ক্রাইমিয়ার দখল নেওয়ার পরে প্রায় গোটা বিশ্বের সমালোচনার মুখে পড়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে এই কঠিন সময়ে পুরনো বন্ধুকে পাশেই পাচ্ছে মস্কো। রাশিয়ার উপর আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলির জারি করা নিষেধাজ্ঞাকে কোনও ভাবেই সমর্থন করবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের একটি সূত্র থেকে এমন খবরই জানা গিয়েছে।
ওই সূত্রের বক্তব্য, নয়াদিল্লি কোনও দেশের উপর একতরফা ভাবে জারি করা নিষেধাজ্ঞা কখনওই সমর্থন করেনি। রাশিয়ার ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হবে না। ইরাক বা ইরানের উপরও আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দেশগুলি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল এক সময়। তখনও সেই নিষেধাজ্ঞায় দিল্লির সমর্থন মেলেনি। এ বারও ওই একই রাস্তায় হাঁটতে চলেছে কেন্দ্র।
তবে কূটনৈতিক সূত্রের ব্যাখ্যা, রাশিয়ার ক্রাইমিয়া দখলের প্রশ্নে সার্বিক ভাবে কৌশলগত অবস্থানই নিচ্ছে নয়াদিল্লি। ভারত জানে রাষ্ট্রপুঞ্জে আমেরিকার আনা এই নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব এমনিতেই খারিজ হয়ে যাবে। চিন রাশিয়ার পক্ষ নিয়ে আমেরিকার এই প্রস্তাব খারিজ করে দেবে ভেটো প্রয়োগের মাধ্যমে। তা ছাড়া এই বিষয়টি নিয়ে ভোটাভুটি হবে রাষ্ট্রপূঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে, ভারত যার সদস্য নয়। ফলে সক্রিয় ভাবে ভোটদানে অংশ নেবে না ভারত। না হলে সরাসরি ভোটে অংশ নিয়ে ভারতের পক্ষে রাশিয়ার পাশে দাঁড়ানো সমস্যারই ছিল। কারণ, এক দিকে ভারত যেমন কোনও রাষ্ট্রের উপর একতরফা নিষেধাজ্ঞার বিপক্ষে। তেমনই কোনও রাষ্ট্রের অন্যের জমি দখল করাটাকেও সমর্থন করতে পারে না নয়াদিল্লি। সে ক্ষেত্রে কাশ্মীর-প্রশ্ন নিয়ে অস্বস্তিতে পড়তে হতে পারে ভারতকে। এ ক্ষেত্রে তাই সরাসরি ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ না থাকায় শুধুমাত্র মৌখিক বিরোধিতাটুকু করেই কাজ সারল সাউথ ব্লক।
ক্রাইমিয়াকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার চুক্তিতে গত কালই সই করেছেন পুতিন। আর সেই সঙ্গেই কাল সন্ধ্যায় তাঁর কথা হয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে। মনমোহন তাঁকে জানিয়েছিলেন, নয়াদিল্লি আগাগোড়াই ঐক্য এবং আঞ্চলিক সংহতি বজায় রাখার পক্ষে। কূটনৈতিক পথেই বর্তমান সঙ্কট নিরসনের পথ মিলবে বলেও কাল আশা প্রকাশ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
নিষেধাজ্ঞায় সমর্থন না করে ভারত আসলে পরোক্ষে আমেরিকাকেও একটি বার্তা দিতে চাইছে বলে মনে করছেন অনেকে। কয়েক মাস ধরেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্কটা ঠিক সুখের নয়। বিশেষত দেবযানী খোবরাগাড়ের বিষয়টি নিয়ে দু’দেশের মধ্যে যথেষ্ট টানাপড়েন চলেছে। এই অবস্থায় পুরনো মিত্র মস্কোকে চটাতে চাইছে না দিল্লি। প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বহু বিষয়ে রাশিয়ার উপর ভারত নির্ভরশীল। ফলে মস্কোর দিকেই যে ভারতের পাল্লা ঝুঁকে থাকবে তা বলাই বাহুল্য। ভারতে ভোট আসন্ন। ফলে এখন নতুন বিদেশ নীতির রাস্তায় হাঁটতে চাইছে না কেন্দ্রীয় সরকার।
রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরে গত কালই প্রথম গোলমাল বেধেছিল ক্রাইমিয়ায়। সিমফেরোপোল শহরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল এক ইউক্রেনীয় পুলিশের। এর পর আজ সকালে ক্রাইমিয়ার বন্দর শহর সেভাস্তোপোলে ইউক্রেনের নৌ সেনা সদর দফতরের দখল নিয়েছে প্রায় তিনশো জনের সশস্ত্র বাহিনী। দফতরে উপস্থিত প্রায় ৭০ জন ইউক্রেনীয় অফিসার আলোচনার বার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কেউ আমল দেয়নি। উল্টে ইউক্রেনের নৌ সেনা প্রধানকে গ্রেফতারও করেছে রাশিয়া। এই অভিযানে আজ রুশ সেনার সঙ্গে ছিল সদ্য ইউক্রেন থেকে আলাদা হওয়া ক্রাইমিয়ার কিছু স্বেচ্ছাসেবীও। এই ঘটনার পর পরই কিয়েভের অন্তর্বর্তী সরকার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, ক্রাইমিয়া থেকে তাদের বাহিনী সরাবে না ইউক্রেন। যদিও এর কিছু পরই দেখা যায়, নৌ সেনার সদর দফতর থেকে একে একে বেরিয়ে আসছেন ইউক্রেনের আধিকারিকরা। গোটা বিষয়টি অত্যন্ত অপমানজনক বলে মনে করছেন তাঁরা। আলেকজান্ডার বালানিউক নামে এক ক্যাপ্টেন বললেন, “হঠাৎ করে ওরা অফিসে ঢুকে পড়ল। কোনও গুলি চলেনি বটে। কিন্তু এটার তো রাজনৈতিক সমাধানও হতে পারত।” পশ্চিম ক্রাইমিয়ার বন্দর শহর নভুজার্নের একটি সেনা শিবিরও দখল করেছে রুশ বাহিনী।
তবে রাশিয়ার উপর যে আরও নিষেধাজ্ঞা জারি হবে তার ইঙ্গিত ফের মিলেছে। ইতিমধ্যে রাশিয়ার ক্রাইমিয়া দখলকে অবৈধ ঘোষণা করে বেশ কিছু রুশ ও ইউক্রেনীয় আধিকারিকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার। একই বিষয় নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেলের এক প্রস্ত ফোনে কথা হয়েছে। আমেরিকা এখন চাইছে, নিষেধাজ্ঞার প্রশ্নে সব ক’টি দেশ তাদের পাশে থাকুক। পরোক্ষে ভারতের সমর্থনও চেয়েছে ওয়াশিংটন। এই অবস্থায় কাল রাশিয়া ও ইউক্রেন সফরে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি মুন। উদ্দেশ্য, গোটা বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধান সূত্র বার করা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy