এ বার কলকাতায় এল বিপদে পড়লে ভরসার মানুষের মোবাইলে বার্তা পাঠানোর যন্ত্র ‘নির্ভয়া’।
দেশলাই বাক্সের মতো ছোট্ট এই গোলাপি যন্ত্রে চাপ দিলেই বিপদ-বার্তা পৌঁছে যাবে আগে থেকে ঠিক করে রাখা নম্বরে। ‘নির্ভয়া’র সঙ্গে যুক্ত মোবাইলের মাধ্যমে। শুধু তা-ই নয়, যিনি বিপদে পড়েছেন, এই মুহূর্তে তিনি কোথায়, প্রতি মিনিটে এসএমএস মারফত সেই তথ্যও জানাতে থাকবে যন্ত্রটি।
ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারের নক্শা ও প্রযুক্তি অবলম্বনে এই ‘টেলি অ্যালার্ম ডিভাইস’ তৈরি করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইলেকট্রনিক্স কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (ই সি আই এল)। বুধবার কলকাতায় এই যন্ত্র দেখানোর পরে ইসিআইএল কর্তারা জানান, শহরে সংস্থার পূর্বাঞ্চলীয় দফতরে এটি মিলবে। দাম পড়বে প্রায় তিন হাজার টাকা। তাঁদের দাবি, আপাতত শুধু অ্যান্ড্রয়েড ফোনেই এই যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে ঠিকই, কিন্তু শীঘ্রই তা কাজে লাগানো যাবে অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেম নির্ভর মোবাইলে। তবে সব ক্ষেত্রেই থাকতে হবে ব্লু-টুথ।
দিল্লির ধর্ষিত ও নিহত তরুণী ‘নির্ভয়া’র নামে এই যন্ত্রের নামকরণ হলেও, শুধু মহিলারা নন, বিপদে পড়লে তা ব্যবহার করতে পারবেন যে কেউ। তা সে কোনও বয়স্ক মানুষ হোন বা বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতিতে কাজ করা শিল্পকর্মী। সংস্থা জানিয়েছে, ইসিআইএল মূলত শিল্প সংস্থার নিরাপত্তা ব্যবস্থা-সহ নানা যন্ত্র তৈরি করে। সেই প্রয়োজন মাথায় রেখেই এই প্রকল্পের অবতারণা। গত নভেম্বরে মুম্বইয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাজারে আনার পরে কয়েক হাজার যন্ত্র ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়েছে বলেও সিএমডি পি সুধাকরের দাবি।
দেশ জুড়ে ধিক্কার ফেলে দেওয়া নির্ভয়া-কাণ্ডের পরে এ ধরনের পরিষেবা চালুর পরিকল্পনা করেছিল পূর্বতন ইউপিএ সরকার। কিন্তু তা এখনও বিশ বাঁও জলে। অথচ কেন্দ্রের সেই প্রকল্পের সঙ্গে কোনও যোগ না-থাকলেও ই সি আই এলের যন্ত্রটির নামও রাখা হয়েছে ‘নির্ভয়া’। সুধাকরের বক্তব্য, এটির কাজ শুরু হয়েছিল বছর দেড়েক আগেই। তবে নামের মিলের কারণে যে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে, তা মেনে নিচ্ছে সংস্থা।
কী ভাবে কাজ করবে ‘নির্ভয়া’?
ইসিআইএল কর্তারা জানাচ্ছেন, যন্ত্র কেনার সময়েই তার সঙ্গে একটি সিডি পাবেন ক্রেতা। তাতেই থাকবে এই পরিষেবার অ্যাপ্লিকেশন। সেটি প্রথমে কম্পিউটার, ল্যাপটপ ইত্যাদিতে ডাউনলোড করে নিজের সম্পর্কে তথ্য (যেমন, নাম, বয়স, লিঙ্গ, রক্তের গ্রুপ) ও ৫টি মোবাইল নম্বর (যেগুলিতে বিপদ-বার্তা পাঠানো হবে) ভরতে হবে ক্রেতাকে। তারপর সেই তথ্য সম্বলিত অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে আসতে হবে মোবাইল ফোনে। এর পরে মোবাইলের ব্লু-টুথ চালু রেখে তার সঙ্গে যন্ত্রটিকে সংযুক্ত করলেই চালু হয়ে যাবে এই ব্যবস্থা।
সংস্থার দাবি, বিপদে পড়লে যন্ত্রের বোতামে চাপ দিলেই বার্তা পাঠানো শুরু করবে মোবাইল। এই মুহূর্তে বিপদগ্রস্ত কোথায়, জিপিএস মারফত প্রতি মিনিটে তা পৌঁছে যাবে আগে থেকেই ভরে রাখা ওই পাঁচ নম্বরে। সঙ্গে পৌঁছতে থাকবে বয়স, লিঙ্গ, রক্তের গ্রুপ সংক্রান্ত তথ্যও। তবে বার্তা পৌঁছবে ততক্ষণই, যতক্ষণ ব্যাটারির চার্জ আর পয়সা থাকবে মোবাইলে। তার কারণ, এতে এসএমএসের মাসুল ধার্য হবে।
ইসিআইএলের দাবি, এই যন্ত্র পকেটে বা ব্যাগে থাকলে, চট করে কারও নজরে পড়বে না। তা সহজে চালু করাও সম্ভব। ফলে এটি সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য। কিন্তু অনেকের ধারণা, এর কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। যেমন, কোনও কারণে যন্ত্র ও মোবাইলের দূরত্ব বেশ খানিকটা বেড়ে গেলে, ব্লু-টুথ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় তা আর কাজ করবে না। বন্ধ হয়ে যাবে বার্তা পাঠানো। একই অবস্থা হবে আক্রমণকারী মোবাইল কেড়ে নিয়ে তা বন্ধ করে দিলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy