Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
byomkesh bakshi

Byomkesh Bakshi: অপরাধী কে জানা হয়ে গিয়েছে, তবু ব্যোমকেশ বাঙালির সারা জীবনের সঙ্গী

অনাগত ভবিষ্যতের বাঙালি ফোনের পর্দাতেও যাতে ব্যোমেশকেই দেখে একাত্ম হতে পারে, তার ভিতটি পাকা করে গিয়েছিলেন শরদিন্দু।

চেহারায় হয়তো গড়পড়তা বাঙালি যুবকের সঙ্গে তার তেমন ফারাক নেই।

চেহারায় হয়তো গড়পড়তা বাঙালি যুবকের সঙ্গে তার তেমন ফারাক নেই। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়
অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:৫৭
Share: Save:

চেহারায় হয়তো গড়পড়তা বাঙালি যুবকের সঙ্গে তার তেমন ফারাক নেই। কিন্তু ‘সে সকলের চাইতে আলাদা’। সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সীর পরিচয় এ ভাবেই রাখতে চেয়েছিলেন তার স্রষ্টা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। যে সময় ব্যোমকেশ বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় আবির্ভূত হয়,তখন এ ভাষার রহস্য সাহিত্যের হাঁটি-হাঁটি পা-পা দশা। পাঁচকড়ি দে-র ‘হত্যাকারী কে’-র ঘাত-প্রতিঘাত-সঙ্ঘাতময় ঝনঝনার মধ্যে কি সাহিত্যরস পেতেন বাঙালি পাঠক? হিসেব মোতাবেক ব্যোমকেশ গত শতকের দ্বিতীয় দশকে তারুণ্যে পা রেখেছে (শরদিন্দুর প্রথম ব্যোমকেশ কাহিনি প্রকাশিত হয় ১৯৩২-এ)। তার কর্মকাণ্ড বিস্তৃত হতে শুরু করেছে তিরিশের দশকে। হ্যারিসন রোডের এক মেসবাড়ির একটি স্বতন্ত্র ফ্ল্যাটে তার অবস্থান। বন্ধু অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পরিচারক পুঁটিরাম তার সঙ্গী। তত দিনে পশ্চিমী গোয়েন্দা সাহিত্য কিন্তু দেখে ফেলেছে শার্লক হোমস বা লর্ড পিটার উইমসিকে। ১৯২১-এ রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হয়েছেন এরকুল পোয়ারো। বড়লোকের কেচ্ছা আর অতিনাটকীয় প্রেক্ষাপটকে পাশ কাটিয়ে দেখা মিলছে এমন কিছু চরিত্রের, যাঁরা পাঠকের পাশে পাশেই হাঁটতে পারেন। এমন এক পরিস্থিতিতে ব্যোমকেশের আগমন যেন প্রথম ধাক্কাতেই বাঙালি রহস্যপ্রেমীদের সাবালকত্বে দাঁড় করিয়ে দিল।

ব্যোমকেশ কিন্তু হোমস-উইমসি-পোয়ারোর মতো নয়। তার কোনও উৎকট খেয়াল নেই, সে বিটকেল গোঁফ রাখে না, কোকেন খায় না, বেহালা বা অন্য বাদ্যযন্ত্র বাজায় না, বিবিধ বিষয়ে তার পাণ্ডিত্যের পরিচয়ও পাওয়া যায় না। সেই সময়ের গড়পড়তা বাঙালি যুবকের সঙ্গে যে তার কোনও পার্থক্যই ছিল না, এ কথাও নতুন করে বলার নয়। কিন্তু কোথায় সে অনন্য, তা নিয়ে কলম ধরেছেন সুকুমার সেন, প্রতুলচন্দ্র গুপ্তের মতো দিকপালরাও। আজ, এতদিন পরেও ব্যোমকেশ বাংলা রহস্য সাহিত্যে অপ্রতিদ্বন্দ্বী, সে কথা বলে চলেছে তাকে নিয়ে নির্মিত টেলি-ধারাবাহিক, সিনেমা এবং ওয়েব সিরিজের অবিচ্ছিন্ন প্রবাহ।

বাংলার রহস্যভেদীদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ? এই প্রশ্নের জবাবে অনেকেই ব্যোমকেশ আর ফেলুদার তুলনা করতে বসেন। একটু তলিয়ে দেখলেই মালুম হয়, এই তুলনাটি অর্থহীন। এ যেন উত্তম কুমারের সঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের, অ্যালান কিচেনের চিংড়ির কাটলেটের সঙ্গে গোলবাড়ির কষা মাংসের তুলনা। এমন কাণ্ড দেখে কেউ সন্দেহ করতেই পারেন, বাঙালি একটা দ্বন্দ্ব-সিন্ড্রোমে ভোগা জাতি। তুলনা ছাড়া বাঁচতেই পারে না।

গোয়েন্দা সাহিত্যের মূলে রয়েছে একটা বিচ্ছিন্নতার বোধ। যে অপরাধী, সে অপরাধ করে সমাজের মূল স্রোত থেকে ‘বিচ্ছিন্ন’, আর যে গোয়েন্দা, সে-ও অপরাধের সন্ধানে নিজেকে সমাজের প্রাত্যহিক প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখে। পুলিশের চাকরি করা গোয়েন্দাদের ক্ষেত্রে অবশ্য বিষয়টি এ রকম নয়। তাঁদের কাজই অপরাধীকে পাকড়াও করা। কিন্তু ‘সখের গোয়েন্দা’? সে তো নিজের মুদ্রাদোষেই সক্কলের চাইতে আলাদা হয়ে বসে রয়েছে। সেই বিচ্ছিন্নতা বোঝাতেই কোনান ডয়েল শার্লক হোমসকে কোকেন ধরান, অবিবাহিত রাখেন, উদ্ভট সব স্বভাবের মধ্যে আবদ্ধ রাখেন। আগাথা ক্রিস্টি পোয়ারোকে একটি বিকট গোঁফ লাগিয়েই বুঝিয়ে দেন, সে কিন্তু একেবারেই আলাদা কিসিমের মানুষ। তেমনই ফেলুদা অবিবাহিত। তার বয়েস বাড়ে না। সে রিভলভার রাখে। এবং প্রায় প্রতিটি কাহিনিতেই সে সাধারণের থেকে খানিক উঁচুতে অবস্থান করে।

অনাগত ভবিষ্যতের বাঙালি ফোনের পর্দাতেও যাতে ব্যোমেশকেই দেখে একাত্ম হতে পারে, তার ভিতটি তার স্রষ্টা পাকা করে গিয়েছিলেন।

অনাগত ভবিষ্যতের বাঙালি ফোনের পর্দাতেও যাতে ব্যোমেশকেই দেখে একাত্ম হতে পারে, তার ভিতটি তার স্রষ্টা পাকা করে গিয়েছিলেন। নিজস্ব চিত্র

ব্যোমকেশের কিন্তু এই ‘আলাদা হওয়ার’ দায় নেই। সে বিবাহিত। তার স্ত্রী সত্যবতী যে সুন্দরী নয়, সে কথা ব্যোমকেশ নিজেই জানিয়ে রাখে (‘অর্থমনর্থম’)। পশার বাড়লে সমকালীন আর পাঁচজন সফল বাঙালির মতোই ব্যোমকেশও উত্তর কলকাতার মেসবাড়ির পরিসর ছেড়ে দক্ষিণ কলকাতার কেয়াতলার বাসিন্দা হয়ে যায়। তার বয়স বাড়ে। বন্দুক সে কদাচ ব্যবহার করেছে। ‘আদিম রিপু’-তে ১৯৪৬-এর উথালপাথালের সময়ে সে বেআইনি বন্দুক কিনতে গিয়েও পিছিয়ে আসে। সব কিছু মিলিয়ে তার মধ্যে বাঙালি মধ্যবিত্তির ছাপ স্পষ্ট। এখানেই তুরুপের তাসটি খেলে দেন শরদিন্দু। অনাগত ভবিষ্যতের বাঙালি ফোনের পর্দাতেও যাতে ব্যোমেশকেই দেখে একাত্ম হতে পারে, তার ভিতটি তার স্রষ্টা পাকা করে গিয়েছিলেন।

শরদিন্দু সেই সন্ধিসময়ের সাহিত্যিক, যখন বাংলা সাহিত্যে প্রবেশ ঘটছে মনোবিদ্যার। সিগমুন্ড ফ্রয়েড তাঁর শ্মশ্রুময় ছায়া ফেলছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বা জগদীশ গুপ্তের মতো লেখকের রচনায়। শরদিন্দুও তাঁদেরই শরিক। ফ্রয়েড-বর্ণিত বিভিন্ন গূঢ়ৈষা এবং ঈর্ষার বিবিধ বর্ণালি তাঁর প্রায় প্রতিটি রচনায়। ব্যোমকেশ কাহিনি সেই কারণেই কৈশোরের বিনোদন-সঙ্গী নয়। আজও বাঙালি পাঠ ফেলুদা-পাঠ সম্পন্ন করার পরেই ব্যোমকেশে হাত দেয়। ফেলুদা-কাহিনিতে মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা নেই। এর প্রধান কারণ সত্যজিৎ এই কাহিনি লিখেছিলেন কিশোরদের জন্য। এমনকি, ফেলুদা-কাহিনিতে নারীচরিত্ররাও প্রান্তিক। দু’একটি বাদ দিলে বেশির ভাগ ফেলুদা-কাহিনিই প্রত্নবস্তু ও তাকে ঘিরে সংঘটিত চুরি অথবা খুনকে নিয়ে। ইংরেজি হরর সাহিত্যের অন্যতম প্রধান পুরুষ মন্টেগু রোডস জেমসের ভৌতিক কাহিনিগুলি যেমন আবর্তিত হয় কোনও না কোনও প্রত্নবস্তুকে ঘিরে। ফেলুদার গোয়েন্দাগিরির বেশির ভাগটা জুড়ে থাকে জেমসীয় রসায়ন। ফেলুদার প্রায় প্রতিটি কাহিনিই ‘ক্রাইম’-এর। ‘অম্বর সেন অন্তর্ধান রহস্য’ আখ্যানে ক্রাইম থেকে বার হতে গিয়েও থমকেছেন সত্যজিৎ। তাকে আবার ক্রাইমের গণ্ডিতে ফিরিয়ে এনেছেন। কিন্তু ‘মাকড়সার রস’-এ সে অর্থে ক্রাইম কোথায়? এক গোলমেলে বুড়ো দিবারাত্র বসে অশ্লীল উপন্যাস লেখে আর চুরি করে টারান্টুলার রস খেয়ে নেশা করে। এ জগৎ কখনওই বাঙালি কৈশোরের চেনা পাঠ্যবস্তুর ছাঁচটির সঙ্গে মেলে না। কিন্তু এ-ও ঠিক যে, ‘মাকড়সার রস’ বা ‘বহ্নিপতঙ্গ’-এর মতো কাহিনিই বাঙালির কৈশোরকে যৌবনে রূপান্তরিত করে।

শরদিন্দু সেই সন্ধিসময়ের সাহিত্যিক, যখন বাংলা সাহিত্যে প্রবেশ ঘটছে মনোবিদ্যার।

শরদিন্দু সেই সন্ধিসময়ের সাহিত্যিক, যখন বাংলা সাহিত্যে প্রবেশ ঘটছে মনোবিদ্যার। ফাইল চিত্র

শরদিন্দুর লিখনে বার বার এসেছে মনস্তত্ত্বের জটিল বিন্যাস। ১৯৩২ সালে যখন তিনি প্রথম কলম ধরেন, সেই সময়ে বাংলায় অনূদিত হচ্ছেন ফ্রয়েড। গিরীন্দ্রশেখর বসুর দৌলতে বাঙালি চিনতে শিখছে মানবমনের আলো-অন্ধকার। এমন এক যুগসন্ধিতে দাঁড়িয়ে শরদিন্দু লিখছেন ‘ঘড়িদাসের গুপ্তকথা’-র মতো ‘বস্তুকামিতা’ (ফেটিশিজম) নিয়ে ছোটগল্প। এমনকি, তাঁর ঐতিহাসিক আখ্যানেও এসে পড়ছে যৌন ঈর্ষার মতো বিষয় (‘গৌড়মল্লার’-এর রানি শিখরিণী ও কুহুর দ্বন্দ্ব)। সেখানে ব্যোমকেশের আখ্যানেও অনিবার্য ভাবে এসেছে মানবমনের গূঢ়তর স্তরগুলি। ‘বহ্নিপতঙ্গ’ উপন্যাসে শকুন্তলা তার গোপন প্রেমকে ব্যক্ত করেছিল তার আঁকা পৌরাণিক শকুন্তলার ছবিতে দুষ্মন্তের চোখের মণির রঙে। এই জটিলতা ফেলুদায় নেই। থাকার কথাও নয়। আর এই জটিলতার কারণেই ব্যোমকেশ-কাহিনি হয়ে দাঁড়ায় পেঁয়াজের মতো। এক এক বয়সে পাঠক তার থেকে ছাড়িয়ে নেন এক এক রকমের খোসা, উন্মোচিত হয় রহস্য কাহিনির ‘হুডানইট’-এর চেয়েও বেশি কিছু। অপরাধ আর অপরাধীকে ছাপিয়ে যায় কালের যাত্রার ধ্বনি। ‘আদিম রিপু’-তে যে বর্ণনা রয়েছে ১৯৪৬-’৪৭-এর, তার তুলনা কোথায়? অবিশ্বাস-সন্দেহ-উন্মত্ততা তখন গোটা একটা জাতিকে গ্রাস করেছে, তখন সেই দুঃস্বপ্নকে শরদিন্দু লিখছেন নির্লিপ্ত কলমে। স্বাধীনতার উচ্ছ্বাস ব্যোমকেশ বা অজিতকে স্পর্শ করতে গিয়েও করে না। ব্যোমকেশ সাধারণের থেকে খানিক ঊর্ধ্বে উঠে পুড়িয়ে দেয় অপরাধীর হাত থেকে নেওয়া অভিশপ্ত টাকার বান্ডিল। অপরাধীর সাজা হয় না। স্বাধীনতা এসে স্পর্শ করে এক নতুন জীবনের আরম্ভকে। এর তুলনা গোটা বাংলা সাহিত্যেই বিরল।

ওয়াটসন যত ভাল চিকিৎসকই হোক না কেন, সে হোমসের মনোজগতের গলিঘুঁজিকে চেনে না। তাই হোমস তার কাছে বিস্ময়ের পাত্র।

ওয়াটসন যত ভাল চিকিৎসকই হোক না কেন, সে হোমসের মনোজগতের গলিঘুঁজিকে চেনে না। তাই হোমস তার কাছে বিস্ময়ের পাত্র। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

আর একটি দিক ব্যোমকেশ-অজিতের সম্পর্কের সমীকরণে। ধ্রুপদী গোয়েন্দা কাহিনিতে গোয়েন্দা এবং সাধারণ মানুষের তফাত বোঝাতে গোয়েন্দার পাশে তাঁর সঙ্গীটিকে সাধারণত খানিক মাঠো হিসেবে দেখানো হয়। ওয়াটসন যত ভাল চিকিৎসকই হোক না কেন, সে হোমসের মনোজগতের গলিঘুঁজিকে চেনে না। তাই হোমস তার কাছে বিস্ময়ের পাত্র। ফেলুদার পাশে লালমোহন এতটাই মাঠো যে, মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়, তিনি কী করে সফল সাহিত্যিক হলেন! লালমোহন ইংরেজিতে কাঁচা। বাংলাতেও তেমন দড় কি? তিনি বড়জোর কমিক রিলিফ। আর ফেলুদার মাহাত্ম্য কীর্তনকারী তোপসের কাছে তার দাদা সুপারহিরো। কিন্তু ব্যোমকেশ আর অজিতের বৌদ্ধিক জগৎ আলাদা। কেউ কারওর জমিতে পা বাড়ায় না। ব্যোমকেশের সাহিত্যবোধ ধ্রুপদী। সে কালিদাস বা রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতি দেয়। অজিতও ‘আধুনিক’ সাহিত্যকে এড়িয়েই চলে বোঝা যায়। ‘মগ্নমৈনাক’-এ যেখানে আধুনিক কবিতার প্রসঙ্গ এসেছে, সেখানে ‘দুর্বোধ্যতা’-র তকমাও লেগেছে তার গায়ে। অথচ শরদিন্দুর কালে প্রেমেন্দ্র মিত্র বাংলা কবিতার পালে এনেছেন ‘সাগর থেকে ফেরা’ বাতাস।

শরদিন্দু কি ‘মিস’ করেছিলেন সেই পটপরিবর্তন? নাকি ধ্রুপদী মানসিকতা সম্পন্ন, বঙ্কিমভক্ত, কোনান ডয়েল-প্রেমী জানতেন অনন্ত আগামীতে পঠিত হওয়ার জন্য সাহিত্য দাবি করে ধ্রুপদীয়ানার? শেক্সপিয়ারের সনেটের মতোই সেখানে কাল তার অভিজ্ঞানচিহ্নকে স্পষ্ট করে ব্যক্ত করবে না। রবীন্দ্রনাথের গানের মতোই তার কাছে ফিরে আসতে হবে বার বার।

অনাগত ভবিষ্যতের বাঙালি ফোনের পর্দাতেও যাতে ব্যোমেশকেই দেখে একাত্ম হতে পারে, তার ভিতটি তার স্রষ্টা পাকা করে গিয়েছিলেন।

অনাগত ভবিষ্যতের বাঙালি ফোনের পর্দাতেও যাতে ব্যোমেশকেই দেখে একাত্ম হতে পারে, তার ভিতটি তার স্রষ্টা পাকা করে গিয়েছিলেন। ছবি: হইচই

বার বার পাঠককে ফিরে আসতে হয় ব্যোমকেশের কাছে। অপরাধী কে, তা তো জানা হয়ে গিয়েছে কৈশোরেই। তবু যুবক বাঙালি, প্রৌঢ় বাঙালি, পলিতকেশ বাঙালি কেন ফিরে যায় ব্যোমকেশ কাহিনির কাছে? সে রহস্যের সমাধান স্বয়ং ব্যোমকেশও করতে পারবে না? কোথাও সেখানে রয়েছে মনোগহীনের হাতছানি, কোথাও শরদিন্দুর ভাষাসৌন্দর্যের দ্রিমিকিধ্বনি, কোথাও বা হারিয়ে যাওয়া সময়ের প্রতি এক অনিবার্য পিছুটান। পাঠক তাঁর অবচেতনে মনে রাখেন ব্যোমকেশ নিছক ‘গোয়েন্দা’ নয়। সে ‘সত্যান্বেষী’। এই ‘সত্য’ খোঁজেন দার্শনিকেরা। সে অপরাধ আর অপরাধীর দ্বন্দ্বে সীমায়িত নয়। সে কাল আর কালোত্তীর্ণতার সঙ্ঘাতের মধ্যে এক বীথিপথ নির্মাণ করে হাঁটে, যেখানে তার সঙ্গী হয় একটি জাতির ইতিহাস, ভাষা-সংস্কৃতি-আত্মপরিচয় বোধ। সেখানে পাঠকও সত্যান্বেষণেই রত। সেই সত্য অন্বেষণ শেষ হয় না কখনওই।

আরও পড়ুন:
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy