অরুণ জেটলি
দেশ জুড়ে একটাই বাজার। আর, সেখানে লেনদেনের উপর একই রকম কর ব্যবস্থা। যার পোশাকি নাম পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি। বেশ কিছু দিন ধরেই এই নয়া ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব উঠেছে। এ বার শিল্পমহলকে আশ্বস্ত করতে আগামী বছরের ১ এপ্রিল থেকে জিএসটি চালুর সম্ভাবনার কথা বাজেটে ঘোষণা করতে পারেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। শিল্পমহল থেকে সাধারণ ব্যবসায়ী, সকলেই চান বাজেটে অর্থমন্ত্রী এই ঘোষণা করুন। বাজেটেই জিএসটি চালুর পথনির্দেশিকা জেটলি জানাতে পারেন বলেও ইঙ্গিত মিলেছে। তবে আগেকার প্রতিশ্রুতি মতো চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে তা চালু হচ্ছে না।
জিএসটি চালুর জন্য সংবিধান সংশোধনী বিলের খসড়া সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেই পেশ করেছিল মোদী সরকার। কিন্তু কবে থেকে নতুন কর ব্যবস্থা চালু হবে, তা স্পষ্ট হয়নি। শিল্পমহল চাইছে, এই অনিশ্চয়তা দূর হোক। জিএসটি চালু হলে তা স্বাধীনতার পরে দেশের কর ব্যবস্থায় সব থেকে বড় মাপের সংস্কার হবে বলে সব মহলই একমত। উৎপাদন শুল্ক, ভ্যাট, বিক্রয়করের মতো কেন্দ্র ও রাজ্যের হাজারো রকম করের বদলে একটিমাত্র কর মিটিয়েই চিন্তামুক্ত হবেন শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা।
জিএসটি চালুর জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে অবশ্য তথ্যপ্রযুক্তি পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। কেন্দ্র ও রাজ্যের জন্য জিএসটি আইনের খসড়া তৈরি করতে হবে। অর্থ মন্ত্রকের রাজস্ব দফতরের কর্তাদের দাবি, দু’মাসের মধ্যে সেই কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। আগামী বছরের এপ্রিল থেকে জিএসটি চালু করতে হলে তার পরেও এক বছর সময় হাতে থাকবে। অর্থ মন্ত্রকের একাংশ অবশ্য এতটা নিশ্চিত নন। তাঁদের বক্তব্য, জিএসটি-তে করের হার কী হবে, তা-ই এখনও ঠিক হয়নি। এ নিয়ে এখনও অনেক জলঘোলা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সংসদে জিএসটি-র জন্য সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ হলে কেন্দ্র ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে জিএসটি পরিষদ তৈরি হবে। ওই পরিষদই নতুন করের হার ঠিক করবে। এমন ভাবে এই করের হার ঠিক করতে হবে, যাতে জিএসটি চালুর আগে কেন্দ্র বা রাজ্যগুলির রাজস্ব খাতে যে-আয় ছিল, পরেও তা থাকে। কেন্দ্রের সঙ্গে সব রাজ্যকে একমত হতে হবে। অর্থ মন্ত্রকের একটি কমিটি প্রাথমিক ভাবে সুপারিশ করেছে, জিএসটি-তে করের হার হোক ২৭ শতাংশ। কিন্তু এই হার যথেষ্ট চড়া বলে শিল্পমহলের মত।
অরুণ জেটলি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, জিএসটি চালুর পরে কোনও রাজ্যের রাজস্ব ক্ষতি হলে কেন্দ্র তা পূরণ করে দেবে। সে ক্ষেত্রে নতুন করের হারের উপরই নির্ভর করবে কোন রাজ্য কত ক্ষতিপূরণ পাবে। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা অবশ্য বলছেন, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলিতে, যেখানে যে-কোনও উৎপাদনের তুলনায় কেনাকাটার পরিমাণ বেশি, সেই সব রাজ্যের রাজস্ব আয় বাড়বে। আখেরে এই রাজ্যগুলিই লাভবান হবে। জিএসটি-র ক্ষতিপূরণ ঠিক করার আগে রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রীয় বিক্রয়করের ক্ষতিপূরণও মিটিয়ে দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক সূত্রের ইঙ্গিত, রাজ্যগুলির দাবি অনুযায়ী তাদের প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পাওনা রয়েছে। এই ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়ার জন্য বাজেটেই জেটলি যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করতে পারেন। তিনি মনে করছেন, বাজেটে এই ঘোষণা হলে রাজ্যগুলি নিশ্চিন্ত হবে। সে ক্ষেত্রে ২০১৬-র এপ্রিল থেকে জিএসটি চালু করার ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির সহযোগিতা মিলবে। সংবিধান সংশোধনী বিল সংসদে পাশ হওয়ার পরে রাজ্যের বিধানসভাগুলিও তাতে সিলমোহর বসাতে হবে।
শিল্পমহল ও বণিকসভার কর্তারাও বুঝতে পারছেন, জিএসটি চালুর প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট জটিলতা আছে। কিন্তু তাদের দাবি, মোদী সরকার অন্তত একটি সময়সীমা ঠিক করে নিয়ে এগোক। কোন সময়ে কী কাজ হবে, তার একটি পথনির্দেশিকাও তৈরি হোক। বণিকসভা ফিকি-র নতুন প্রেসিডেন্ট জ্যোৎস্না সুরিও দাবি তুলেছেন, কেন্দ্র দ্রুত জিএসটি চালু করুক। করের হারও যেন বাস্তবসম্মত হয়। একই ভাবে সিআইআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জিএসটি চালু হবে বলে আমরা আশা করছি।” বাজেটে জেটলি সম্ভবত সেই আশার আলোই দেখাতে চাইছেন বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy