Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Rabindranath Tagore

নিয়েছি রত্নমালা, দিয়েছি কী

রবি ঠাকুরের গান, কবিতা, যেন জলের মতো! সরল এবং জীবনদায়ী। যার যার নিজের মনের সঙ্গে এঁটে যায়। ভিতরের গভীর তত্ত্ব— সে সব পণ্ডিতজনেরা ব্যাখ্যা দেবেন।

Rabindranath Tagore

—ফাইল চিত্র।

সাবিনা ইয়াসমিন
শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৪ ০৮:৩৩
Share: Save:

বাঙালির জীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে চর্চা কখনও শেষ হওয়ার নয়। কারও কারও ইষ্টদেবতা রবি ঠাকুর। সকাল শুরু হয় রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে। দেওয়ালে কালো ফ্রেমে বাঁধানো সাদাকালো ঋষি রবীন্দ্রনাথ। সকালবেলায় ওই মুখ দেখলে দিন ভাল যায় বলেই তাঁদের বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসের উপর আস্থা রাখলে সারাটা দিন যেমনই কাটুক না কেন, দিন শেষে সকল কষ্ট আর অপমানের মলম সেই রবি ঠাকুরই। কেউ আঁকড়ে ধরেন শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত, কেউ গীতবিতান। দু’টির মধ্যেই জাগতিক এবং মহাজাগতিক সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আছে। বাঙালির সমস্ত প্রকারের যন্ত্রণার উপশমের টোটকা আছে এই দুই গ্রন্থে।

রবি ঠাকুরের গান, কবিতা, যেন জলের মতো! সরল এবং জীবনদায়ী। যার যার নিজের মনের সঙ্গে এঁটে যায়। ভিতরের গভীর তত্ত্ব— সে সব পণ্ডিতজনেরা ব্যাখ্যা দেবেন। সাধারণ মানুষের কেবল আরাম হলেই হল। প্রাণের আরাম। উচ্চারণ করতে ভাল লাগে। শ্রবণেও মধুর। বিশ্বাসে মনের ব্যাপ্তি।

মফস্‌সলের যে ছেলে বা মেয়েটি ভাবসম্প্রসারণ করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের দুটো বা চারটে পঙ্‌ক্তির মুখোমুখি হচ্ছে, তাদের তখন শুধু সম্প্রসারণেই মন। দুটো বা চারটে পঙ্‌ক্তিকে বিশদে লিখলে তবেই পাওয়া যাবে ভাল নম্বর। সেই ছেলে বা সেই মেয়েটিই অনেক পরে কোনও এক মুহূর্তে “ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশিরবিন্দু” কিংবা “নয়ন মেলে দেখ দেখি তুই চেয়ে, দেবতা নাই ঘরে” মনে করে হাতেকলমে মিলিয়ে নিতে পেরেছে পঙ্‌ক্তিগুলির প্রকৃত অর্থ। যাপনের সঙ্গে কবিতার নিবিড় যোগ।

রবীন্দ্রসঙ্গীতের মতো রবীন্দ্রনৃত্যও বড় মনোরম। হাত-পা-কোমর সে ভাবে না দুললেও চলে। হৃদয় থেকে উঠে আসা অভিব্যক্তি চোখে আর মুখমণ্ডলে থাকলেই হবে। কন্যা নাচ শেখার বায়না ধরলে অভিভাবকদের প্রথম পছন্দ রবীন্দ্রনৃত্য। শহরে, মফস্‌সলে রবীন্দ্রসঙ্গীত, রবীন্দ্রনৃত্য শেখার অনেক ‘সেন্টার’। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সে রকম কোনও দায় নেই রবি ঠাকুরের গান বা কবিতার প্রকৃত অর্থ বোঝানোর। কিন্তু, তাতেই কাজ চলে যাচ্ছে। পঁচিশে বৈশাখে ‘বীরপুরুষ’ বা ‘জুতা আবিষ্কার’ কবিতা পাঠ করার জন্য ছোটদের লাইন পড়ছে। তরুণ-তরুণীরা সাদা রঙের পোশাক পরে স্থানীয় মঞ্চে একের পর এক গান গাইছেন। প্রেম, পূজা, প্রার্থনা— সব রকমই থাকছে। কিন্তু তার প্রভাব বেশি ক্ষণ থাকছে না। ওই যে রেশ থেকে যাওয়া যাকে বলে! রবীন্দ্রনাথ এক বিশাল মাপের কবি। নোবেলজয়ী বাঙালি কবি। রবির ছোঁয়াতে থাকলে সমাজে মর্যাদা বাড়ে।

রবি ঠাকুর নিজে জগদ্বিখ্যাত। তাঁর সম্বন্ধে আলোচনা বা সমালোচনা করলেও বিখ্যাত হওয়া যায়। হয়েছেনও অনেকে। রবীন্দ্রনাথ অনেকের রুজিরুটি।

রবীন্দ্রনাথের ভাবাদর্শ গ্রহণ করে জীবন কাটিয়েছেন বা কাটাচ্ছেন— এমন মানুষও আছেন এই সমাজে। যে উৎকৃষ্ট বাংলা শব্দ রবীন্দ্রনাথ ব্যবহার করেছিলেন তাঁর লেখায়, বক্তৃতায়, প্রবন্ধে— তাকে মান্যতা দিয়ে নিজে কখনও কটু অশালীন শব্দ প্রয়োগ করেননি, এই চরমতম অসহিষ্ণু সময়ে তেমন মানুষও খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে, তাঁরা সংখ্যায় খুব কম।

রিলস-বিলাসী মানুষজন রবীন্দ্রনাথের গান ব্যবহার করে গাদা গাদা লাইক পেয়ে সন্তুষ্ট। সমস্ত ঋতুর গান রবীন্দ্রনাথ লিখে গেছেন। দেশপ্রেমের কবিতা, প্রেমের গান, বিরহের গান, নাটক— যখন যেটা দরকার, সুবিধেমতো তুলে নিলেই হল!

এখন তো প্রায় সবার হাতেই স্মার্টফোন। সেখানে হোয়াটসঅ্যাপে খগেনের কথা রবীন্দ্রনাথের বাণী হিসাবে শেয়ার হচ্ছে। যাচাই করে ভুল শুধরে দেওয়ার মানুষ নেই। আর কেউ সত্যিকারের প্রতিবাদ করলে অন্য পক্ষ খেপে উঠছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে আধোআধো জেনে লোকে বাড়ির নাম রাখছেন সোনার তরী, বলাকা। ছবি বিকৃত করে প্যান্টশার্ট পরিয়ে রবি ঠাকুরকে ফেসবুকে ছেড়ে দিচ্ছেন কোনও এক বাঙালিই। অন্য বাঙালিরা দেখে হাসছেন। মজা করছেন। পঁচিশে বৈশাখে গতানুগতিক কতকগুলো অনুষ্ঠান ছাড়া তাঁকে আমরা আর কিছুই দিতে পারিনি। তাঁর চিন্তাভাবনা, কথা— কোনও কিছুই আত্মস্থ করতে পারিনি। পারলে বাঙালির জীবনে এত দুর্দশা নেমে আসত না।

অন্য বিষয়গুলি:

Rabindranath Tagore Society Bengali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy