কলকাতার একটি মণ্ডপে ভিড় করেছেন হাজার হাজার মানুষ। ছবি: সংগৃহীত।
গল্প-১
তখন সবে বেহালা নাম করছে। নতুন শতকে কলকাতার পুজোর চমক সৃষ্টি, সহযাত্রী, জনকল্যাণ, তপোবনের পুজোগুলি। নিউ আলিপুর স্টেশন লাগোয়া এমনই একটা পুজো উঠে এসেছিল সেই আবহে। আমার ছোটকাকা থাকতেন কালীঘাট স্টেশন(কাগজকলমে কালীঘাট হলে কী হবে, জায়গাটা আদতে নিউ আলিপুর) সংলগ্ন এলআইসি কর্মী আবাসনে। বিকেলে বেহালা যাওয়ার পথে থামলাম কাকার বাড়িতে। একটি যুবক সেখানে এলেন সঙ্গীদের নিয়ে। ওঁরা এলআইসির মাঠে পুজো করছেন। থিম পুজো। কিন্তু সেই পুজোর কথা কেউ তেমন জানে না। বড় রাস্তা দিয়ে বেহালায় যায় জনস্রোত। ওই ছোট পুজোটা ভাবে— কবে ওই মানুষগুলি আছড়ে পড়বে তাদের মণ্ডপে। সেটা আর হয় না।
সেই যুবক তখন এলাকার বিরোধী দলের কাউন্সিলর। আমাকে জোর করে ধরে নিয়ে গেলেন ওঁদের ‘বারদী গ্রাম’দেখাতে। সে বার ওটাই ছিল সেই পুজোর থিম। মাঠের মাঝে কাটা হয়েছিল একটা পুকুর। তাতে ছাড়া হয়েছিল জ্যান্ত মাছ। অতি উৎসাহে সেই যুবকের কোনও এক বন্ধু পুকুরে ছেড়েছিল পাঁচ কেজি ওজনের এক কাতলা মাছ। বেচারি মাছটা বাঁচেনি।
কিন্তু কংক্রিটের জঙ্গল হতে শুরু করা কলকাতায় একটা গ্রাম আনার চেষ্টা করে বেঁচে গেল ছোট্ট ওই পুজোটা। নবমী থেকেই ‘লক্ষ্মী’র পদধূলি নিউ আলিপুরের ওই পুজোয়। সৌজন্যে আনন্দবাজার পত্রিকা। এর পর থেমে থাকেনি সুরুচি সংঘ।
গল্প-২
উত্তর কলকাতার একটি গলি। উত্তর কলকাতার অন্য গলিগুলি থেকে একটু চওড়া। দুই দিকে দু’টি ট্রাম রাস্তা। দু’টি রাস্তাই উত্তরের লাইফলাইন।
ওই গলির ফুটপাথ ঘেঁষে হঠাৎই মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে একটি প্রাচীন বটগাছ। তার গায়ে সিঁদুর মাখা মায়ের থান। সিঁদুর মাখা পাথরের মাঝে পাথরের দেবী। দেবী মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ল দিকে দিকে। উত্তর কলকাতার ওই গলিতে মানুষ আসছে তো আসছেই। মায়ের থানের ওই সিঁদুর নিজেদের কপালে লাগানোর জন্য পড়ে গেল হুড়োহুড়ি।
এটা কোনও অলৌকিক ঘটনা নয়। ওই দেবীর থান আসলে পুজোমণ্ডপ। গাছটাও শিল্পীর হাতের কারসাজি। দক্ষিণ কলকাতায় তখন থিমের পুজোর রমরমা শুরু হয়ে গিয়েছে। উত্তর সাবেকি পুজো থেকে থেকে বেরোব-বেরোব করছে। ইচ্ছে আছে। কিন্তু সাহসে কুলোচ্ছে না। কুমোরটুলিতে বেড়ে ওঠা এক নবীন শিল্পীর হাত ধরে ওই ‘গণেশজননী’ দিয়ে ঐতিহ্য ভেঙে বেরিয়ে এল হাতিবাগান সর্বজনীন। সালটা ১৯৯৮।
উত্তরে তৈরি হল পুজোর নতুন সংস্কৃতি। পরের বছরই দেখা গেল ঐতিহ্যের আগল ভেঙে বেরিয়ে এসেছে আরও অনেক পুজো। হাতিবাগান এলাকাতেই ওই রাস্তা ধরল নলিন সরকার স্ট্রিট, নবীনপল্লি, শিকদার বাগান , কাশী বোস সর্বজনীন। তার পর একে একে সবাই। ‘লক্ষ্মী’এখন বেঁধে রেখেছে ওই সব পুজো।
দুই দশক আগে জগৎ মুখার্জি পার্কে মূর্তির গড়নে প্রথা ভাঙার কাজটা শুরু হলেও, বাকিরা সাহস করে এগিয়ে আসেনি। এ বার সেই আগল গেল ভেঙে।
ওই রীতিভাঙার বছর কলকাতার পুজোকে উপহার দিল সনাতন দিন্দা। ছোটবেলায় কুমোরটুলিতে অবাক হয়ে শিল্পী অশোক গুপ্তের কাজ দেখত সনাতন। অশোকবাবুর আঙুলের ম্যাজিক তাকে মুগ্ধ করেছিল। বার বার প্রচলিত রীতি ভেঙে নিজস্ব কায়দায় মূর্তি গড়া দেখতে দেখতে বড় হয়ে শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখত সনাতন। সেই আশা পূর্ণ হয়েছে। সনাতন গুরুকে ভোলেননি।
গল্প-৩
ছেলেটার খুব অভিমান ছিল।
ছেলে বলাই ভাল। ছেলেমানুষ না হলে কারও এত অভিমান থাকে? দক্ষিণের দুর্গাপুর ব্রিজের এ দিকে চেতলা। ও দিকে নিউ আলিপুর।
নিউ আলিপুরের এক তরুণ তুর্কি নেতার প্রায় সমবয়সি ব্রিজের উত্তর দিকে আর এক তুর্কি নেতাও পুজো করতেন।সেটাও মাঠের পুজো। বড় রাস্তার প্রায় লাগোয়া । ও পারের মতো এ পারের পুজোতেও কিন্তু খরচ কম হত না। কিন্তু লক্ষ্মী মিলত না। ও পারের পুজোয় যাওয়ার জন্য সারিবদ্ধ গাড়িগুলি এ পারের ছেলেটার পুজোর কাছে ক্বচিৎ-কদাচিৎ দাঁড়াত।ওখানকার পুজোটা তখন সুপারহিট। আর এ পারের পুজোর খ্যাতি তখনও হয়নি। প্রচারের আলোও ছুঁতে পারেনি ওই পুজোটাকে।
আমি তখন ও পারের পুজোয় প্রস্তুতি পর্ব থেকেই যুক্ত থাকতাম। শুধু আমি কেন, সঙ্গী থাকত আমার স্ত্রী-ও। যাওয়া কিংবা ফেরা— কোনও একটা সময়ে এ পাড়ার পুজোর নির্মীয়মাণ প্যান্ডেলের ধার ঘেঁষে যেতাম। নামিনি কখনও।
এ পারের ছেলেটা তখন কাউন্সিলর হয়েছে। সে কিন্তু কখনও তার পুজো নিয়ে আমাকে কিছু লিখতে বলেনি। একবার তখনকার এক নামী শিল্পী ওর মণ্ডপ করছেন শুনে কৌতূহল হল। নেমে পড়লাম গাড়ি থেকে। অনাহূতের মতো এগিয়ে গেলাম। মণ্ডপের মুখে এ পারের ওই ছেলেটার সঙ্গে দেখা। ছেলেটি কী করবে, ভেবে পাচ্ছিল না। আমি তো মণ্ডপ দেখে হাঁ। শিল্পীর উপরে ভরসা করে বসে আছে। জলের মতো টাকা যাচ্ছে। কিন্তু না, মণ্ডপ তো মনের মতো হচ্ছে না। শিল্পী মণ্ডপের নকশা করেন, আবার প্রতিমাও গড়েন। ও পাড়ায় বছর দুয়েক আগে জিতে নিয়েছেন প্রায় সব পুরস্কার। কিন্তু এখানে এ অবস্থা কেন?
বললাম, ‘‘তোকে ভালমানুষ পেয়ে ঠকাচ্ছে ।’’
আর সেটাই শুরু। চেতলা অগ্রণীতে ‘লক্ষ্মী’র আসন পাকা হয়ে গেল।
পুজোর ‘লক্ষ্মী’
আকাশ ভেঙে নেমেছে বৃষ্টি। জল থৈ থৈ সব রাস্তা। একটা ছাতা। তাঁর নীচে দু’জন। বৃষ্টির ছাঁট ভিজিয়ে দিয়েছে। শাড়ি, সালোয়ার ভিজে সপসপে। জুতো ভিজে চিমসে হয়ে গিয়েছে। তা হলে কি এ বার বাড়ি ফিরে যাবেন ওঁরা?
দুর্যোগে বাস থমকে গিয়েছে। কিংবা যানজটে এগোচ্ছে না যানবাহন। তাতে বয়েই গেল পুজোর দর্শনার্থীদের। রাস্তার দুই ধারে শুধু কালো কালো মাথা। ওই কালো মাথাগুলিএগিয়ে চলেছে। রাত যত বাড়ে, বাড়ে মাথার সংখ্যা। কলকাতা তখন এক অন্য শহর। দিনেও জাগে। রাতেও জাগে।
ওঁদের নাম কলকাতার পুজোর দর্শক। ভাঙবেন তবু মচকাবেন না। অন্তত এই একটা সময়ে বাঙালি তার প্রত্যয় দেখায় বারংবার। কলকাতার পুজোয় সব আয়োজন তো ওই তাঁদের জন্যই। ওঁরাই যে পুজোর লক্ষ্মী।
আমাদের ছোটবেলায় কালীঘাটের এই পুজোটা দেখব বলে একবার ছোটমাসির সঙ্গে সন্ধ্যা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ঠাকুর দেখে ফিরে এসেছিলাম মামাবাড়িতে। সে দিন রাতে আর কোনও ঠাকুর দেখা হয়নি। কয়েক বছর আগে অষ্টমী পুজোর রাতে দেখেছিলাম জনস্রোত ঘুরে গিয়েছে চেতলা, মুদিয়ালির দিকে।আর ছোটবেলায় যে পুজোর প্রতিমা দেখার জন্য গোটা সন্ধ্যাটা নষ্ট করেছিলাম, সেখানকার উদ্যোক্তারা দেখি মাছি তাড়াচ্ছেন। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রো়ডের ভিড়টা পশ্চিম থেকে সরে গিয়েছে পূর্বে।
ঢাকুরিয়া-সেলিমপুরের দিকটায় বছর ১৫-১৬ আগে একসঙ্গে অনেকগুলি থিম পুজো পর পর গজিয়ে উঠেছিল। রেললাইন পেরিয়ে পূর্ব দিকেও বেশ ক’টা পুজো শিরোনামে উঠে এসেছিল। তখন পুরনো একতলা দোতলা বাড়ি ভেঙে বহুতল হওয়া শুরু হয়েছে। ফাঁকা জমিতে মাথা তুলছে আবাসন। ছেলেদের খেলার মাঠ ঘিরে প্রথমে উঠছে দেওয়াল। কিছু দিনের মধ্যেই দৃশ্যপট আমূল বদলে যাচ্ছে। বাংলার এক মহাপুরুষের এক অমোঘ বাণীর (টাকা মাটি, মাটি টাকা) অন্য বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। কাঁচা টাকা আর রাজনৈতিকপ্রতিপত্তি সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই রকম কিছু মানুষের পৃষ্ঠপোষকতায় কলকাতার ‘থিম’পুজো শহরের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিস্তৃত হল শহরতলিতে। শহরের পুজোতেও তার প্রভাব পড়ল। যাঁরা বউয়ের গয়না বন্ধক দিয়ে, নিজের ব্যবসার পুঁজি ভেঙে পুজোর উৎকর্ষ বাড়িয়েছেন, তাঁদের অনেককেই ‘পর্দার আড়ালে’ চলেযেতে হল। এমনই এক পুজো সংগঠক দুঃখ করে বলছিলেন, ‘‘আত্মসম্মান বাঁচিয়ে থাকতেপারছিলাম না। মনে হচ্ছিল ক্রমশ খাদের কিনারে চলে যাচ্ছি।’’
দু’হাজার সালের আগের আর পরের পুজোর মধ্যে ফারাকটা কিন্তু অনেক। পুজোর জাঁক-জমক, ঠাঁটবাট দুটোই বেড়েছে। আগে পাড়ার লোকেরা পুজো করতেন নিজেদের নির্ভেজাল আনন্দের জন্য। সেই ধারণাটা বদলে গেল।এখন পুরোপুরি লক্ষ্মীলাভের পুজো। প্রথম লক্ষ্মী মুদ্রা। আর দ্বিতীয়টি দর্শনার্থী। পাড়ার পুজোএখন আর ‘নিজেদের’ নয়। এত সাজসজ্জা শুধু ‘লক্ষ্মী’দের জন্য। মণ্ডপে কাতারে কাতারে মানুষ। ভাড়া করা নিরাপত্তারক্ষী ভিড় সামলাচ্ছেন।যে পাড়ার পুজো, সেখানকার মানুষের কাছে পুজোমণ্ডপ আর নিজের নয়। নিজের বাড়িতে ঢুকতে-বেরোতে গেলেও লাগে পরিচয়পত্র। অঞ্জলি দিতে নিতে হয় ছাড়পত্র (পড়ুন প্রবেশপত্র)। এ যেন নিজভূমে পরবাসী।
আসলে পুজোর চার দিন পাড়ার মানুষের ভোগান্তি যত বাড়বে, ততই সেই পুজোর সাফল্য। দুই লক্ষ্মীর সম্পর্কটা আবার সমানুপাতিক। যত‘ফুটফল’ (দর্শকসংখ্যার কর্পোরেট প্রতিশব্দ), তত ব্যানার, হোর্ডিং, স্টল মেলার সম্ভাবনা। বছর কুড়ি আগের এক দৃশ্যের কথা মনে পড়ে গেল। এক কর্পোরেট কর্তার ঘরে বসে আছি। এক পুজোকর্তা এলেন। সঙ্গে একটি সিডি। পুজোর জন্য স্পন্সরশিপ চাই। সিডিটা প্রাণভোমরা। কী আছে সিডিতে? ষষ্ঠীর রাত থেকে নবমীর রাতে মণ্ডপে দর্শক সমাগম কত হয়েছে, তার চলমান দৃশ্য। সে সময় অবশ্য ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় পুজোর উদ্বোধন হত। দশমীর রাতে ভাসান। ইলাস্টিকের মতো পুজোকে আগেপিছে টেনে ১০ দিন করা হয়নি। চার দিয়ে যেমন মাছ ধরে, তেমনই দর্শকের স্রোত দেখিয়ে পুঁজি আনার চেষ্টা আরও সরলীকরণ করলে দাঁড়ায়, ‘লক্ষ্মী’দেখিয়ে‘লক্ষ্মী’লাভ।
ওই সময় যে সব পুজোকর্তা কর্পোরেটদের কাছে পুঁজি সংগ্রহ করতে যেতেন, তাঁদের কেউ কেউ যে কোনও বড় সংস্থার জনসংযোগ আধিকারিক কিংবা ম্যানেজমেন্ট গুরুকে অনায়াসে ১০ গোল দিতে পারতেন খেলিয়ে পাড়ে তোলার দক্ষতার নিরিখে। রাজনৈতিক নেতারা পুজোর দখল নিতে শুরু করার পরে এই মেধার অপমৃত্যু ঘটল অচিরেই। তবে যে সব পুজোর ভৌগোলিক অবস্থান দর্শনার্থীদের নিরিখে সুবিধাজনক,সেখানে কর্পোরেট সংস্থারা আগে থেকেই ইট পেতে রাখে।
২০২০ সালটায় অতিমারির বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা, মানুষের মনে আতঙ্কে প্রথম লক্ষ্মীকে ঘরবন্দি করে রেখেছিল। প্রথম লক্ষ্মীর অভাবে দ্বিতীয় লক্ষ্মীও মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু পুজো উদ্যোক্তাদের দমানো যায়নি।
কলকাতার পুজোয় যাঁরা সারা রাত ধরে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে ঠাকুর দেখেন তাঁদের কি কোনও শৃঙ্খলে বেঁধে রাখা সম্ভব? যাঁরা হাঁটুসমান জল ঠেলে, ভিজে সপসপে জামা পরে কাঁপতে কাঁপতে মণ্ডপে ঢোকেন, তাঁদের জন্য সোশ্যাল ডিস্টান্সিং তো সোনার পাথরবাটি। ২০২০ তা বুঝিয়ে দিয়েছে।
একটা সময় আনন্দবাজার পত্রিকায় কোন মণ্ডপে কত ভিড়, তা ঘড়ির কাঁটা দিয়ে বোঝাতাম। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর অন্তর ঘড়ির কাঁটা ঘুরত। ওই ভিড়ের লড়াইয়ে যারা এগিয়ে থাকত, পর দিন সকাল থেকেই সেই সব মণ্ডপে আছড়ে পড়ত ভিড়। ঘড়ির কাঁটায় নাম তোলার জন্য পুজো কমিটিগুলির আকুতি দেখেছি। ঘড়ির কাঁটার ছবি সম্বলিত কাগজের কাটিং নিয়ে তারা হাজির হত স্পনসরের দরবারে। পরের বারের পুজোর জন্য। আর পুজো কমিটির চাপে আমাদের দু’টি ঘড়ি ছাপতে হত। একটা কলকাতা পুলিশের এলাকার জন্য। অন্যটা কলকাতা লাগোয়া রাজ্য পুলিশের এলাকার জন্য। কসবা, ঢাকুরিয়া, যাদবপুর, বেহালা এলাকা সেই সময় কিন্তু ছিল জেলা পুলিশের অন্তর্গত।
‘লক্ষ্মীছাড়া’
‘লক্ষ্মী’একবার ছেড়ে গেলে সেই পুজোর কী দশা হয়, তা তো আমার নিজের চোখে দেখা।
আমরা আনন্দবাজার পত্রিকায় যেমন ঘড়ি বানাতাম, তেমনই পুজোর দিন তিনেক আগে থেকে আমরা বাছাই করা পুজোর গ্রাফিক্যাল নকশা ছাপতাম- ‘কোথায় যাবেন, কী ভাবে যাবেন’। একবার নতুন এক রিপোর্টার উত্তেজিত হয়ে আমাকে ফোন করেছিল পুজোমণ্ডপের সামনে থেকে, ‘‘দেবদূতদা আমাদের কাগজের নকশা দেখে মানুষ মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরছে। আপনার ফর্মুলা একেবারে নিখুঁত।’’ আমার এখনও মনে আছে, কসবা থেকে সন্তোষপুর বা সন্তোষপুর থেকে কসবা মানুষ ঠাকুর দেখতে দেখতে কোন পথ ধরে যাবে। তাতে মানুষকে আমরা রামলাল বাজারের মণ্ডপ ঘুরে যেতে বলতাম। ওই এলাকায়এই পুজোটা ঘুরে যেতেই হত। বড় বড় শিল্পীরা সেখানে মণ্ডপ ও ঠাকুর তৈরি করতেন। থিম পুজোয় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছিল পুজোটা। সারা রাত মানুষ আছড়ে পড়ত মণ্ডপে। সব দোকান থাকত খোলা। ফুচকা, আইসক্রিম, ঝালমুড়ি , বেলুন— ব্যবসা হত সবেরই। ২০১২তে পুজোটি দখল করে নিল শাসকদল। যাঁরাপকেটের পয়সা খরচ করে, দিনরাত এক করে পুজোটা করতেন, তাঁদের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেল। পুজোটা সেঁধিয়ে গেল ক্লাবঘরের ভিতরে।
এ বার অষ্টমীর রাতে এক জনকে রামলাল বাজারের সেই মণ্ডপের সামনে নামাতে গিয়েছিলাম। দেখলাম ক্লাবঘরের মধ্যে টিমটিম করে জ্বলছে আলো। ভিতরে চাদরমুড়ি দিয়ে শুয়ে আছেন দু’জন। বাইরে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে দুটি সারমেয়।
আমি পুজো পাগল। মনটা হু-হু করে উঠল। চালককে বললাম, ‘গাড়ি ঘুরিয়ে নিন চটপট। এই ‘লক্ষ্মীছাড়া’ জায়গায় আর এক মুহূর্তও নয়।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy