পাশাপাশি, সরকারি দফতরগুলিতে ‘সবুজ লকডাউন’ জারি করেছে লাহোর প্রশাসন। যাতে ৫০ শতাংশ কর্মচারীকে বাড়ি থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ফিল্টারবিহীন বারবিকিউ খাবার, মোটরচালিত রিকশা এবং রাত ১০টার পর বিয়েবাড়ি পুরোপুরি বন্ধ রাখার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে লাহোর প্রশাসন। বাজি পোড়ানোর উপরেও রয়েছে কড়া নিষেধাজ্ঞা।
লাহোরের এক সরকারি আধিকারিক জানিয়েছেন, বিষ-বাতাসে গোটা শহর ঢেকে যাওয়ায় অসুস্থতার পরিমাণ হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে কয়েক হাজার বাসিন্দা শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁদের সিংহভাগই বয়স্ক ও শিশু। ফলে বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গত হয়, এমন যানবাহন নিয়ে রাস্তায় বার হলে জারিমানা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের পরিবেশ সুরক্ষা দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাতাসে অতি ক্ষুদ্র ধূলিকণার ঘনত্ব (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম) ৪৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। যা মারাত্মক বিপজ্জনক। এর জন্য অপরিকল্পিত ভাবে সবুজ ধ্বংসকে দায়ী করেছে তারা। দ্রুত নগরায়নের জন্য সেখানকার বহু পার্কও অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে। যার বাতাষে বিষের পরিমাণ চড়চড়িয়ে বেড়েছে।
লাহোরের এই বায়ুদূষণের জন্য ভারতকে এক হাত নিয়েছেন পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ়। সম্পর্কে তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ় শরিফের মেয়ে। ‘পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ়’-এর শীর্ষ নেত্রী বলেছেন, ‘‘লাহোরের বিষ-বাতাস আসছে ভারত থেকে। এর জন্য পুরোপুরি দায়ী অমৃতসর ও চণ্ডীগড়।’’ যা অবিলম্বে বন্ধ না হলে, চুপ করে থাকবেন না বলে একরকম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
গত ৩ নভেম্বর এই বিষয়ে মুখ খোলেন মরিয়ম সরকারের পরিবেশমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজ়েব। জনপ্রিয় পাক সংবাদমাধ্যম ‘ডন’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘ভারতীয় শহর অমৃতসর ও চণ্ডীগড় থেকে যে বিষ-বাতাস লাহোরে ঢুকছে, তাতেই বাতাসের একিউআইয়ের সূচককে হাজারের গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছে।’’ পরিস্থিতি সামলাতে কৃত্রিম বৃষ্টির বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অন্য দিকে, এই ইস্যুতে মরিয়ম নওয়াজ় বলেছেন, ‘‘ধোঁয়াশা ও দূষণের সমস্যাটা ভারত ও পাকিস্তান দু’দিকের পঞ্জাবেই রয়েছে। ফলে রাজনীতিকে সরিয়ে রেখে এর সঙ্গে আমাদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করতে হবে। এটা আমজনতার স্বাস্থ্যের প্রশ্ন। সেটা ভাল রাখা আমাদের কর্তব্য।’’ পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানকে এ ব্যাপারে চিঠি দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
লাহোরের দূষণ ঠেকাতে নয়াদিল্লি হাত বাড়িয়ে দেবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। সীমান্ত পার সন্ত্রাসবাদের জেরে দু’দেশের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে। অক্টোবরে ‘সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা’র বৈঠকে যোগ দিতে পাক সফরে যান বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। কিন্তু সেখানে ইসলামাবাদের সঙ্গে কোনও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেননি তিনি। ফলে লাহোরের দূষণ নিয়ে পাকিস্তানের আক্রমণের জবাব নয়াদিল্লি আদৌ দেবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞ মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy