Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in India

Coronavirus in India: কোভিড: মহাছড়ানের সংজ্ঞায়ন, মহাছড়ানোর পরিসংখ্যান

এ রকম দুঃস্বপ্নের একটা মে মাস যে আসতে চলেছে তা কিন্তু এ বছর মে দিবস স্মরণ করার সময়ও আমরা বুঝে উঠতে পারিনি।

প্রতীকী ছবি।

শুভময় মৈত্র
শুভময় মৈত্র
শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২১ ২১:০০
Share: Save:

সুপার স্প্রেডারের একটা বাংলা কোভিড পরিস্থিতিতে অবশ্যই প্রয়োজন। ভাল করে মুখ খোলার আগে তাই মুখবন্ধতেই বিষয়টা মিটিয়ে ফেলা যাক। ক্রিয়াপদ মহাছড়ানো আর বিশেষণে মহাছড়ানে। অনুবাদ নিম্নমানের। সেটা মেনে নিয়ে শুরুতেই ক্ষমাও চেয়ে নেওয়া যাক। তবে একটু ভেবে দেখলে বুঝবেন যে চলিত বাংলায় আমরা ছড়ানো বলতে যা বুঝি, কোভিড পরিস্থিতিতে সেই ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছি আমরা অনেকেই। দায়িত্বশীল শাসক কিংবা প্রশাসক থেকে একেবারে আমজনতা পর্যন্ত। আর শুধু নিজেদের দেশকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। বছর দেড়েক আগে চিনে যখন গোটা বিষয়টা শুরু হল, তখন প্রথম বিশ্বের দেশগুলোও খুব দৃঢ়তার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। আর কোভিড অলিম্পিক্সে কোনও এক সময় যে আমরা সোনার মেডেল পাব, সে আশঙ্কা সকলেরই ছিল। গত কয়েক সপ্তাহে সে ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। এ রকম দুঃস্বপ্নের একটা মে মাস যে আসতে চলেছে তা কিন্তু এ বছর মে দিবস স্মরণ করার সময়ও আমরা বুঝে উঠতে পারিনি। গত কয়েকটা সপ্তাহ কলকাতা শহরও প্রত্যক্ষ করেছে অতিমারির বীভৎসতা। এ কথা একেবারে পরিষ্কার যে কোভিডের প্রথম পর্বে মৃত্যুর ব্যাসার্ধ এ বারের মত কাছে আসেনি। আমাদের এই যে ছড়ানে থেকে মহাছড়ানে-তে উত্তরণ, তার কয়েকটি বিশেষ বিশেষ কারণ তালিকাভুক্ত করার উদ্দেশ্যেই এই লেখা।

ধর্ম এবং ভোটপ্রচার

এখন এ প্রশ্ন উঠবেই যে ধর্মীয় মহামিলন, বা নির্বাচনী জনসভা, এইসব বিষয়গুলি কোভিড সংক্রমণ বাড়ানোর জন্যে দায়ী কি না। শুধু ছড়ানোর কথা নয়, এখানে প্রশ্ন মহাছড়ানোর। এই প্রসঙ্গে নিজামুদ্দিনের তবলিঘি জামাতের প্রসঙ্গ আসবে। গত বছর একেবারে শুরুর দিকে কোভিড ছড়ানোয় বেশ অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল এই ধর্মীয় সংগঠন। ফলে এদেরকে মহাছড়ানে বলা যাবে কি না এই আলোচনা হতেই পারে। মুশকিল হল এঁদের পরিসংখ্যান সরকারি ভাবে খুব বেশি পাওয়া যায়নি। এর পরে এ বছর কুম্ভমেলা নিয়ে খুব হইচই। এ ক্ষেত্রে সম্প্রতি সরকারি বক্তব্য মিলেছে। তথ্য অন্বেষণে ভারাক্রান্ত হয়ে লাভ নেই। অন্তর্জালে বিশদ খুঁজে নেওয়া যাবে। গত ২৯শে মে শনিবার বিশিষ্ট সরকারি আধিকারিক (কুম্ভমেলা ইন্সপেক্টর জেনারেল) সঞ্জয় গুঞ্জাল পরিসংখ্যান সাজিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে কুম্ভমেলা মোটেই মহাছড়ানে নয়। এ নিয়ে যা চলছে, তা অপপ্রচার। ভবিষ্যতে কোনও উপযুক্ত সরকার ক্ষমতায় এলে এটাও বুঝে নেওয়া যাবে যে তবলিঘি জামাতের সম্মেলনেও কোভিড ছড়ায়নি। রাজনীতিকেও মহাছড়ানে বলা যাবে না। কারণ পশ্চিমবঙ্গে যখন ভোটপ্রচারে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তখন মহারাষ্ট্র কিংবা গুজরাতে ভোট না থাকলেও ঘটনা একই। একেই বলে যুক্তিজাল। কী সহজে বুঝে নেওয়া গেল যে নেতানেত্রীদের মুখোশহীন সৎ ভোটপ্রচার একেবারেই মহাছড়ানে নয়। তাঁরাই তো বুঝিয়ে দিলেন কোভিডের বিরুদ্ধে কী ভাবে লড়াই করতে হয়— মুখোশের আড়ালে নয়, মুখোমুখি। তবে ধর্ম এবং ভোটপ্রচারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এতো বেশি হয়েছে যে আমজনতা এ বিষয়ে অবহিত। তাই কথা বেশি না বাড়িয়ে তুলনায় অপ্রচারিত একটি অংশে যাওয়া যাক।

গবেষণা এবং উপদেষ্টা

কোভিডে শাসক থেকে প্রশাসক সকলেই তাঁদের সীমাবদ্ধতা অনুসারে কাজ করেছেন। এ এক এমন অসুখ যাতে কাজ করার সময় সাবধানী হতে চাওয়া স্বাভাবিক। সেটাকে অনেকে বলেন ভয়। ফলে যারা অসুস্থ হয়েছেন তাঁদের পরিবারকে সাহায্য করার মানুষের অভাব এ বার যথেষ্ট। সামাজিক ক্ষেত্রেও এই সীমাবদ্ধতা প্রকট। মৃত্যুর পরে আত্মীয়কে দাহ করতে মাত্র এক বা দু’জন অসহায় অবস্থায় ধাপার মাঠে পৌঁছেছেন, এ রকম উদাহরণ বিরল নয়। এই অসহায়তা থেকে মুক্তির দিন নিশ্চয় আসবে। কিন্তু সেই দিন সত্যি কবে টপ করে বাড়ির উঠোনে গাছ থেকে পড়বে তা আমরা বুঝব কী করে? এই জায়গায় অবশ্যই পরিসংখ্যানের প্রসঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ গত দিনগুলোর সংক্রমণ বা মৃত্যুর সংখ্যা দেখে বুঝতে চাইবেন সামনের দিনে কী ঘটতে চলেছে। যেমন একটি বিষয় একেবারে পরিষ্কার যে লকডাউনে সংক্রমণ কমে।
জুন মাসের শুরুতে এই লেখার সময় পশ্চিমবঙ্গে প্রায় তিন সপ্তাহে গড়িয়ে গেছে লকডাউন, থাকবে আরও এক সপ্তাহের মত। বাড়ির পাশের রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্সের তীব্র সাইরেনের সংখ্যা আবার কমতে শুরু করেছে। এতো গেল সহজবোধ্য উপায়। কিন্তু গম্ভীর মুখে তথ্য বিশ্লেষণে বিশিষ্ট গুণীজন যখন লেখচিত্র এঁকে সামনের দিনগুলোতে কী হবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ মিলিয়ে দেন, তখন সাধারণ মানুষ যারপরনাই অবাক হয়। অনেক সময় বিশ্বাসও করতে শুরু করেন যে সেই সব ভবিষ্যদ্বাণী দারুণ মিলছে। অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম এর সঙ্গে যুক্ত হয়, যেখানে ততোধিক নামী শিক্ষাবিদের নাম ভেসে ওঠে সেই বিশ্লেষণের বালতির কোণ ঘেঁষে। কিন্তু সবথেকে অবাক করার বিষয় হল, একটু পড়ে দেখলে বোঝা যায়, বিদ্বজ্জনের আঁকা লেখচিত্র একটু একটু করে বদলে যায় নতুন দিনের নতুন সংক্রমণ আর মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশিত হলে। আর এই সূক্ষ্ম মিলিয়ে দেওয়া চোখে পড়ে না সাধারণ মানুষের, কিংবা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের। একটু খুঁজে দেখবেন তো, কোথায় কখন তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছিল যে এ বছরের এপ্রিল-মে মাসে এই ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে? অনেক মানুষ সত্যিই আমাদের সাবধান করেছেন, যে কোনও সময় এ রকম ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি আসতে পারে। তবে সেটা সাধারণ উপলব্ধি। কিন্তু এ বছরের জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে কেউ রাশিবিজ্ঞান বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বুঝে গেছেন সামনের কোন দিন থেকে কোন দিন পর্যন্ত সর্বনাশ, এমন কোন গবেষণাপত্র খুঁজে পাওয়া শক্ত। তেমন ঘটলে বুঝতে হবে গোটা গবেষণাটাই জ্যোতিষভিত্তিক কবিরাজি কম্পিউটার সায়েন্স। শুধু আমাদের দেশ এই অদ্ভুতুড়ে গবেষণাধর্মী ভবিষ্যদ্বাণীর শিকার নয়, উন্নত দেশেও এমন গল্প চলে। তবে সেখানে এই বিষয়গুলো সামলানোর মত কিছু দায়িত্বশীল গবেষকও আছেন। সেই কারণেই হয়ত দ্বিতীয় ঢেউ সামলে ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে কিছুটা আলোর মুখ দেখছে প্রথম বিশ্ব।

মজার কথা হল এ দেশের দায়িত্বশীল শিক্ষাবিদেরা এর বিশেষ প্রতিবাদও করছেন না আজকাল। এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন গত বছর এপ্রিল মাসের কথা। কলকাতার অত্যন্ত মেধাবী কয়েকজন শিক্ষাবিদ, যাঁরা প্রবীণ হলেও এখনও নিজে হাতে গবেষণা করেন এবং ছাত্রদের আবিষ্কারে ভাগ বসান না, তাঁরা এই বিষয়ে সাবধান করে দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ছিলেন বিশেষজ্ঞ রাশিবিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ এবং গণকযন্ত্র বিশেষজ্ঞেরা। তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এঁদের পারদর্শিতা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উল্লিখিত হয়। তাঁরা আবেদন করেছিলেন উপরের অনুচ্ছেদের গুণীজনদের উদ্দেশ্যে। সেখানে মূল বক্তব্য ছিল, ‘‘এই বিষয়টি বিশেষ ভাবে যন্ত্রণাদায়ক যে বিশেষজ্ঞদের পরস্পরবিরোধী এবং বিভ্রান্তিকর (কনফ্লিক্টিং অ্যান্ড কনফিউজিং) মতামত এই অতিমারি পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের দুর্দশা বাড়িয়ে দিচ্ছে।" অপরিপক্ক গবেষণা এবং তার বাণিজ্যিকরণ আমজনতার কাছে গোদের ওপর বিষফোঁড়া। এর মধ্যে আবার শিক্ষাজগতে প্রচুর মানুষ আছেন যাঁরা যুবক বয়সে পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। কিন্তু প্রশাসনের কাজে যুক্ত হয়ে পড়ায় বয়স বাড়ার পর নিজে গবেষণা করার সময় কম, তাই অনেকটাই পরস্মৈপদী। এ দিকে সরকারের অনেক বেশি কাছাকাছি তাঁরা। রাজনৈতিক দল বদলালেও তাঁদের বদল হয় না, কারণ যে কোন রাজনৈতিক দলই এমন বিদ্বজ্জনদের পছন্দ করেন যাঁরা চটজলদি নতুন শাসকের কথা শুনবেন, গায়ের জামা বদলাবেন, এবং তারপর নতুন শাসকের ভাষাতেই কথা বলবেন। ফলে আজকের দিনে যে বিশেষজ্ঞেরা সরকারকে উপদেশ দিচ্ছেন তাঁরা সবসময়েই রাজার গায়ে উপযুক্ত পোশাকের খোঁজে রত। ফলে সেখানে ‘কাপড় কোথায়’ গোছের প্রশ্ন গঙ্গার ধারের মৃতদেহ পোঁতার অগভীর গর্ত থেকে স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। আর প্রতিবাদী অধ্যাপকেরা কিছুদিন হইচই করে আবার নিজ নিজ গবেষণায় ফিরে যাচ্ছেন। কিছু দায়িত্বশীল গবেষকের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ারও খবর পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে যে ধামাধারীদের উপদেষ্টা হিসেবে নিচ্ছেন শাসকেরা, গণমাধ্যমের সামনে না হলেও, তাঁরা যদি বন্ধ ঘরেও শাসকের সমালোচনা না করেন, সে ক্ষেত্রে বিপদ গোটা দেশের। এই জায়গাতেই মনে করিয়ে দেওয়া দরকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একেবারে শেষজীবনে লেখা কবিতার দুটি পংক্তি -
"তাই তো নিয়েছি কাজ উপদেষ্টার;
এ কাজটা সবচেয়ে কম চেষ্টার
।"

জো হুজুর উপদেষ্টাদের কথা শুনে ভুগছেন আমাদের দেশের, বিভিন্ন রাজ্যের, এবং বিভিন্ন প্রান্তের সাধারণ মানুষ। তবে তাঁদের মহাছড়ানোর কথা প্রমাণ করা মুশকিল, কারণ শাসক তাঁদের কাছে যা শুনতে চাইছেন সেটাই তাঁদের বুলি। অতিশিক্ষিত অনুগতের বেসুরো হতে নেই। তাই বহু চেষ্টা করেও তাঁদের মহাছড়ানে বলা গেল না। তাঁদের বুদ্ধিতে রাজটিকা পেতে গেলে আগে হাতে থাকতে হবে স্মার্ট মুঠোফোন। কেউ প্রশ্ন করতে পারবেন না দেশের কত মানুষের কাছে এমন যন্ত্র আছে। নীল পাহাড়ির লালচে কনেদেখা আলোয় কোন এক শিমুল গাছের নিচে খুঁজে পাওয়া ঝিঁঝিঁপোকার গলাতেও স্মার্টফোন মিলবে। অ্যাপকে আপন করে নিয়েছে এ দেশের জীব থেকে জড়। অজর ডিজিটাল ডিভাইড ঘুচিয়ে উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে উৎক্ষিপ্ত উপদেষ্টারা দেশের সরকারকে অতিমারির যে রকেট সায়েন্স শেখাচ্ছেন তা সত্যিই অভূতপূর্ব।

সমাজ এবং শিক্ষা

এইখানটায় আছেন আমজনতা। আছেন রাজনীতির এমন অনেক নেতা-মন্ত্রী-রাজনৈতিক কর্মী যাঁরা কাজ করছেন পথে নেমে। আছেন সিপিএমের লাল স্বেচ্ছাসেবক, আছেন পাশের বাড়ির নাম না জানা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের কর্মী, আছেন একেবারে পাড়া স্তরের তৃণমূলের সমর্থক। এই অংশের সবাই মহাছড়ানে। কারণ নিজেদেরটা না গুছিয়ে এই অংশের মানুষ পথে নামছেন। ভুল কি হচ্ছে না? হচ্ছে। মানুষের কাজ করতে গিয়ে রাস্তায় বেরোনো বছর ষোলোর স্বেচ্ছাসেবক বাড়িতে কোভিড ঢোকাচ্ছেন। তাঁর সফটওয়্যারে কর্মরত একান্নর বাবা বেশ কাজ করছিলেন অফিস ফ্রম হোমের ছাতার তলায়। কিন্তু ঘরে ঢুকল মারণ সংক্রমণ। বেশ ক’দিন ভেন্টিলেটরের নল মুখে নিয়েও লড়াইতে হারলেন বাবা। কিশোর স্বেচ্ছাসেবক সত্যিকারের মহাছড়ানে হিসেবে স্বীকৃত হল। এ রকম মহাছড়ানেদের বাঁচানো শক্ত। তবে একদিন যখন অতিমারি চলে যাবে, তখন জোর করে মনে রাখতে হবে হৃৎপিণ্ড টুকরো হয়ে যাওয়া এই সুপার-স্প্রেডারদের।

সরকার যে একেবারেই ভাবছেন না এমন নয়। সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করছেন অনেক শাসক-প্রশাসক-স্বেচ্ছাসেবক, সরকারি কর্মী। ডাক্তারবাবু এবং বিবি, নার্স দিদি এবং দাদা, তাঁরা যে সেনাপতি থেকে পদাতিক, সে কথা বলাই বাহুল্য। উপদেষ্টারা কি একবার ভাববেন যে সেনাবাহিনী যেমন কিছুটা কম অর্থমূল্যে রেশন পান, তেমন কিছু চিকিৎসাক্ষেত্রের কর্মীদের জন্যে করা যায় কিনা? শিক্ষা ক্ষেত্রেও টালমাটাল। তবু উচ্চমাধ্যমিক স্তরের সমস্ত পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তার মাঝে মাথা ঠাণ্ডা করে ঘরে বসে আছেন এক কোটির ওপর মেধাবী পড়ুয়া। ফল যাই আসুক না কেন, মন খারাপ যতই হোক না কেন সেই ফল মেনে নিতে না পেরে, তাঁরা কিন্তু জনসভায় মুখোশ উড়িয়ে বিপ্লব করতে যাবেন না। সব মেনে নেবেন দেশের এই অবস্থার কথা ভেবে। তাঁদের একটা অংশই দু-পর্বে সাতদিনের বেশি সময় ধরে জেইই মেইন্স দিয়েছেন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে, ফেব্রুয়ারির শেষে আর মার্চের শুরুর ভাগে। প্রায় ১০-১৫ লক্ষ ছাত্রছাত্রী এবং তাঁদের সমসংখ্যক অভিভাবক-অভিভাবিকারা। কোভিড ছড়ায়নি, কারণ তাঁরা পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন, ধর্মপথে পুণ্য সঞ্চয়ে কিংবা প্রচারপথে আসন জয়ে নয়। পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না, তাঁদের কি সে কথা জিজ্ঞেস করবে কেউ?

স্বাভাবিক নিয়মেই ভারতের বৃহত্তর সমাজ শিক্ষা নিচ্ছে এই কোভিড পরিস্থিতিতে। একই রাজনীতির একাধিক মুখ, সেখান থেকে ঘটবেই আগামীর উত্তরণ। কিন্তু রাজনীতির যে মুখ ধর্মভিত্তিক, চিকিৎসা এবং শিক্ষার যে পথ বিজ্ঞানবিমুখ আর উচ্চশিক্ষিত বুদ্ধিজীবী উপদেষ্টাদের বাতলানো যে অভিমুখ চিনে জন্মানো ভাইরাস চিনতে ভুল করছে বারবার, সেই অর্বাচীনতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে কঠিন সিদ্ধান্ত জরুরি। তারকেশ্বরের মন্দির খোলার খবরে শিবঠাকুরের আপন দেশে অনেকেই হয়ত খুশি হবেন, কিন্তু সে সিদ্ধান্ত যে প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার আসলে সুদ যোগ করার পাটিগণিত, তা স্বীকার করাই ভালো।

আর সব থেকে বড় বিপদ,কেন্দ্র বা রাজ্যের শাসক দলের কোনও উপদেষ্টা প্রশ্ন তুলছেন না এই বিষয়গুলিতে। আজকে তাই খোঁজ এমন উপদেষ্টার, যাঁকে সম্মান করবেন দেশের শাসক এবং প্রশাসক, এবং যিনি প্রতি মুহূর্তে চোখে আঙুল দাদা হয়ে বিপরীত যুক্তিগুলি পেশ করবেন, চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস দেখাবেন অমিত পরাক্রমশালী শাসকের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। যিনি সংক্রমণরোধী মুখোশ পরিয়ে নেতানেত্রীদের অজ্ঞানতার মুখোশ খুলে নেওয়ার দম রাখবেন। সমাজবিজ্ঞানে তিনি যে বুদ্ধি দিচ্ছেন সেটাই চরম সত্য নয় এটা বুঝবেন এবং বোঝাবেন। কাগুজে বিশ্লেষণ আর গোটা দেশে তার রূপায়ণ যে চারটি লেখচিত্র কিংবা দু’টি সমীকরণ লিখে বাস্তবায়িত হয় না তা স্বীকার করবেন অকপটে। মহাছড়ানো এই মহাসংক্রমণকে মহাপ্রস্থানের পথ দেখানোর সেটা এক যুক্তিযুক্ত পথ বৈকি।


(লেখক ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক, মতামত ব্যক্তিগত।)

অন্য বিষয়গুলি:

Corona COVID-19 Coronavirus in India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy