(বাঁ দিকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিস (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
আগামী চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা কে হতে চলেছেন, তা জানতে উৎসুক গোটা বিশ্ব। মঙ্গলবারই আমেরিকার নাগরিকেরা সেই বাসিন্দার নাম চূড়ান্ত করে ফেলবেন। তবে কমলা হ্যারিস আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বৈরথ যদি অমীমাংসিত রয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে কী হতে পারে, তা নিয়েও জনকৌতূহল রয়েছে।
ভারতের মতো বহুদলীয় দেশে এই ধরনের পরিস্থিতিকে ‘ত্রিশঙ্কু’ বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ, যখন নির্দিষ্ট কোনও দল বা জোট সরকার গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় আসন বা ‘জাদুসংখ্যা’ পায় না। বহুদলীয় গণতন্ত্রের কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছোট দলগুলি বড় দল বা জোটকে সমর্থন করে। তখন অচলাবস্থা কাটে। আমেরিকার মতো মূলত দ্বিদলীয় গণতান্ত্রিক দেশে সেই সুযোগ নেই। এখানে লড়াই প্রধানত দুই দল, আরও স্পষ্ট করে বললে দুই ব্যক্তির মধ্যে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে জয়ী হবেন, তা ভোটারদের সরাসরি ভোট (পপুলার ভোট)-এ নির্ধারিত হয় না। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে (ফেডারেল) নির্বাচনী লড়াইয়ের বদলে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় এক একটি প্রদেশের নির্বাচনী লড়াইয়ের মাধ্যমে। আমেরিকার ৫০টি প্রদেশের একটিতে জয়ী হওয়ার অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রার্থী সেই প্রদেশের সব ক’টি ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ ভোট পেয়ে যাবেন। যেমন, টেক্সাসে ৪০ জন ইলেক্টর রয়েছেন। কমলা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি এই প্রদেশে বেশি পপুলার ভোট পাবেন, তিনিই প্রদেশের ৪০ জন ইলেক্টরকে জিতে নেবেন। ইলেক্টোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। দু’টি প্রদেশ বাদে বাকি সবগুলি রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট যোগ করলে যে প্রার্থী ২৭০টি বা তারও বেশি ভোট পাবেন, তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।
অতীতে এমন নজির প্রায় না থাকলেও ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে দুই প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটই ২৬৯-এ এসে থামতে পারে। যদি কমলা উইসকনসিন, মিশিগান, পেনসিলভেনিয়ার মতো দোদুল্যমান প্রদেশ বা ‘সুইং স্টেটে’ জয়ী হন, আর ট্রাম্প জয়ী হন জর্জিয়া, অ্যারিজ়োনা, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং একটি ইলেক্টোরাল কলেজবিশিষ্ট নেব্রাসকায়, তবে দু’জনেই ২৬৯-এ এসে থেমে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বাইডেনের উত্তরসূরি বেছে নেওয়ার দায়িত্ব যাবে আমেরিকার আইনসভার কাছে। আইনসভার নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজ়েন্টিটিভস ভোটের মাধ্যমে বেছে নেবে হবু প্রেসিডেন্টকে। আর হবু ভাইস প্রেসিডেন্টকে বেছে নেবে উচ্চকক্ষ সেনেট।
কী ভাবে হবে এই ভোট?
‘ত্রিশঙ্কু’ পরিস্থিতিতে আমেরিকার ৫০টি প্রদেশের মধ্যে অন্তত ২৬টির সমর্থন আদায় করতে হবে ভাবী প্রেসিডেন্টকে। প্রতিটি প্রদেশ একটি করে ভোট দিতে পারবে। অর্থাৎ, ৫০টি ভোটের সিংহভাগ যিনি পাবেন, তিনিই প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হবেন। এই ভোটে অবশ্য একটি ‘অসাম্য’ রয়েছে বলে অনেকের অভিযোগ। কারণ, এ ক্ষেত্রে ক্যালিফর্নিয়ার মতো জনবহুল প্রদেশ আর উওমিংয়ের মতো কম জনসংখ্যার প্রদেশের ভোটাধিকার সমান। যে হেতু হাউস হাউস অফ রিপ্রেজ়েন্টিটিভসে এখন রিপাবলিকানেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাই ‘টাইব্রেকার’ ভোটে অতিরিক্ত সুবিধা পেতে পারেন ট্রাম্প।
১৮০০ সালে দুই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী টমাস জেফারসন এবং জন অ্যাডামসের প্রতিদ্বন্দ্বিতা অমীমাংসিত রয়ে গিয়েছিল। তার পরেই এই বিষয়ে আইন আনার কথা ভাবা হয়। কিন্তু বর্তমানে এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে দু’পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছতে পারবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য অনেকেরই সন্দেহ রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy