Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Editorial News

ভয়ঙ্কর অপদার্থ সরকার! মাসুল চোকাচ্ছেন সাধারণ নাগরিক

কারও বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল, সে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, অপরাধী গ্রেফতার হয়েছে। এর জন্য এত বড় সংঘর্ষ হবে, হিংসার আগুন এ ভাবে লকলকিয়ে উঠবে, এত মানুষের মৃত্যু হবে এক দিনে, এই বিপুল পরিমাণ সম্পত্তিহানি হবে! বিস্ময়ের ঘোর কাটতে চাইছে না কিছুতেই। ডেরা সচ্চা সৌদা প্রধানের বিরুদ্ধে যদি যায় মামলার রায়, অশান্তি করতে পারেন ডেরা অনুগামীরা— এ খবর তো গোটা দেশ জানত।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৭ ০৫:৪০
Share: Save:

অপদার্থতা, না নির্লিপ্তি, না অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস? কী বলা যাবে হরিয়ানা সরকারের এই চরম ব্যর্থতাকে? যে নামেই ডাকা হোক, হরিয়ানা সরকারের চরম অপারগতা, অদূরদর্শিতা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতার ছবিটাতে অবশ্য কোনও তারতম্য হবে না। গুরমিত রাম রহিম সিংহকে বিশেষ সিবিআই আদালত ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত করতেই প্রায় গোটা হরিয়ানা যে ভাবে নৈরাজ্যের কবলে চলে গেল, যে ভাবে দীর্ঘ ক্ষণের জন্য আইনের শাসন মুছে ফেলে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হল রাজ্যটা, তার দায় ডেরা সচ্চা সৌদা অনুগামীদের যতটা, হরিয়ানা প্রশাসনেরও ততটাই। আগুন পঞ্জাবেও জ্বলেছে প্রবল ভাবে, দিল্লিতেও ছড়িয়েছে কিছুটা। কিন্তু হরিয়ানায় শুক্রবার যেন যাবতীয় নজির ভেঙে গিয়েছে।

কারও বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল, সে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, অপরাধী গ্রেফতার হয়েছে। এর জন্য এত বড় সংঘর্ষ হবে, হিংসার আগুন এ ভাবে লকলকিয়ে উঠবে, এত মানুষের মৃত্যু হবে এক দিনে, এই বিপুল পরিমাণ সম্পত্তিহানি হবে! বিস্ময়ের ঘোর কাটতে চাইছে না কিছুতেই। ডেরা সচ্চা সৌদা প্রধানের বিরুদ্ধে যদি যায় মামলার রায়, অশান্তি করতে পারেন ডেরা অনুগামীরা— এ খবর তো গোটা দেশ জানত। এটুকু জানার জন্য তো গোয়েন্দা তথ্যের প্রয়োজনও পড়ে না। তা হলে দু’দিন, তিন দিন, চার দিন, পাঁচ দিন ধরে ডেরা অনুগামীদের কেন ঢুকতে দেওয়া হল পঞ্চকুলায়? বাস পরিষেবা নাকি আটকে দেওয়া হয়েছিল, হোটেলে হোটেলে নাকি নজরদারি চলছিল, একটা গোটা স্টেডিয়ামকে নাকি অস্থায়ী কারাগারে রূপান্তরিত করা হয়েছিল, পুলিশ নাকি রাস্তায় রাস্তায় ফ্ল্যাগ মার্চ করছিল। এত করেও লক্ষ লক্ষ ডেরা অনুগামীর পঞ্চকুলা প্রবেশ আটকানো গেল না? এত করেও এই ভয়ঙ্কর হিংসা দেখতে হল? এত করেও এই বিপুল সংখ্যক এবং অকারণ প্রাণহানি দেখতে হল? প্রশাসন কতটা অপদার্থ এবং অকর্মণ্য হলে এই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে কোনও রাজ্যে, সে কথা বোধের পরিসরে আসছে না।

ডেরা সচ্চা সৌদার অনুগামীদের কি যথেচ্ছাচারে মেতে ওঠার সুযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে করে দেওয়া হল? এই প্রশ্নও কিন্তু উঠছে। রাম রহিমের অনুগামীর সংখ্যা পাঁচ কোটির আশপাশে। এই বিপুল সংখ্যক অনুগামীর রাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দের উপরেও ডেরা প্রধানের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই। তাই প্রত্যেক নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো ডেরা প্রধানের সমর্থনের কাঙাল হয়ে ওঠে এবং প্রত্যেক নির্বাচনেই ডেরা প্রধান কোনও না কোনও দলের প্রতি নিজের সমর্থন ব্যক্ত করেন। গত কয়েক বছরে একের পর এক নির্বাচনে কিন্তু বাবা রাম রহিমের সমর্থন বিজেপি তথা এনডিএ-র দিকেই যাচ্ছিল। সেই কৃতজ্ঞতার মূল্য চোকাতেই কি রাম রহিমের অনুগামীদের প্রতি প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় ছিল মনোহরলাল খট্টরের? অবধারিত ভাবে এই প্রশ্ন সামনে এসে গিয়েছে। কিছু দিন আগে জাঠ বিক্ষোভ হিংসাত্মক হয়ে উঠেছিল হরিয়ানায়। একের পর এক শহরে-জনপদে আগুন জ্বলেছিল, গোটা রাজ্য অচল হয়ে পড়েছিল বেশ কয়েক দিনের জন্য। প্রশাসক হিসাবে খট্টর আদৌ যোগ্য কি না, চর্চা শুরু হয়েছিল তখনই। এ বার দেখা গেল, চর্চা আর সমালোচনাই সার, খট্টরের কিছুই যায়-আসে না, জাঠ বিক্ষোভ থেকে কোনও শিক্ষাই নেননি তিনি।

মনোহরলাল খট্টর শিক্ষা নেবেন কি না, প্রশাসন চালানো শিখবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত তিনিই নিন, তাঁর উপরে কেউ সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবে না। কিন্তু, শুক্রবার হরিয়ানা যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে, তা মুখ্যমন্ত্রীর চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচায়ক। যাঁদের প্রতিনিধি হিসাবে খট্টর আজ চণ্ডীগড়ের মসনদে। তাঁদের নিরাপত্তার প্রতি বিন্দুমাত্র দায়বদ্ধতা খট্টরের থাকবে না, এ মেনে নেওয়া যায় না। যে পরিমাণ প্রাণহানি হয়েছে এবং অকারণে হয়েছে, যে পরিমাণ সম্পত্তিহানি হয়েছে এবং অকারণে হয়েছে, তার দায় পুরোপুরি মুখ্যমন্ত্রী খট্টরকেই নিতে হবে, চোকাতে হবে মাসুলও।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE