ছোটবেলায় আমাদের প্রায় কারও কাছেই ক্রেডিট কার্ড ছিল না। ক্রেডিট কার্ড বার করে ইচ্ছেমতো জিনিসপত্র কিনতে পারতাম না আমরা। এ রকম কার্ড হাতে থাকলে মিষ্টির দোকানে দেখতেন পুঁচকেদের বিশাল লাইন, হাতে চকচকে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে দেদার গুজিয়া, চমচম, সরভাজা এবং জলভরা তালশাঁস কেনাকাটি চলছে! কিন্তু আজকে আমরা সবাই ‘বড়’ হয়েছি। তাই ইচ্ছেগুলো বিশাল ডানা মেলে আমাদের সরল শৈশবের ক্ষুদ্র আকাশকে ঢেকে দিয়েছে। এখন ক্রেডিট কার্ড মানে হল ‘শপিং থেরাপি’, হঠাৎ শহরের বাইরে যাওয়ার রাস্তা, দামি জামাকাপড় কেনা, উচ্চমূল্যের ঘড়ি এবং গ্যাজেট নিয়ে চলাফেরা। ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার সময় ব্যাঙ্কের কর্মীরা বলেন যে এই কার্ডে আপনার প্রোফাইল দেখে নগদ টাকা তোলার সুবিধা আছে। এর মানে, দোকানে যাওয়ার দরকার নেই। এটিএম থেকে সরাসরি ক্রেডিট কার্ডে টাকা নিতে পারেন আপনি। কিন্তু, এই সরাসরি টাকা তুলতে গেলেই আছে নানা উটকো খরচ!
সাধারণত, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে ইন্টারেস্ট-ফ্রি সময় পাওয়া যায়। ধরুন, আপনি শপিং মলে ১০ হাজার টাকার বাজার করলেন এবং ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলেন। এর কারণ, আপনার বেতন আসতে কিছু দিন এখনও বাকি। বাজার করতেই হবে, কিন্তু নগদ টাকা খরচ করলে কিছুই যে থাকবে না! এ রকম অবস্থায় ক্রেডিট কার্ডের মহিমায় আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে একটা টাকাও গেল না এবং পুরো টাকাটাই ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি দিল। মজার কথা হল যে, এই ভাবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে হয়তো দেখবেন আপনাকে এক পয়সা সুদ দিতে হল না। স্যালারি আসার সঙ্গে সঙ্গে ঠিক সময়ের মধ্যে শুধু মূল বা এই ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা দিলেই ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি খুশি। টাকা ধার নিলেন কিন্তু সুদ দিতে হল না কেন? এর পেছনে রয়েছে ‘ইন্টারেস্ট-ফ্রি’ সময়ের ম্যাজিক। এই সময়সীমার মধ্যে আপনি টাকা নিয়ে এবং ফেরত করে দিলে কোনও সুদ দিতে হয় না। দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন ক্রেডিট কার্ড সংস্থা ২০-৫০ দিন ‘ইন্টারেস্ট-ফ্রি’ সময় দেয়, যদি আপনার ক্রেডিট কার্ডে পুরনো কোনও ঋণ না থাকে।
কিন্তু এটিএম থেকে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে টাকা তুললে এক দিনও ‘ইন্টারেস্ট-ফ্রি’ সময় দেওয়া হয় না। হ্যাঁ, সুদের হিসেব শুরু হয়ে যায় প্রায় সঙ্গে সঙ্গে। বিভিন্ন কার্ডের বিভিন্ন নিয়ম। তা-ও মোটামুটি দেখা যাচ্ছে যে এটিএম থেকে নগদ টাকা তুললে আপনাকে সুদ দিতে হবে যত টাকা তুলেছেন তার ২.৫% থেকে ৩% প্রতি মাসে। বার্ষিক হিসেবে তা দাঁড়ায় ৩০%-৪০% মতো। এই সুদের হিসেব করা হয় যে দিন থেকে আপনি টাকা তুলেছেন ঠিক সেই দিন থেকে। এই ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড এবং মহাজনের মধ্যে বিশাল কোনও ফারাক নেই!
আরও পড়ুন: দর বাড়েনি, ভয় তাতেও
আপনার প্রোফাইল অনুযায়ী কতটা নগদ টাকা তুলতে পারবেন সেটাও ঠিক করা থাকে। যার যত ক্রেডিট লিমিট বা পরিসীমা, নগদ টাকা তোলার অঙ্কটা সেই ভাবে বাড়ে। মোটামুটি দেখা যায় যে আপনার ক্রেডিট লিমিট বা পরিসীমার ৩০-৩৫% নগদে তুলতে দেওয়া হয়। কিন্তু একসঙ্গে সেই টাকা তুলতে দেওয়া হয় না। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনাকে ৪০ হাজার টাকা ক্যাশ তুলতে দেওয়া, তা হলে একদিনে আপনি তার সর্বাধিক ৮০% তুলতে পারবেন। একমাত্র ব্যতিক্রম কিছু সরকারি মালিকানাধীন ব্যাঙ্ক যারা এক লাখ টাকা পর্যন্ত নগদ তোলা যায়, এ রকম সীমা স্থির করেছেন।
আরও পড়ুন: শক্ত জমি খুঁজছে বাজার
তা ছাড়া, প্রত্যেক বার ক্যাশ তুললেই দিতে হবে ২.৫% নগদ অগ্রিম ফি। হ্যাঁ, একে বলা হয় ‘ক্যাশ অ্যাডভান্স ফি’। যদি দেশে এটিএম ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ডে টাকা তোলা হয়, ২.৫% টাকা (সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা, কিছু সংস্থায় ৫০০ টাকা) নগদ অগ্রিম ফি হিসেবে আপনাকে দিতে হবে। যদি বিদেশে এটিএম ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ডে টাকা তোলা হয়, তা হলে নগদ অগ্রিম ফি বেড়ে হয় ৩%।
অনেকেই হয়তো ভাবছেন ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়ে ‘টেলার’ সুবিধা ব্যবহার করে, কিছু টাকা বাঁচিয়ে নেবেন। কিন্তু সেই রাস্তা বন্ধ। ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়ে ‘টেলার’ সুবিধা ব্যবহার করে নগদ টাকা নিলে ৫০০ টাকা চার্জ লাগবে। এই সব রকম চার্জ লেখা থাকবে ক্রেডিট কার্ড ধারকের পরের মাসের ‘স্টেটমেন্ট’-এ।
সুতরাং, ক্রেডিট কার্ডে নগদ টাকা একদমই তোলা উচিত নয়। যদি আপনার অর্থ সংগ্রহ করার সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়ে থাকে, তবেই এই পন্থা ব্যবহার করতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy