পর্বান্তর: পলাশির যুদ্ধ শেষে রবার্ট ক্লাইভ ও মির জাফর। শিল্পী ফ্রান্সিস হেম্যান। সৌজন্য: উইকিমিডিয়া কমন্স।
তিন খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে আ কম্প্রিহেনসিভ হিস্ট্রি অব মডার্ন বেঙ্গল, ১৭০০-১৯৫০। বাংলার ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে যদুনাথ সরকার (১৯৪৮), নরেন্দ্রকৃষ্ণ সিংহ (১৯৭০) ও রমেশচন্দ্র মজুমদারের (১৯৭৮) অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রত্যেক যুগ নতুন প্রজন্মের কাছে, সমসাময়িক জ্ঞানচর্চার আলোকে, কোনও বিশেষ অঞ্চল, ঐতিহাসিক ঘটনা বা ব্যক্তির ইতিহাস-আশ্রিত পুনর্মূল্যায়নের দাবি রাখে। তাই ইতিহাস বার বার লিখিত ও চর্চিত হয়। প্রথিতযশা ইতিহাসবিদ সব্যসাচী ভট্টাচার্য ও এশিয়াটিক সোসাইটির নেতৃত্বে এই উদ্যোগে শামিল হয়েছেন ইতিহাসবিদ, অর্থনীতিবিদ, সমাজতত্ত্ববিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ, প্রত্নতত্ত্ববিদ, নৃবিজ্ঞানী, ভাষাবিদরা। সম্পাদকের মতে, ‘মাল্টিডিসিপ্লিনারি’ গবেষণা অভিমুখই বর্তমান সঙ্কলনটিকে ‘কম্প্রিহেনসিভ’ বা ‘সামগ্রিক’ করে তুলেছে।
আঞ্চলিকতার সংজ্ঞা নির্মাণে ও আঞ্চলিক ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে পেশাগত ইতিহাসবিদের কিছু বাড়তি দায়িত্বের কথা বলেছেন সম্পাদক। বহু সময়ে ইতিহাসের ভাষ্যকে ব্যবহার করে এক ধরনের অন্তর্মুখী আঞ্চলিকতার চেতনা জনমানসে বিস্তার করার চেষ্টা হয়, যা অনেক ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ‘অস্মিতা’ হিসেবেও নিজেকে জাহিরের চেষ্টা করে। কিন্তু ইতিহাসবিদের কাছে ‘অঞ্চল’ কখনওই একটি অপরিবর্তনশীল একক নয়। একটি অঞ্চল তার ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে ইতিহাসের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। ‘অঞ্চল’ ইতিহাস তৈরি করে না, ইতিহাসই ‘অঞ্চল’-এর পরিচিতি তৈরি করে। একটি অঞ্চলের ইতিহাস লেখার প্রচেষ্টার মধ্যে নিহিত থাকে সেই অঞ্চলের সঙ্গে বৃহত্তর পরিমণ্ডলের সংযোগ স্থাপনের প্রয়াস। অঞ্চলের সঙ্গে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইতিহাসের টানাপড়েনের ব্যাখ্যাও তাই আঞ্চলিক ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এই বৃহত্তর আঙ্গিকেই বর্তমান তিন খণ্ড সঙ্কলিত হয়েছে।
আ কম্প্রিহেনসিভ হিস্ট্রি অব মডার্ন
বেঙ্গল, ১৭০০-১৯৫০ (খণ্ড ১, ২ ও ৩)
সম্পা: সব্যসাচী ভট্টাচার্য
৭০০০.০০ (তিন খণ্ড একত্রে)
এশিয়াটিক সোসাইটি কলকাতা, প্রাইমাস বুকস
যদি বিষয়ভিত্তিক আঙ্গিকে বইটির প্রবন্ধগুলির উপর আলোকপাত করি, তা হলে কী দেখব? অষ্টাদশ শতকে কী ভাবে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলি অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির ঘাঁটি বাংলায় গড়ে তুলেছিল, তার বিশ্লেষণ রয়েছে প্রথম খণ্ডে। ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আলোচনা অনিরুদ্ধ রায়ের প্রবন্ধে। সুশীল চৌধুরী বিশ্লেষণ করেছেন বিভিন্ন ইউরোপীয় কোম্পানির বাণিজ্যের ইতিহাস। ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য ও বাজারের কথা পড়ি সুদীপ্ত সেনের প্রবন্ধে। রীলা মুখোপাধ্যায়ের প্রবন্ধে বাংলায় সমুদ্রবাণিজ্যের গোড়াপত্তনের ইতিহাস ও ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কথা। ইউরোপীয় শক্তির অর্থনৈতিক বিস্তারের সঙ্গে তাদের সামরিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশের কথা পড়ি কৌশিক রায়ের প্রবন্ধে।
শিল্প ও শিল্পচেতনা তুলনায় স্বল্পচর্চিত বিষয়। অশোককুমার দাস রচিত বাংলায় অষ্টাদশ শতাব্দীর শিল্প, এবং রত্নাবলী চট্টোপাধ্যায়ের শিল্পের পৃষ্ঠপোষক ও শিল্পীদের আলোচনা পরস্পরের পরিপূরক। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ও ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয় উঠে এসেছে রঞ্জিত সেনের প্রবন্ধে।
ঔপনিবেশিক শাসন ও সাম্রাজ্যবাদ যখন বলিষ্ঠ পদক্ষেপে বাংলায় তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছিল, বাংলার অন্তরের অন্তঃস্থলে টানাপড়েনে নির্মিত হচ্ছিল এক নতুন অর্থনীতির কাঠামো, সামাজিক বিন্যাস, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় চেতনা। দ্বিতীয় খণ্ডে অমিয়কুমার বাগচী, নারিয়াকি নাকাজ়াতো, অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভীক রায় আলোচনা করেছেন অর্থনৈতিক পরিবর্তনের নানান দিক। বাগচীর গবেষণায় উঠে এসেছে ঔপনিবেশিক শাসনকালে শ্রমজীবী মানুষের কথা। জমির মালিকানা, জমিদার শ্রেণি ও জমি আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন নারিয়াকি নাকাজ়াতো। অষ্টাদশ শতকে পশ্চিমবঙ্গে জমিদার শ্রেণির অবস্থানের আলোচনা করেছেন জন ম্যাকলেন। কৃষক জীবনের পালাবদলের আখ্যান রয়েছে অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখায়।
অর্থনৈতিক পরিবর্তন মূল চালিকাশক্তি, কিন্তু পাল্টাচ্ছিল সামাজিক বিন্যাসও। সেনসাস-এ জনসংখ্যা পরিবর্তনের চিত্র তুলে ধরেছেন শাশ্বত ঘোষ ও গৌরী চক্রবর্তী। অজিতকুমার দন্ডের লেখায় উঠে এসেছে বাংলায় জাতি ব্যবস্থার কথা। প্রশান্ত রায় আলোচনা করেছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণিবিন্যাসের প্রক্রিয়া। মধ্যবিত্তের অপর মেরুতে অবস্থানকারী সাধারণ মানুষের ‘জনমুখী’ (পপুলার) সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা করেছেন সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। তনিকা সরকারের লেখায় উনিশ শতাব্দীতে শহরকেন্দ্রিক বাঙালি হিন্দু নারীদের পরিবর্তনশীল জীবনকথা আলোচিত হয়েছে। সমাজ ও অর্থনীতিতে নারীর অবস্থানের প্রসঙ্গটি আবারও এসেছে তৃতীয় খণ্ডে। শমিতা সেন বলেছেন নারী শ্রমিকদের প্রান্তিকীকরণের কথা। অপরাজিতা সেনগুপ্ত বিশ শতাব্দীর গোড়ায় চিন্তায় ও রাজনীতিতে লিঙ্গসম্পর্কের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা ও পরিবর্তনের রূপরেখার কথা। সোনিয়া আমিন দিয়েছেন বাঙালি মুসলমান ভদ্রমহিলাদের আত্মপ্রকাশের বিবরণ।
অষ্টাদশ শতকে নগরায়ণ ও অবনগরায়ণের প্রক্রিয়া আলোচিত হয়েছে অনিরুদ্ধ রায় ও সৌমিত্র শ্রীমানীর প্রবন্ধে। দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলায় শহরকেন্দ্রিক সামাজিক কাঠামো বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে নগরায়ণের কিছু দিক তুলে ধরেছেন প্রশান্ত রায়, তৃতীয় খণ্ডে। নগরসভ্যতার গোড়াপত্তনের সঙ্গে যুক্ত ছিল আধুনিক সমাজ তৈরির প্রক্রিয়া। সমাজে এক নিয়ন্ত্রক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় আইনের শাসন। মহুয়া সরকার আলোচনা করেছেন ঔপনিবেশিক কাঠামোয় গড়ে ওঠা ‘ন্যায়’-এর ধারণা ও তার প্রাতিষ্ঠানিক ভিত কলিকাতা উচ্চ ন্যায়ালয়ের অন্দরমহলের কথা। ঔপনিবেশিক কাঠামোয় ‘হিন্দু আইন’-এর পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা লিখেছেন নন্দিনী ভট্টাচার্য পান্ডা। ঔপনিবেশিক কালে আর এক নিয়ন্ত্রক শক্তি ছিল পুলিশি ব্যবস্থা। কলকাতা কেন্দ্রিক এই ‘ব্রিটিশ’ পুলিশি ব্যবস্থা কী ভাবে ‘বিদেশ’-এ ‘দেশীয়’ মানুষদের নিয়ন্ত্রণে যুক্ত ছিল, তার বিবরণ মেলে রাজশেখর বসুর লেখায়।
আইন ও পুলিশি শাসনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিল জনমত গঠন ও সাংবাদিকতার জন্ম। স্বপন বসুর লেখায় ধরা পড়েছে এই বিষয়টি। পশ্চিমি চিকিৎসা প্রচলনের মাধ্যমে আধুনিকতার আরও একটি দিক উন্মোচিত হয়, আলোচনা করেছেন সুজাতা মুখোপাধ্যায়। বাংলার আধুনিক হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া থেকে বাদ ছিল না ভাষা ও সাহিত্যের জগৎটিও, যার ছবি তুলে ধরেছেন পবিত্র সরকার।
আধুনিকতার একটি অবশ্যম্ভাবী পরিণতি ছিল মানবসভ্যতা ও প্রকৃতির টানাপড়েন। সুন্দরবন অঞ্চল কী ভাবে তা প্রত্যক্ষ করেছিল তার সূত্র খুঁজেছেন রঞ্জন চক্রবর্তী। ইতিহাসের দীর্ঘমেয়াদি আঙ্গিকে বিষয়টি আলোচনা করেছেন অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে দেশ বা অঞ্চলের ইতিহাস সম্পূর্ণ হয় না। দ্বিতীয় খণ্ডে এমনই কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে লিখেছেন রুস কার্লাইল রবার্টসন (রামমোহন রায়), ব্রায়ান হ্যাচার (বিদ্যাসাগর), রোসিঙ্কা চৌধুরী (ডিরোজ়িয়ো ও ডিরোজ়িয়ানস), বিষ্ণুপ্রিয়া বসাক (এশিয়াটিক সোসাইটি)। উনিশ শতাব্দীর বাংলায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের জ্ঞানচর্চার মিশেলে কী ভাবে এক অন্য আধুনিকতার সংজ্ঞা নির্ণয় হচ্ছিল, তা-ই ফুটে উঠেছে এঁদের লেখায়। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অভিঘাতে পরিবর্তিত হচ্ছিল ‘বাংলা’র ধর্মবোধও। দেখা যাচ্ছিল অস্তিত্বের শিকড় খোঁজার তাগিদ। ‘হিন্দু’ ধর্মের ভিতর এই খোঁজের সন্ধান দিয়েছেন অমিয়প্রসাদ সেন। মুসলমান জনমানসে এই পরিবর্তনের সূত্র অনুসন্ধান করেছেন অমিত দে। অষ্টাদশ শতাব্দীর ইসলাম ধর্মের উপর লিখেছেন রিচার্ড ইটন; শিক্ষিত মুসলমান সমাজের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় চিন্তাজগৎ তুলে ধরেছেন সইদ ইজাজ় হুসেন।
সমাজ-সংস্কৃতি ও অর্থনীতি পরিবর্তনের রূপরেখা নির্মাণ সমসাময়িক গবেষণা-দুনিয়াকে ব্যস্ত রাখলেও কিছু কিছু রাজনৈতিক ঘটনার গুরুত্ব ইতিহাসে উপেক্ষা করা যায় না। তেমনই একটি ঘটনা ১৮৫৭। ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পুনঃপাঠ পাওয়া যায় সুভাষরঞ্জন চক্রবর্তীর লেখায়।
তৃতীয় খণ্ডের মূল বিষয় জাতীয়তাবাদী রাজনীতি ও সংস্কৃতি, জাতি নির্মাণ ও বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর পারস্পরিক সম্পর্কের টানাপড়েন। সুমিত সরকার আলোচনা করেছেন বাংলায় স্বদেশি যুগ, রজতকান্ত রায় ১৯০৫ ও ১৯২৭-এর অন্তর্বর্তিকালীন রাজনীতির ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ১৯১৯-৪৭’এর মধ্যে বাংলার জাতীয়তাবাদী রাজনীতির নানান বাঁকগুলি চিহ্নিত করেছেন। জাতীয় স্তরে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী রাজনীতির উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গে বাংলার প্রান্তিক মানুষজন কী ভাবে তাঁদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলছিলেন ও মধ্যবিত্তের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের সমীকরণ নির্ধারিত করছিলেন, তার বিবরণ দেন বিনয়ভূষণ চৌধুরী তাঁর আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও সংগঠনের বিশ্লেষণে, বিপাশা রাহা তাঁর কৃষক সম্প্রদায় ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির সম্পর্কের ব্যাখ্যায়, নির্বাণ বসু তাঁর শ্রমিক আন্দোলনের ভাষ্যে, ও শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বাংলায় জাতি ও গোষ্ঠীভিত্তিক রাজনীতির আলোচনায়।
বাংলার সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বোঝার জন্য চারটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ একে অপরের পরিপূরক। তাজ়িন মুরশিদের লেখা বাঙালি মুসলমান বৌদ্ধিক শ্রেণির বিবর্তন ও সত্তা বিকাশ বিষয়ক প্রবন্ধটির সঙ্গে যুক্ত করে দেখা যেতে পারে হারুণ অর রশিদের লেখা মুসলিম লীগের রাজনৈতিক উত্থানের আখ্যান ও ভারতভাগ প্রসঙ্গ (১৯৩৭-১৯৪৭) ও সুরঞ্জন দাসের ভারতভাগ ও বাংলায় সাম্প্রদায়িক রাজনীতি (১৯৪০-১৯৪৭) প্রবন্ধ দু’টি। রণজিৎ কুমার ভট্টাচার্য গ্রামবাংলার মুসলমান সম্প্রদায় সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
বিজ্ঞান, সাহিত্য, সঙ্গীত, শিল্প ও পোশাকের বিবর্তনকে উপেক্ষা করে কোনও অঞ্চল, জাতি, দেশ বা গোষ্ঠীর ইতিহাস সম্পূর্ণ হয় না। তৃতীয় খণ্ডে এই বিষয়গুলির উপর লিখেছেন দীপককুমার (বিজ্ঞান), অনুরাধা রায় (বাংলা সাহিত্য), দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায় (মঞ্চাভিনয় ও সঙ্গীত), আর শিবকুমার (শিল্প) ও চিত্ত পান্ডা (পোশাক পরিচ্ছদ)। বাংলার ইতিহাস গড়ার ক্ষেত্রে অন্য ভাষাভাষী মানুষদের অবদান অনস্বীকার্য। এই বিষয়ে হিতেন্দ্রনাথ পটেল হিন্দিভাষী মানুষজনের আলোচনা করেছেন।
সব শেষে উল্লেখ করা প্রয়োজন বর্তমান সঙ্কলনটির একটি বিশিষ্টতা। প্রতিটি কাল বা দশক সৃষ্টি করে তাদের নিজ নিজ ইতিহাসবিদ, তাঁরাই ইতিহাসের নিগড় থেকে খুঁজে নিতে চান বর্তমান জিজ্ঞাসার উত্তর। সরকার, মজুমদার ও সিংহ অনুসন্ধান করে নিতে চেয়েছিলেন তাঁদের সমকালীন ঐতিহাসিক প্রশ্নের উত্তর। ব্যবহার করেছিলেন সমকালীন ইতিহাস গবেষণার পদ্ধতি। বর্তমান সঙ্কলনটিও ইতিহাসচর্চার একটি বিশেষ সময়ের ধারারই প্রতিনিধিত্ব করেছে। ১৯৭০, ’৮০ ও ’৯০-এর দশকে ইতিহাস চর্চার ধারা অনুসরণ করেই প্রবন্ধগুলি রচিত হয়েছে। কিছু নতুন বিষয় অবশ্যই যুক্ত হয়েছে এখানে, তবে কিনা এই সব একত্র করে বাংলার ইতিহাসের এক নতুন ভাষ্য রচনার কাজ— যার ইঙ্গিত সম্পাদকের ভূমিকায় পাওয়া গিয়েছিল— তা কিন্তু অনেকাংশেই পরিণতি পায়নি। বাংলার ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে তথ্যের নতুন বিন্যাস, নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ ও ‘আঞ্চলিক’ ইতিহাসের অভ্যন্তরীণ ধারার বাঁকগুলিকে চিনে নিয়ে নতুন কালক্রম সৃষ্টির কাজ তাই অনেকটাই অধরা রয়ে গেল। এ ছাড়া একটি অঞ্চলের ভৌগোলিক সীমানা ও তার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেই অঞ্চলের নির্দিষ্ট সত্তা গড়ে ওঠে কী ভাবে, তার উপাদানগুলিই বা কী কী, সেই নির্মীয়মাণ সত্তার রাজনীতিকরণই বা হয় কী ভাবে, সেই সব বিশ্লেষণের ধারাকে সমৃদ্ধ করার দায়িত্ব রইল পরবর্তী প্রজন্মের হাতে। বাংলার ইতিহাসের সেই পুনর্মূল্যায়নের কাজে সাহায্য করবে অমিয় কুমার বল সম্পাদিত ১৯৭০ থেকে বর্তমান সময় অবধি বাংলার উপর গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ ও পুস্তকের তালিকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy