আগের বার বাড়তি সময় মেলেনি। এ বারও তাতে রাজি হল না সুপ্রিম কোর্ট।
বুধবার শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে দেশে ভারত স্টেজ ৪ (বিএস ৪) মাপকাঠি মেনে তৈরি হওয়া কোনও নতুন গাড়ি বিক্রি বা পরিবহণ দফতরে নথিভুক্ত করা যাবে না। সব গাড়িই বিএস ৬ দূষণ বিধির মাপকাঠি মেনে তৈরি করতে হবে। গত বছর ভারতে সর্বত্র সব ধরনের গাড়িতে বিএস ৪ মাপকাঠি চালুর ক্ষেত্রেও বাড়তি সময় চেয়েছিল গাড়ি সংস্থাগুলি। কিন্তু সে বারও তাতে সাড়া দেয়নি সর্বোচ্চ আদালত।
তবে গাড়ি শিল্পের বক্তব্য, পুরনো যে সব বিএস ৪ গাড়ি রাস্তায় রয়েছে বা ওই সময়ের আগে আসবে, সেগুলি ২০২০ সালের এপ্রিলের পরেও চালাতে বাধা নেই। কারণ নতুন গাড়ি রাস্তায় নামার আগে প্রথমেই সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পরিবহণ দফতরে নথিভুক্ত হয়। তার পরে তা হাত ফেরতা হিসেবে বিক্রি হলেও, দ্বিতীয়বার নথিভুক্ত হয় না। শুধু গাড়ির মালিকের নাম বদল হয়।
বিশ্ব জুড়েই বায়ু দূষণে জেরবার বিভিন্ন দেশ। দূষণ কমাতে ইতিমধ্যেই নানা পদক্ষেপ করেছে তারা। যার আওতায় আছে গাড়ির ধোঁয়া নির্গমণের আরও কঠিন বিধি চালু। ভারতে ২০০০ থেকে ধাপে ধাপে এই বিধি কার্যকর হয়েছে। তারই আওতায় ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে বিএস ৬ মাপকাঠি চালু হওয়ার কথা।
এ দিন বিচারপতি বি লোকুরের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চও দেশে দূষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের বক্তব্য, ভারতের বহু শহর দূষণে বিশ্বে অগ্রণী। ইউরোপে ২০১৫ সালেই বিএস ৬-এ সমতুল ইউরো-৬ মাপকাঠি চালু হয়েছে। তাই বিচারপতিদের মতে, ২০২০ সালের সময়সীমা এক দিনও দেরি করে দূষণ সমস্যার মোকাবিলায় আরও পিছিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। গাড়ি শিল্পের অবশ্য দাবি ছিল, দূষণের মাত্র ২ শতাংশের উৎস গাড়ির ধোঁয়া। তবে শীর্ষ আদালতের বক্তব্য, কম হলেও তা রুখতে কোনও পদক্ষেপ ছোট নয়।
এ দিনের রায় নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি গাড়ি সংস্থাগুলির সংগঠন সিয়াম। তবে শিল্পের একাংশের বক্তব্য, ওই সময়সীমার অনেক আগেই হয়তো বিএস ৪ মাপকাঠির গাড়ি বিক্রি বন্ধ করে দেবে অনেক সংস্থা। কারণ সাধারণত নতুন গাড়ির তৈরি হওয়ার পরে সেটি বিক্রি হতে গড়ে মাস তিনেক সময় লাগে। যে সব গাড়ির চাহিদা বেশি, সেগুলি আর একটু কম সময়ে বিক্রি হয়। ফলে ২০১৯-এর শেষেই হয়তো বিএস ৪ গাড়ি বিক্রি বন্ধ করবে তারা। কিছু গাড়ি হয়তো বিএস-৬ মাপকাঠিতে উন্নীতও করবে না সংস্থাগুলি।
শীর্ষ আদালতের নির্দেশ
• বিএস ৪ দূষণ মাপকাঠির কোনও নতুন গাড়িই ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে আর ভারতে বিক্রি বা পরিবহণ দফতরে নথিভুক্ত করা যাবে না।
• সব নতুন গাড়িকেই বিএস ৬ মাপকাঠি পূরণ করতে হবে।
বিষয়টি কী?
• গাড়ির ধোঁয়া থেকে বায়ু দূষণ মাপার মাপকাঠি হল ‘ভারত স্টেজ’ (বিএস)।
• ২০০০ সালে শূন্য থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে বেড়েছে এই মাপকাঠি।
• ২০১০ সালের ১ এপ্রিল থেকে দেশের ১৩টি শহরে বিএস ৪ বিধি চালু হয়।
• ২০১৭-র এপ্রিল থেকে দেশে সব ধরনের গাড়ির জন্যই তা চালু হয়েছে।
নতুন কী?
• ২০১৬ সালে কেন্দ্র জানায়, বিএস ৪ বিধির পরে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে সরাসরি বিএস ৬ বিধি চালু হবে। টপকে যাওয়া হবে বিএস ৫ বিধি।
• দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন মাপকাঠিতে গাড়ি থেকে নির্গত ধূলিকণার ও নাইট্রোজেন অক্সাইডের মাত্রা আরও আঁটোসাঁটো করা হয়েছে।
আর্জি ছিল
• বিএস ৬ বিধি চালুর পরে পুরনো মাপকাঠি মেনে তৈরি গাড়ি বিক্রির সময়সীমা বাড়াতে আর্জি জানায় গাড়ি সংস্থাগুলি। যাতে মজুত ভাণ্ডার খালি করা যায়।
• কেন্দ্র জানায়, চার চাকার বিএস ৪ গাড়ি ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বেচা যাবে। বাণিজ্যিক গাড়ির ক্ষেত্রে সেই সময়সীমা হবে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর।
সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য
• দেশে দূষণের মাত্রা বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছেছে। তাই নতুন দূষণ বিধি মানতে এক দিনও বাড়তি সময় নষ্ট করা যাবে না। তা চালু হতে হবে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকেই।
• ইতিমধ্যেই অনেক সংস্থা বিএস-৬ মাপকাঠির গাড়ি তৈরি করে বিদেশে রফতানি করছে।
আর চালু গাড়ি?
• গাড়ি শিল্পের দাবি, আগে বিক্রি হওয়া বিএস ৪ গাড়ি ২০২০ সালের এপ্রিলের পরেও রাস্তায় চালাতে বাধা নেই।
তেলের কী হবে?
• বিএস ৬ মাপকাঠির গাড়িতে বিএস-৪ মাপকাঠির তেল ভরানো যাবে না। কিন্তু উল্টোটা সম্ভব।
• অর্থাৎ ২০২০-র ১ এপ্রিলের আগে বিক্রি হওয়া বিএস ৪ গাড়িতে বিএস ৬ মাপকাঠির তেল ভরানো যাবে।
এর পরেও প্রশ্ন
• বিএস ৬ গাড়ি তৈরির পরিকাঠামো কতটা প্রস্তুত, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
• দেশের সব জায়গায় ২০২০ সালের এপ্রিলের মধ্যে বিএস ৬ মাপকাঠির তেল মিলবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন থাকছে। তেল সংস্থাগুলির অবশ্য আশ্বাস, তার আগেই সর্বত্র তেলের জোগান দেবে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy