তেলের দাম আর আনুষঙ্গিক খরচ যেখানে পৌঁছেছে, তাতে এখনই ভাড়া না-বাড়ালে রাস্তায় ট্যাক্সি নামানোই মুশকিল বলে দাবি করছেন মালিকেরা। এ নিয়ে বিক্ষোভ-ধর্মঘটও হচ্ছে প্রায়ই। কিন্তু আগাম ট্যাক্সি বুকিং পরিষেবা দেওয়া সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, শুধু ভাড়া বাড়ালেই সমস্যা মিটবে না। এর সমাধান বরং লুকিয়ে রয়েছে ট্যাক্সি খালি থাকাকালীন তার দৌড় কমানোর মধ্যে। তাদের মতে, এক যাত্রীকে ছেড়ে কোনও ট্যাক্সি যত দ্রুত, যত কাছাকাছি নতুন যাত্রী তুলবে, তত কমবে তার খরচ। সম্ভব হবে কাঙ্ক্ষিত মুনাফার মুখ দেখা। সেই কারণে এলাকায় ট্যাক্সি খোঁজা যাত্রী আর যাত্রী খোঁজা ট্যাক্সিকে পরষ্পরের সঙ্গে ‘দেখা করিয়ে দেওয়া’র বাজারকেই পাখির চোখ করছে সিওর ট্যাক্সি।
আগে থেকে ফোন করে কিংবা ইন্টারনেটে যে-সব মিটার-ট্যাক্সি (যেমন, মেগা ক্যাব) বুক করা যায়, তাদের দু’টি সুবিধা রয়েছে। প্রথমত সেগুলির ভাড়া সাধারণ ট্যাক্সির তুলনায় অনেকটাই বেশি। আর দ্বিতীয়ত, ওই সব সংস্থা সব সময়েই চেষ্টা করে কেউ বুক করলে, সবচেয়ে কাছে থাকা ট্যাক্সিকে তার কাছে পাঠানোর। যাতে খালি থাকা অবস্থায় গাড়ি কম দৌড়য়। রাশ টানা যায় খরচে। কিন্তু সাধারণ ট্যাক্সির সেই সুবিধা নেই। তাই এক বার যাত্রী খালি করে নতুন করে কাউকে পেতে ধীরে ধীরে তার চাকা গড়াতে থাকে, নয়তো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সিওর ট্যাক্সির ব্যবসার ভিত এই সমস্যার সমাধানই।
সংস্থার কর্তা পিট পুডাইটের দাবি, “অনেক সময়েই দেখা যায় হয়তো কেউ ট্যাক্সির খোঁজে হন্যে। অথচ তাঁর সঙ্গে দেখা না-হওয়ায় ওখান থেকেই খালি ফিরতে হচ্ছে কোনও ট্যাক্সিকে। আমাদের কাজ, দু’তরফের দেখা করিয়ে দেওয়া। তাই ট্যাক্সির চাহিদা কেউ ফোন করে জানালে, তখন ওই অঞ্চলে থাকা আমাদের নথিভুক্ত ট্যাক্সিকে তা জানিয়ে দেব। এতে যাত্রীর যেমন সুবিধা, তেমনই খালি আসতে হবে না ট্যাক্সিকেও।”
কিন্তু ট্যাক্সির খালি দৌড় কমানো এত জরুরি কেন? পিটের হিসাব, এখন কলকাতায় প্রতি কিলোমিটারে সাধারণ ট্যাক্সির ভাড়া ১২ টাকা। অথচ সেখানে পুরনো মডেলের (যা চলতে তুলনায় বেশি তেল লাগে বা যার মাইলেজ কম) ট্যাক্সি চালানোর খরচ কিলোমিটারে প্রায় ৭ টাকা। এ ছাড়াও অন্যান্য গড় দৈনিক খরচ ৪০০ টাকা মতো। শহরে একটি ট্যাক্সি প্রতিদিন গড়ে চলে অন্তত ১২০ কিমি। তার মানে প্রতি কিমিতে মোট খরচ প্রায় ১০.৩০ টাকা। অর্থাৎ, সব সময়ে ভর্তি গাড়ি চালালে, তবেই সেখানে কিছুটা লাভের মুখ দেখা সম্ভব।
কিন্তু সমস্যা হল, গড়ে ওই ১২০ কিমির এক-তৃতীয়াংশই খালি যেতে হয় ট্যাক্সিকে। ফলে যাত্রী থাকাকালীন ৮০ কিমি চলে যেখানে রোজগার ৯৬০ টাকা, সেখানে মোট ১২০ কিমি চলার খরচ ১,২৩৬ টাকা। তার মানে মুনাফা তো দূর অস্ৎ, লোকসানেই চলতে হচ্ছে ট্যাক্সিকে। হয়তো এই ক্ষতি রোজ বা প্রতিটি ট্যাক্সির ক্ষেত্রে হচ্ছে না। কেউ হয়তো নিজে চালানোয় তাঁর খরচ কিছুটা কমছে। কিন্তু হিসাবটা মোটামুটি এ রকমই।
নতুন মডেলের ট্যাক্সির অবস্থাও তথৈবচ। মূলত মাইলেজ বেশি হওয়ায় তারা হয়তো সামান্য লাভের মুখ দেখতে পায়। কিন্তু তা চোখে পড়ার মতো নয়। আর সে কারণেই পিট মনে করেন, প্রত্যাশা মাফিক লাভ করতে হলে, খালি থাকাকালীন দৌড় কমাতেই হবে। নইলে ভাড়া এতটাই বাড়াতে হবে যে, তাতে যাত্রী কমবে। অতখানি ভাড়া বাড়ানো রাজ্য সরকারের পক্ষেও সম্ভব কি না, তা নিয়ে সন্দিহান তিনি। বিশেষত যেখানে অন্য মেট্রো শহরে ভাড়া অত চড়া নয়।
ব্যবসার এই ধাঁচে সমস্যা যে-নেই, তা নয়। যেমন, কোনও বুক হয়ে যাওয়া ট্যাক্সি যাত্রীকে আনতে যাওয়ার সময়ে অন্য কাউকে নিতে না-চাইলে পুলিশি ঝামেলায় পড়তে পারে। উঠতে পারে যাত্রী প্রত্যাখানের অভিযোগ। তাই পিট মনে করেন, প্রশাসন এ জন্য আলাদা বন্দোবস্ত না-করলে, আগাম বুকিং পরিষেবা বিপর্যস্ত হতে পারে। যে-কারণে মুম্বইয়ে মিটারেও আগাম বুকিংয়ের ছাড়পত্র দিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার। এই পরিষেবায় যুক্ত আর এক সংস্থা বুকমাইক্যাব-ও সম্প্রতি কলকাতায় পরিষেবা চালু করতে এসে এই ছাড়পত্রের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিল।
পিটের ধারণা, পরিষেবা জনপ্রিয় হলে এই সব সমস্যা ধাপে ধাপে মিটবে। তবে এ জন্য কোনও দিনই রাস্তায় হাত দেখিয়ে দাঁড় করানো ট্যাক্সির অভাব হবে না বলে নিশ্চিত তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy