারত ওপরে উঠে যাবে। তাদের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে রাখা দরকার এবং বিশ্বব্যাংকের লোকেরা পরের বার হিসেব কষতে হাজির হলে সেগুলো তাদের সামনে পেশ করা দরকার, পাশে থাকবে উন্নততর ভারতের তথ্য।
কারা আমাদের ওপরে এবং কাছাকাছি? তেমন কয়েকটি দেশ হল ডমিনিকান রিপাবলিক, ডমিনিকা, মাল্টা, পুয়ের্তো রিকো, সামোয়া, সেশেলস, সেন্ট লুসিয়া, টংগা এবং ভানুয়াতু। আগে ম্যাপ খুলে সন্ধান করা যাক এই পাণ্ডববর্জিত দেশগুলো কোথায়, এবং তারা সত্যিই আছে কি না। ম্যাপ দেখলেই টের পাওয়া যাবে, এত কাল ভারতের প্রতি কী পরিমাণ অবিচার হয়ে এসেছে। এই তথাকথিত দেশগুলি সবই হল দ্বীপভূমি, নীল সাগরের মধ্যে তাদের নিভৃত অবস্থান, স্বর্গীয় সুপবনে কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড বা দূষণকণার শেষ চিহ্নটুকু সেই বাতায় রাখতে দেয় না। দিল্লিতে এই অবসরে বাতাসে দূষণের মাত্রা ৯৯৯-এ পৌঁছক— প্রচলিত মাপযন্ত্রে ৯৯৯-এর বেশি মাপা যায় না। সত্যিই, কী অন্যায়!
বিশ্বব্যাংকে একটা বিশদ প্রতিবাদপত্র লিখতে হত, কিন্তু তার দরকার হবে না, কারণ কিছু দারুণ খবর আমাদের হাতে আছে। ভারত যত খুশি কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড এবং পছন্দ মাফিক যে কোনও দূষণকণা উপভোগ করুক, কোনও সমস্যা নেই, সহজে ব্যবসা করার যোগ্যতা মাপতে এগুলো ধরাই হয় না। ওই দ্বীপরাষ্ট্রগুলি তাদের সুবাতাস নিয়ে আনন্দে থাকুক, ভারতের বাতাসে তীব্র বিষ তার ব্যবসাযোগ্যতার তালিকায় ওপরে ওঠার পথে বাধা সৃষ্টি করবে না।
এগিয়ে যাওয়ার জন্য আর কোন কোন দেশকে বাগে আনতে হবে? ক’টা নাম বলি। বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, জাম্বিয়া, মাল্টা, কিরজিঘ রিপাবলিক, ভুটান, এল সালভাদর, জামাইকা, মঙ্গোলিয়া। আজ্ঞে, ঠিকই পড়েছেন, ভুটানের সঙ্গে লড়তে হবে! ভাগ্য ভাল, লগ্নি করার জন্য ভুটানে যেতে গেলে ভারতের ওপর দিয়েই যেতে হবে। আমরা কানেক্টিং ফ্লাইটটাকে উড়তেই দেব না— দিল্লির বাতাসে যা ধোঁয়াশা, বিমান উড়বে কী ভাবে? ব্যস, আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া গেল। অন্যদের হারানোর জন্যও স্ট্র্যাটেজি পাওয়া যাবে।
একই সঙ্গে মনে করিয়ে দিতে হবে, নোটবাতিল নামক মোক্ষম চালে কী ভাবে ভারত থেকে যাবতীয় দুর্নীতি দূর হয়ে গিয়েছে, সব বিশ্বাস ফিরে এসেছে।
বিশ্বাসের কথায় মনে পড়ল, টাফ্ট্স ইউনিভার্সিটির ফ্লেচার স্কুলে আমরা মোট ৪২টা দেশের ওপর এক সমীক্ষা করেছিলাম— ডিজিটাল দুনিয়াকে কোন দেশের মানুষ কতখানি নিরাপদ বোধ করেন, আর আসল অভিজ্ঞতা কী রকম। তুলনার সুবিধার জন্য আমরা দুটো সূচক তৈরি করে নিয়েছিলাম। প্রথম সূচক তৈরি হয়েছিল সমীক্ষায় থাকা বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তরের ভিত্তিতে— ডিজিটাল জগতের পরিবেশ সম্বন্ধে ব্যবহারকারীরা কী মনে করেন? সেখানকার লেনদেন, আদানপ্রদানকে কি মানুষ বিশ্বাস করেন, মূল্য দেন? বড় টেকনোলজি সংস্থার কর্তাদের কি তাঁরা বিশ্বাস করেন? দেশের সরকার তাঁদের অনলাইন তথ্য নিরাপদে রাখবে, সেই ভরসা কতখানি? বিশ্বাস করেন, টেকনোলজি সংস্থাগুলির কাছে জমা হওয়া তথ্য তারা নৈতিক পথেই ব্যবহার করবে? সংস্থাগুলির হাতে সেই তথ্য নিরাপদে থাকবে, সেই বিশ্বাস কতটা? দ্বিতীয় সূচক তৈরি হয়েছিল অনলাইন লেনদেনের দ্রুততা এবং সুবিধা মাপার জন্য। দ্বিতীয় সূচকটিকে ডিজিটাল অভিজ্ঞতার গুণগত মানের প্রতিফলক হিসেবে দেখেছিলাম।
প্রথম সূচকে ভারত ৪২টা দেশের মধ্যে ১৩ নম্বরে ছিল। অর্থাৎ, ডিজিটাল দুনিয়ায় সাবলীল পায়ে ঘুরতে ভারতীয়দের মোটেই আপত্তি নেই। কিন্তু, দ্বিতীয় সূচকে— অর্থাৎ আসলে ডিজিটাল অভিজ্ঞতার গুণগত মান কী রকম, তার মাপে— ভারত ৪১তম। একটিমাত্র দেশকে হারাতে পেরেছে। সেই দেশটার নাম পাকিস্তান।
ইজ অব ডুয়িং বিজনেস-এর র্যাঙ্কেও পাকিস্তান ভারতের চেয়ে ৪৭ ধাপ পিছনে। জাতীয়তাবাদী আবেগে নিজেদের পিঠ চাপড়ে দেওয়াই যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টাফ্ট্স ইউনিভার্সিটির ফ্লেচার বিজনেস স্কুলে অ্যাসোসিয়েট ডিন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy