নাইকি জুতো পুড়িয়ে প্রতিবাদ আমেরিকায়। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে পাওয়া।
আমেরিকা জুড়ে এখন‘নাইকি’ জুতো জ্বালিয়ে প্রতিবাদের হিড়িক। শুধু জুতো পোড়ানোই নয়, বিনিয়োগকারীরা বিক্রি করে দিচ্ছেন শেয়ার, উঠছে ‘নাইকি’জুতো বয়কট করার দাবিও। পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো যে মঙ্গলবার বাজার বন্ধের সময় পৃথিবী বিখ্যাত এই ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থার শেয়ারের দাম প্রায় চার শতাংশ পড়ে গিয়েছে।
সোমবার ‘নাইকি’ সংস্থার একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয় বিতর্ক। বিজ্ঞাপনটিতে দেখানো হয় ‘আমেরিকান ফুটবল’খেলোয়াড় কলিন ক্যাপারনিককে। তাঁকে নিয়ে আপত্তি অনেক আমেরিকানের। কারণ, ২০১৬ সালে ন্যাশনাল ফুটবল লিগে খেলার সময় জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন হাঁটু গেড়ে বসে পড়তেন ক্যাপারনিক। দেশ জুড়ে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের ওপর পুলিশি গুলিচালনার প্রতিবাদেই এই ভঙ্গি করতেন তিনি। যা ভাল চোখে নেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-সহ অনেকেই। এই বিজ্ঞাপনেওক্যাপারনিককে ব্যবহার করা ‘অত্যন্ত ভুল সিদ্ধান্ত’বলে টুইট করেছেন তিনি।
হাঁটু গেড়ে প্রতিবাদের পর এই দু’বছরে অবশ্য অনেকটাই বদলে গিয়েছে ক্যাপারনিকের জীবন। তাঁকে বয়কট করেছে বেশির ভাগ ‘আমেরিকান ফুটবল’ক্লাবই। মার্কিন প্রেসিডেন্টের চাপে তাঁকে বয়কট করেছে ন্যাশনাল ফুটবল লিগও। একসময়ের প্রতিভাবান এই খেলোয়াড়ের এখন আর কোনও ক্লাব নেই। বেকার দিন কাটে ক্যাপারনিকের। ঠিক এই সময়ই তাঁকে দিয়ে বিজ্ঞাপন করিয়ে পুরনো বিতর্কের পুনর্জন্ম দিল নাইকি।
বিজ্ঞাপনে ক্যাপারনিকের এই ছবি দেখিয়েই বিতর্কে নাইকি। ছবি: সংগৃহীত।
আসলে ঠিক এটাই চেয়েছিল ‘নাইকি’।আপাতত ক্ষতির মুখোমুখি হলেও নিজেদের ব্র্যান্ডের এই পরিচিতিই তুলে ধরতে চেয়েছে তারা। তাদের স্লোগান ‘জাস্ট ডু ইট’-র সঙ্গে খাপ খায় ক্যাপারনিকের প্রতিবাদী ভঙ্গি। তাই সুপরিকল্পিতভাবেই নিজেদের ব্র্যান্ডের বিদ্রোহী ভাবমূর্তিতুলে ধরতে সফল নাইকি। এমনটাই মনে করছেন বিভিন্ন বিজ্ঞাপন সংস্থার বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন: যুদ্ধ থামুক, চায় ইয়েমেনের নোরানরা
জুতো পোড়ানো, বয়কটের স্লোগান, শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া চলছে পুরো দমে। আর একই সঙ্গেসোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচ্য বিষয়গুলির মধ্যে এখন একেবারে উপরের সারিতে উঠে এসেছে নাইকি। সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ সংস্থা ‘টকওয়াটার’ জানাচ্ছে, গত ২৪ ঘন্টায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ২৭ লক্ষ বার ‘নাইকি’ শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। গত সপ্তাহের থেকে যা প্রায় ১৩৫ শতাংশ বেশি। টুইটারে একটি জুতো পোড়ানোর ছবি ২০০০০ বার শেয়ার করার ঘটনাও ঘটেছে। অর্থাৎ বিজ্ঞাপন ঘিরে হুলস্থূল সোশ্যাল মিডিয়ায়।
দেখুন ভিডিয়ো
First the @NFL forces me to choose between my favorite sport and my country. I chose country. Then @Nike forces me to choose between my favorite shoes and my country. Since when did the American Flag and the National Anthem become offensive? pic.twitter.com/4CVQdTHUH4
— Sean Clancy (@sclancy79) September 3, 2018
আপাতত কর্মহীন ক্যাপারনিক। নতুন বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়েছে তাঁর বর্তমান অবস্থাটিকেই। সেখানে নাইকি’র স্লোগান, ‘বিলিভ ইন সামথিং, ইভন ইফ ইট মিনস স্যাক্রিফাইসিং এভরিথিং। অর্থাৎ, সব হারানোর ভয় থাকলেও নিজের বিশ্বাসে অটল থাকা উচিত।
আরও পড়ুন: টাইফুন ‘জেবি’-র ধ্বংসলীলা জাপানে! দেখুন ভিডিয়ো
বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার প্রতিবাদ আসছে মূলত শ্বেতাঙ্গ কট্টরপন্থী আমেরিকানদের মধ্য থেকে। সমাজের এই অংশে সেই ভাবে নাইকি’-র বাজার নেই। সমাজের উদারপন্থী অংশের অনেকেই অবশ্য এই প্রতিবাদী বিজ্ঞাপনের জন্য বাহবা দিচ্ছেন ক্রীড়াসরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থাটিকে। নাইকির লক্ষ্যও ছিল তাই। নিজের পছন্দের জনমানসে নিজের উপস্থিতি আরও বাড়িয়ে নেওয়া।
(সব গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের আন্তর্জাতিক বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy