Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ডিজিটাল লেনদেনে এখনও প্রশ্ন সুরক্ষা নিয়ে

হঠাৎ ফোন। অচেনা নম্বর থেকে। ব্যাঙ্কের নাম করে। অ্যাকাউন্ট নম্বর জানিয়ে দাবি তাঁর ডেবিট কার্ডের পিন না-দিলে নাকি এখনই বন্ধ হয়ে যাবে অ্যাকাউন্ট। ঘাবড়ে গিয়ে সাত-পাঁচ না-ভেবেই সব তথ্য দিয়েও দিয়েছিলেন সমীর দাস (নাম পরিবর্তিত)। আধঘণ্টাও কাটেনি। গায়েব তিরিশ হাজার টাকা!

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়, শিবাজী দে সরকার ও দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৪১
Share: Save:

হঠাৎ ফোন। অচেনা নম্বর থেকে। ব্যাঙ্কের নাম করে। অ্যাকাউন্ট নম্বর জানিয়ে দাবি তাঁর ডেবিট কার্ডের পিন না-দিলে নাকি এখনই বন্ধ হয়ে যাবে অ্যাকাউন্ট। ঘাবড়ে গিয়ে সাত-পাঁচ না-ভেবেই সব তথ্য দিয়েও দিয়েছিলেন সমীর দাস (নাম পরিবর্তিত)। আধঘণ্টাও কাটেনি। গায়েব তিরিশ হাজার টাকা!

শুধু সমীরবাবু নন, গত কয়েক মাসে এ ধরনের ফোনের শিকার অনেকে, এমনকী অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং দুঁদে আমলাও। বহু ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে সেই চুরির টাকা সরানো হচ্ছে ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে। আর এখানেই সংশয় দানা বাঁধছে সাইবার সুরক্ষা নিয়ে।

কেন্দ্র বলছে চায়ের দামও নেটে মেটাও। মুঠোর মোবাইলই হোক ব্যাঙ্ক। কিন্তু সেই লেনদেনে নিরাপত্তা ঠিক কতটা, তা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ গোয়েন্দা কর্তাদের কপালে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেট-লেনদেনে নজরদারির পরিকাঠামো পুরোপুরি তৈরি নয়। ফাঁক রয়েছে আইনে। আর এ নিয়ে সে ভাবে সচেতনতাই তৈরি হয়নি। তাই ডিজিটাল লেনদেন লাফিয়ে বাড়ার আগে সাইবার সুরক্ষায় জোর দেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন তাঁরা।

নোট বাতিলের পর ই-ওয়ালেট সংস্থা পে-টিএমের লেনদেন বেড়েছে ৭০০%। তাদের ওয়ালেট-অ্যাকাউন্টে টাকা জমা বেড়েছে ১,০০০%। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নজরদারির এক্তিয়ারে এ ধরনের সংস্থা পড়ে না। গোয়েন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, সাধারণত ওয়ালেট অ্যাকাউন্ট খুলতে পরিচয়পত্র লাগে না। তাই কেউ ভুয়ো নথি দিয়ে মোবাইল সংযোগ নিয়ে এই অ্যাকাউন্ট খুললে, পরে তাকে ধরা শক্ত।

সেই ওয়ালেট ব্যবহার করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরালে সমস্যা আরও বাড়ে। কারণ, কার টাকা কোন অ্যাকাউন্ট ঘুরে কোথায় যাচ্ছে, তার হদিশ পাওয়া কঠিন। লালবাজার সূত্রে খবর, বছর দু’য়েক ধরেই ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ক্ষেত্রে ওয়ালেট অ্যাকাউন্টের ব্যবহার বেড়েছে। সাইবার ক্রাইম অপরাধের তদন্তের সঙ্গে যুক্ত এক কর্তা জানাচ্ছেন, হাতানো টাকা ওয়ালেটর মাধ্যমে বিক্রিরও রেওয়াজ রয়েছে। এলাকার বিভিন্ন ফোন বা ডিটিএইচ রিচার্জের দোকানির ওয়ালেটে ওই টাকা জমা করা হয়। হয়তো জালিয়াতরা ২০ হাজার টাকা জমা করে নগদে নিল ১৬ হাজার টাকা। বাকিটা দোকানি পেলেন ওয়ালেট অ্যাকাউন্টের ‘ভাড়া’ হিসেবে।

কেন্দ্রের কাছে ওয়ালেট সংস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য বার বার দরবার করলেও কাজ হয়নি, অভিযোগ গোয়েন্দা-কর্তার।

সিআইডির এক কর্তার কথায়, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের তথ্য চুরি করে টাকা হাতানোর ঘটনাও হামেশাই ঘটে। দেখা যায়, ভুয়ো নথি দিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে এটিএম কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুলেও নেওয়া হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও ব্যাঙ্কিং শিল্পের অবশ্য দাবি, কার্ডে লেনদেনের ব্যবস্থা সুরক্ষিত।

তারা জানিয়েছে, শীর্ষ ব্যাঙ্কের নির্দেশে গ্রাহকদের ইএমভি চিপযুক্ত কার্ড দেওয়া শুরু হয়েছে। পিছনে কালো ‘ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ’ দেওয়া কার্ডে গ্রাহকের তথ্য ‘এক’ ভাবেই লেখা থাকে। কিন্তু চিপযুক্ত কার্ডে তা থাকে ‘হাজার’ ভাবে। যে-কারণে নতুন কার্ডে তথ্যের ‘কোড’-এর নাগাল পাওয়া কঠিন। ফলে তা বেশি সুরক্ষিত, দাবি ব্যাঙ্কিং শিল্পের।

এখনও অনেক এটিএমে শুধু ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ড চলে। তাই আপাতত নতুন কার্ডে এই দুই ব্যবস্থাই রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ব্যাঙ্কগুলি। আরবিআইয়ের নির্দেশে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এটিএমগুলিকে চিপযুক্ত কার্ডের উপযুক্ত করে তোলার উপরও জোর দেওয়া হচ্ছে। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘জালিয়াতি ঠেকাতে অফিসার-কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে।’’ একই সুর সিআইডিরও।

সাবধান!

•ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নম্বর, পিন, সিভিভি*, ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড কাউকে দেবেন না

•ব্যাঙ্ককর্মী চাইলেও নয়

• অ্যাকাউন্টের সঙ্গে মোবাইল নম্বর ও ই-মেল আইডি যুক্ত করুন

• কিছু দিন অন্তর এটিএম, নেট ব্যাঙ্কিংয়ের পিন বদলান

•ডেবিট কার্ডে লেনদেনের সীমা নির্দিষ্ট করুন

• অপরিচিতের সাহায্য নিয়ে কার্ড ব্যবহার করবেন না

•অ্যাপ ব্যবহারের আগে যাচাই করুন

* কার্ডের পিছনে থাকা তিন সংখ্যার নম্বর। যা নেট-লেনদেনে কাজে লাগে

অন্য বিষয়গুলি:

digital transactions Digital India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE