Advertisement
E-Paper

Rakesh Jhunjhunwala: কট্টর হিন্দু, কথাবার্তায় অকপট রাকেশ দানের সময় দল বা রং দেখতেন না

একই সঙ্গে উচ্চগ্রাম, নিজের জাত নিয়ে গর্বিত, রাকেশ কিন্তু দেশকে ভালবেসেছিলেন নিঃশর্তেই।

মানুষকে বিশ্বাস করতে ভালবাসতেন রাকেশ।

মানুষকে বিশ্বাস করতে ভালবাসতেন রাকেশ। —ফাইল চিত্র

টি এন নাইনান

টি এন নাইনান

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২২ ১০:৫৪
Share
Save

প্রায় দু’'দশক আগে মুম্বইয়ের তাজমহল হোটেলে রঘুরাম রাজনের ‘সেভিং ক্যাপিটালিজম ফ্রম ক্যাপিটালিস্টস’নামে বইটি নিয়ে এক আলোচনাসভা আয়োজিত হয়েছিল। যত দূর মনে পড়ছে, সেই সভাকক্ষের এক দূরবর্তী প্রান্ত থেকে বেশ উচ্চস্বরেই কেউ বলে ওঠেন যে, ভারত এবং তার শেয়ার বাজার এমন এক তেজি অবস্থাকে প্রত্যক্ষ করতে চলেছে, যা আগে কখনও ঘটেনি।

এমন এক উক্তি স্থান-কাল-পাত্রের তোয়াক্কা না করেই উচ্চারিত হয়েছিল। উপস্থিত মানুষরা সচকিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, এ হেন উক্তিটি জনৈক রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার কণ্ঠনিঃসৃত। পরবর্তী কালে রাকেশের সঙ্গে আমার যে কয়েক বার সাক্ষাৎ ঘটেছে, সে সব সাক্ষাতের বেশির ভাগই ছিল দক্ষিণ মুম্বইয়ের ‘জিওফ্রে-জ’নামের এক পানশালায়।সঙ্গী হিসেবে হাজির ছিল কয়েক পেয়ালা পানীয়ও।

এক বার এমনই এক একতরফা আলাপের সময়ে আনুষঙ্গিক এতোল-বেতোল কথাবার্তা আর বহুবিচিত্র বর্ণের সব বচনে ঝুনঝুনওয়ালা তুলে আনছিলেন শেয়ার বাজারের সঙ্গে ছমছমে সব নারীদের প্রসঙ্গ। সেখানেই ভারতীয় শেয়ার বাজারে আসন্ন ‘বুম’বা তেজি ভাব নিয়ে ঝুনঝুনওয়ালা তাঁর বিশ্বাস ব্যক্ত করেছিলেন। তাঁর বিপুল আশাবাদের পিছনে ক্রিয়াশীল ছিল তাঁর নিজস্ব অন্তর্দৃষ্টি। সে সবের মধ্যে হয়তো তেমন গভীরতা ছিল না। কিন্তু সেই আড্ডার মধ্যেই তিনি খানিকটা টাকা কামিয়ে নিলেন (আড্ডার শেষে একটি প্লেটে রাখা একগোছা নোট থেকে ১,০০০ টাকা তিনি তুলে নিলেন দেখলাম)। তবে এ সব কিছুই নয়, আগামীতে কী ঘটতে চলেছে, তা আমরা আন্দাজ করতেই পারিনি।

ক্রমশ আবিষ্কার করলাম, রাকেশ প্রায়শই উচ্চগ্রামে কথা বলে থাকেন। শেয়ার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তিনি যে সর্বদা কোনও পারম্পর্য মেনে চলেন, এমনও নয়। কথা বলার সময় খানিক গভীর ভাব বজায় থাকে তাঁর, তবে তা মনে নয় ইচ্ছাকৃত বা আরোপিত। এক বারই মাত্র তিনি আমাকে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছিলেন (বলেছিলেন, টাটা মোটরসকিনে নাও)।আমি অবশ্য সেই পরামর্শ শুনিনি। পরে রাকেশ আমাকে মেসেজ করে জানিয়েছিলেন, সেই সংস্থার শেয়ারের দাম ঠিক কোথায় পৌঁছেছে। সেই কারণেই মনে হয় ঘটনাটা ভুলতে পারিনি।

শেয়ার বাজারে যে কোনও লোকের থেকে বেশি টাকা কামানোর মানুষ হিসেবে রাকেশ বোধ হয় অনেক বেশি মাত্রায় নিজের দেশকে ভালবাসতেন। দেশ সম্পর্কে তাঁর আশাবাদের পাল্লা শেয়ার বাজারের থেকে অনেক বেশি ঝুঁকে ছিল। তাঁর নিজের আখেরের চাইতে অনেক বেশি আগ্রহী ছিলেন দেশের কথা শুনতে। রাজনৈতিক মতের দিক থেকে রাকেশ ছিলেন বেশ কড়া হিন্দুত্বের পক্ষে। এবং স্বভাবসিদ্ধ ভাবেই তাঁর মুখের ভাষা বা অঙ্গভঙ্গি— কোনওটিই পরিশীলনের তোয়াক্কা করত না। আমি তাঁর রাজনৈতিক মতকে যদি অপরিণত বলে সমালোচনা করতাম, তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত হতেন না। নিজের মতকে আঁকড়ে থাকতেই চাইতেন। আবার কোনও সৎকাজে অর্থদানের ব্যাপারে তিনি রাজনৈতিক রং একেবারেই দেখতেন না।

ব্যক্তিগত জীবনে রাকেশ ছিলেন আদ্যোপান্ত পারিবারিক মানুষ। তাঁর কথাবার্তায় প্রায়শই উঠে আসত তাঁর বাবা অথবা স্ত্রীর প্রসঙ্গ। সন্তানের পিতা হতে নেহাতই ভালবাসতেন। বাবা হলে তাঁর আনন্দের সীমা থাকত না। সিনেমা দেখতে ভালবাসতেন। কিন্তু পছন্দ হত হাতে গোনা কয়েকটিই। প্রয়াণের পরে একটি ‘ভাইরাল’ হওয়া ভিডিয়োয় তাঁকে হুইলচেয়ারে বসে নাচতে দেখা গিয়েছিল। সে দিন তাঁর ৬০তম জন্মদিন ছিল। এ সমস্ত কিছুই জীবনের সঙ্গে তাঁর লিপ্তির, তাঁর প্রবল আসক্তির প্রমাণ। মালাবার হিল্‌স এলাকায় রাকেশ এক বড়সড় জমি কিনে সেখানে একটি প্রাসাদ বানিয়েছিলেন। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁর দানের পরিমাণও বাড়ছিল।আর তা আরও বেশি করে করার ইচ্ছার কথা তিনি সমানে বলে যেতেন।

মানুষকে বিশ্বাস করতে ভালবাসতেন রাকেশ। যে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত তাঁর টাকাতেই গড়ে উঠেছিল, সেখানে পরিদর্শনে যেতে অস্বীকার করতেন।কারণ হিসেবে বলতেন, প্রতিষ্ঠানটি চালানোর জন্য যোগ্য মানুষেরাই তো রয়েছেন! তাঁর বিমানসংস্থা ‘আকাশ এয়ার’-এর ‘সোয়েট ইকুইটি’ (অর্থ নয়, শ্রম, বুদ্ধিমত্তা এবং ব্যক্তিগত সময়ের ভাগ)-র ৪০ শতাংশ তিনি সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের হাতেই দিয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘এই সব মানুষের যথেষ্ট পরিমাণ দায়বদ্ধতা রয়েছে। সুতরাং আমার চিন্তার কিছু নেই। আমাকে তো কারও কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে না।’’ শুধুমাত্র নিজের টাকাই তিনি বিনিয়োগ করতেন।এটি যেন অনেকটা নৈতিক দায় থেকেই জাত বলে মনে হত।

এ সব সত্ত্বেও বিমানসংস্থা প্রতিষ্ঠার পর বিনিয়োগকারী থেকে রাকেশ অবশেষে উদ্যোগপতি হয়ে উঠলেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু, কার্যত একেবারেই বিপরীত স্বভাবের এক নম্রভাষী মানুষ রাধাকৃষ্ণ দামানি তাঁর পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছিলেন। দালাল স্ট্রিটে অদৃষ্টই তাঁদের সাক্ষাৎ ঘটিয়ে দিয়েছিল। তাঁদের পরিচয় যখন ঘটেছিল, তখনও দামানি তাঁর ‘ডিমার্ট রিটেল চেন’-এর ব্যবসা শুরু করেননি। প্রসঙ্গত, সেই ব্যবসার এখনকার বাজারদর ২৮ লক্ষ কোটি টাকা। সেই ব্যবসায় দামানির অংশের প্রেক্ষিত রচনায় রাকেশের বিপুল অর্থের ভূমিকা কিছু কম ছিল না।

এক বেশ জমাটি আড্ডায় রাকেশ বলেছিলেন, তাঁর সম্প্রদায়ই এ দেশের মালিক। তাঁকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে বলা হলে তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁরা অগ্রবাল সম্প্রদায়ের বানিয়া। জিন্দল, ভংশল, গয়াল, মিত্তল সিঙ্ঘল প্রমুখ অন্যান্য গোত্রের লোকজনও একই উৎসের। তার পর তিনি সুপরিচিত ধনকুবেরদের এক বিশাল তালিকা পেশ করে দেখালেন, সকলেই অগ্রবাল। এর পর তাঁর প্রশ্ন ছিল, ‘‘তা হলে বস্‌, আমরা এ দেশের মালিক হলাম কি না?’’

আমাদেরর শেষ দেখা হয়েছিল দিল্লিতে। রাকেশ সেখানে প্রধানমন্ত্রী-সহ রাজনৈতিক হোমরাচোমরাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। আমাকে এবং শেখর গুপ্তকে তিনি মধ্যাহ্নভোজে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। রাকেশ সে সময় হুইলচেয়ার-বন্দি। স্বাস্থ্যও খুব সুবিধের যাচ্ছিল না। বার বার বলছিলেন, চিকিৎসা ইতিবাচক সঙ্কেতই দিচ্ছে। কিন্তু তাঁর কথার মধ্যে সেই পুরনো আগুনের অভাব ছিল। একজন পরিচারক এসে মাঝে মাঝেই তাঁকে ওষুধ দিয়ে যাচ্ছিলেন। কেন জানি না মনে হচ্ছিল, রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা নামে পরিচিত, জীবন ছাড়িয়ে আরও খানিক বেশি প্রসারিত এক ব্যক্তিত্ব যেন নিভে আসছেন।

Rakesh Jhunjhunwala

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}