Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

আমেরিকার আশ্বাসে চাঙ্গা বাজার

আপাতত পিছু হটল চিনের জুজু। আশাতীত ভাবেই বৃহস্পতিবার চাঙ্গা হয়ে উঠল ভারতের শেয়ার বাজার। এক লাফে সেনসেক্স ৫১৬.৫৩ পয়েন্ট বেড়ে ঢুকল পড়ে ২৬ হাজারের ঘরে। এ দিন বাজার বন্ধের সময়ে সূচক থিতু হয় ২৬,২৩১.১৯ পয়েন্টে। শেয়ারের পাশাপাশি এ দিন বেড়েছে টাকার দামও। ডলারে টাকার দাম ১০ পয়সা বাড়ায় প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬৬.০৪ টাকা। তবে তা প্রথমে ১৯ পয়সা বেড়েছিল। পরের দিকে কিছুটা নেমে আসে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৫ ০১:০০
Share: Save:

আপাতত পিছু হটল চিনের জুজু। আশাতীত ভাবেই বৃহস্পতিবার চাঙ্গা হয়ে উঠল ভারতের শেয়ার বাজার। এক লাফে সেনসেক্স ৫১৬.৫৩ পয়েন্ট বেড়ে ঢুকল পড়ে ২৬ হাজারের ঘরে। এ দিন বাজার বন্ধের সময়ে সূচক থিতু হয় ২৬,২৩১.১৯ পয়েন্টে।

শেয়ারের পাশাপাশি এ দিন বেড়েছে টাকার দামও। ডলারে টাকার দাম ১০ পয়সা বাড়ায় প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬৬.০৪ টাকা। তবে তা প্রথমে ১৯ পয়সা বেড়েছিল। পরের দিকে কিছুটা নেমে আসে।

এ দিন ভারতের বাজার ওঠার পিছনে একাধিক কারণ কাজ করেছে। সেগুলি হল—

• সেপ্টেম্বরেই সুদ বাড়ানোর তাগিদ নেই আমেরিকার

• মার্কিন অর্থনীতির হাল ফেরার খবরে ওয়াল স্ট্রিটের চাঙ্গা হওয়া

• টানা পাঁচ দিন পড়ার পরে চিনের বাজার ওঠা

• পড়তি বাজারে শেয়ার কেনার হিড়িক

• আগাম লেনদেনের সেট্‌লমেন্ট

আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভের প্রসিডেন্ট উইলিয়াম ডাডলি বুধবার জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরে সুদ বাড়ানোর ইচ্ছা তাদের নেই। চিনের হাত ধরে বিশ্ব বাজারে ধসের জেরে এখনই তাঁরা এই পথে হাঁটতে চান না। এই বার্তা লগ্নিকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করেছে। পাশাপাশি, মার্কিন আর্থিক বৃদ্ধির হারও প্রত্যাশা ছাপিয়ে বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক এপ্রিল থেকে জুনে বেড়েছে ৩.৭%। এর আগে তা ২.৩% হারে বাড়বে বলে পূর্বাভাস ছিল। বুধবার এই জোড়া সুখবরে ছ’দিন পতনের খরা কাটিয়ে বাড়ার মুখ নেয় মার্কিন শেয়ার বাজার। আর বৃহস্পতিবার তারই প্রভাব পড়ে ভারতের বাজারে।

এ ছাড়া, টানা পাঁচ দিন পড়ার পরে বৃহস্পতিবার চিনের শেয়ার বাজারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সংহাই কম্পোজিট ইনডেক্স এক সময়ে ৫.৩৪% পর্যন্ত উঠে যায়। চিন ও ওয়াল স্ট্রিটের প্রভাবে এশিয়ার অন্য দেশগুলির শেয়ার সূচকও ছিল ঊর্ধ্বমুখী। যা ভারতের সূচককে ইন্ধন জোগায়। চাঙ্গা ছিল ইউরোপ। খোলার পরে উঠেছে মার্কিন বাজারও।

অবশ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সেনসেক্সের ওঠার পিছনে বিশেষ ভাবে যে-বিষয়টি কাজ করেছে তা হল, পড়তি বাজারে শেয়ার কেনার সুযোগ। পাশাপাশি, এ দিনই ছিল অগস্টের আগাম লেনদেনের সেট্‌লমেন্টের দিন। যে-সব লগ্নিকারী হাতে শেয়ার না-থাকা সত্ত্বেও তা আগাম লেনদেনে বেচে রেখেছেন, এ দিন তাঁরা হস্তান্তরের জন্য ওই শেয়ার কিনতে শুরু করেন। এর জেরেও দাম দ্রুত উঠে আসে।

তবে অনিশ্চিত বাজারে ঘড়ির পেন্ডুলামের মতোই দুলছে সূচক। এ দিন বাড়লেও আগের দিন অর্থাৎ বুধবার সেনসেক্সের পতন হয়েছিল ৩১৭.৭২ অঙ্ক। আবার তার আগের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার তা বেড়েছিল ২৯১ পয়েন্ট। তারও আগে সোমবার ধস নামে বাজারে, সেনসেক্স এক ধাক্কায় পড়ে যায় ১৬০০ পয়েন্টের বেশি।

শেয়ার দরের এই দ্রুত ওঠা-নামার মধ্যে অবশ্য অস্বাভাবিক কিছু দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের অনেকরই মতে, অনিশ্চিত বাজারে এটাই দস্তুর। এ দিন যে-সব ক্ষেত্রের শেয়ার দর বিশেষ ভাবে বেড়েছে তার মধ্যে রয়েছে পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য পরিষেবা, আবাসন, তেল ও গ্যাস, ভোগ্যপণ্য ইত্যাদি।

তবে সূচকের এই উত্থানে আশায় বুক বেঁধেছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। তাঁদের মতে, এ বার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে বাজার। কেন তাঁরা এমনটা ভাবছেন?

ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি এবং স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখ বলেন, ‘‘এখনই যে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে, তা নয়। অনিশ্চয়তা আরও সপ্তাহ দু’য়েক চলবে। তবে আমার বিশ্বাস, সূচক তেজী হতে বেশি সময় নেবে না।’’ কারণ হিসাবে তাঁর যুক্তি, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে সুদ কমানোর জমি বেশ প্রশস্ত হয়েছে বলেই মনে হয়। কারণ, মুল্যবৃদ্ধির হার স্বস্তিজনক অবস্থায় রয়েছে। বিশ্ব বাজারে তেল ব্যারেলে ৪০ ডলারের আশেপাশে, যা দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়ক হবে। হালে চিনে যে-সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, তা ভারতের আর্থিক ব্যবস্থার বিশেষ কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। উল্টে, এর থেকে ফায়দা তোলার কিছু সুযোগ তৈরি হতে পারে।’’ এই সব কারণেই ভারতের বাজার শীঘ্রই ‘বুল’-দের দখলে যাবে, মনে করছেন কমলবাবুর মতো বাজার বিশেষজ্ঞরা।

অন্য দিকে, ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কৌশিক বলেন, ‘‘গত কয়েক দিনে সূচক অনেকটা বেশি পড়ায় এ দিন বাজারে ‘ঊর্ধ্বমুখী সংশোধন’ হয়েছে, যা স্থায়ী হবে না।’’ কৌশিকের মতে, বিশ্ব বাজার থিতু না-হলে একক ভাবে ভারতের বাজারের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। তবে অন্যান্য দেশের বাজারের তুলনায় ভারতের বাজার ভাল। এখানে শেয়ার বেচে এখনও মুনাফা আয় করতে পারছেন লগ্নিকারীরা। আর, কৌশিকের মতে এটাই হিতে বিপরীত হয়ে বাজারে বিপদ ডেকে আনতে পারে। কৌশিকের কথায়, ‘‘বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি মুনাফার আশায় বিক্রি আরও বাড়াতে পারে ভারতে। তার জেরে ফের নামতে পারে সূচক।’’ প্রসঙ্গত, গত চার দিনে তারা ১২ হাজার কোটি টাকার শেয়ার বেচেছে। কৌশিকের আশঙ্কা, যে-মুহূর্তে ফেডারেল রিজার্ভ সুদ বাড়াবে, তখনই বিক্রির বহর অনেকটা বাড়িয়ে দেবে বিদেশি লগ্নিকারীরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE