Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

বালকো ও জিন্দলদের জেতা চার খনির দরপত্র বাতিল

খতিয়ে দেখা ন’টি কয়লা খনির মধ্যে চারটির জন্য জমা পড়া সর্বোচ্চ দরপত্র বাতিল করল কেন্দ্র। এর মধ্যে তিনটি খনিই ‘জিতেছিল’ জিন্দল স্টিল অ্যান্ড পাওয়ার (জেএসপিএল)। অন্যটির জন্য সবচেয়ে বেশি দর দেয় ভারত অ্যালুমিনিয়াম কোম্পানি (বালকো)। তবে আরও যে পাঁচটি কয়লার ব্লক খতিয়ে দেখার আওতায় ছিল, সেগুলির সর্বোচ্চ দর গৃহীত হয়েছে।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৫ ০১:৫১
Share: Save:

খতিয়ে দেখা ন’টি কয়লা খনির মধ্যে চারটির জন্য জমা পড়া সর্বোচ্চ দরপত্র বাতিল করল কেন্দ্র। এর মধ্যে তিনটি খনিই ‘জিতেছিল’ জিন্দল স্টিল অ্যান্ড পাওয়ার (জেএসপিএল)। অন্যটির জন্য সবচেয়ে বেশি দর দেয় ভারত অ্যালুমিনিয়াম কোম্পানি (বালকো)। তবে আরও যে পাঁচটি কয়লার ব্লক খতিয়ে দেখার আওতায় ছিল, সেগুলির সর্বোচ্চ দর গৃহীত হয়েছে।

শুক্রবার গভীর রাতেই চার খনিতে দরপত্র বাতিল হওয়ার কথা ট্যুইট করেন কয়লা সচিব অনিল স্বরূপ। শনিবার এ প্রসঙ্গে কয়লা ও বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযুষ গয়াল বলেন, ‘‘দরপত্র বাতিল হওয়া ওই চার খনির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দফতর। সব দিক বিবেচনার পরে তা নেওয়া হবে।’’

স্বরূপ বলেন, ‘‘যোগসাজশের মাধ্যমে কম দর হাঁকার ঘটনা ওই খনিগুলিতে ঘটেছে কি না, তা নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করতে রাজি নই।’’ তবে কোথাও অস্বাভাবিক কম দাম উঠলে, তার কারণ খোঁজার চেষ্টা যে কেন্দ্র করছে, তা জানিয়েছেন তিনি। দরপত্র নাকচ হওয়ায় প্রত্যাশিত ভাবেই হতাশা প্রকাশ করেছে জেএসপিএল। সংস্থার দাবি, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে সংস্থা অবাক। আগামী দিনে কয়লা মন্ত্রক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সামনে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরতে চেষ্টা করবে তারা।

যে চারটি কয়লা খনির সর্বোচ্চ দর কেন্দ্র বাতিল করেছে, তার তিনটির (গারে ৪/২, গারে পালমা ৪/৩ এবং তারা ব্লক) জন্য সবচেয়ে বেশি দাম দিয়েছিল নবীন জিন্দলের সংস্থা জেএসপিএল। আর বেদান্ত গোষ্ঠীর অ্যালুমিনিয়াম নির্মাতা সংস্থা বালকো সর্বোচ্চ দর হেঁকেছিল গারে পালমা ৪/১ কয়লা ব্লকের জন্য। ফলে সে দিক থেকে দেখলে নিলামে ‘জিতে’ও বড়সড় ধাক্কা খেল তারা।

অনেকে বলছেন, ইউপিএ-সরকারের জমানায় যখন কয়লা খনি বণ্টন হয়েছিল, তখন তা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম সারিতে ছিল জেএসপিএল। যার কর্ণধার নবীন জিন্দল আবার কংগ্রেস সাংসদও। কিন্তু মোদী-সরকারের আমলে শুরু হওয়া কয়লা নিলামে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খেয়েছে তারাই।

গত ১৭ মার্চই কেন্দ্র জানিয়েছিল ইতিমধ্যেই নিলাম হয়ে যাওয়া ৩৩টি কয়লা খনির মধ্যে ৯টির জন্য আসা সর্বোচ্চ দর খতিয়ে দেখছে তারা। স্বরূপের দাবি ছিল, একই ধরনের অন্যান্য খনির তুলনায় ওইগুলিতে কয়লার দর এত কম জমা পড়ল কেন, মূলত সেই বিষয়টিই খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। কয়লা সচিব এ দিনও বলেন, কম দর হাঁকতে যোগসাজশ হয়েছে কি না, তা তাঁরা দেখছেন না। বরং খতিয়ে দেখা হচ্ছে, দামের ক্ষেত্রে কোথাও ন্যূনতম সাযুজ্যের অভাব রয়েছে কি না।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বণ্টন বাতিল হওয়া ২০৪টি খনির মধ্যে প্রথম দু’দফায় ৩৩টিকে ইতিমধ্যেই নিলামে তুলেছে কেন্দ্র। মোট দাম উঠেছে দু’লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রশ্ন উঠেছে ন’টি খনির জন্য জমা পড়া সর্বোচ্চ দর নিয়ে। অনেকে অভিযোগ তুলেছেন, আসলে ওই খনিগুলির জন্য দরপত্র পেশের সময় যোগসাজশ করেই কম দাম হেঁকেছে সংস্থাগুলি। উল্লেখ্য, যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নেওয়া অন্য খনিতে প্রতি টন কয়লার ১,১০০ টাকা পর্যন্ত দর উঠেছে, সেখানে ১০৮ টাকা দাম হেঁকেই কয়লা ব্লকে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছে জেএসপিএল। যোগসাজশের এই অভিযোগ নিয়ে অবশ্য গোড়া থেকেই কোনও মন্তব্য করেননি স্বরূপ। বরং জানিয়েছেন, কোনও অনিয়ম বা কেলেঙ্কারি খুঁড়ে বার করা তাঁদের উদ্দেশ্য নয়।

শিল্পমহলের একাংশ অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন, যে খনিতে প্রতি টন কয়লার ন্যূনতম দর কেন্দ্রই ১০০ টাকায় বেঁধে দিয়েছিল, সেখানে সর্বোচ্চ দাম ১০৮ টাকা উঠলে, পরে তা খতিয়ে দেখা হবে কেন? তাঁদের দাবি, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে ফের প্রশ্নের মুখে পড়বে এ দেশে লগ্নির পরিবেশ। নিলামে জিতেও খনি হাতে পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা টোল ফেলবে বিনিয়োগকারীদের আস্থায়।

স্বরূপের অবশ্য দাবি, দামের অস্বাভাবিক ফারাক খতিয়ে দেখার অধিকার অবশ্যই কেন্দ্রের আছে। সেটি দেখা না-হলে, এ নিয়ে পরে প্রশ্ন ওঠার সুযোগ থাকবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE