ঋষি সুনক। —ফাইল চিত্র।
গত কাল পরাজয় স্বীকারের কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেখা গেল এক্স হ্যান্ডলে ঋষি সুনকের প্রোফাইলের বর্ণনালেখ বদলে গিয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে, এই সদ্যপ্রাক্তন এখন কী করবেন? সুনক নিজে যদিও একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি বিরোধী বেঞ্চে বসবেন। কিন্তু সেটা পুরো মেয়াদের জন্য কি না, তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান।
এই মুহূর্তে কিছু দিনের জন্য সুনক তাঁর ইয়র্কশায়ারের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। ১৭ই জুলাই পার্লামেন্টের অধিবেশন চালু হলে আবার লন্ডনে ফিরবেন। নতুন নেতা নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তিনিই দলের নেতা থাকছেন। ফলে কিয়ের স্টার্মারের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়ার দায়িত্বও তাঁর। ক’দিন আগে স্টার্মার যে ভূমিকায় ছিলেন, সেখানেই দেখা যাবে সুনককে।
সুনকের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েও অনেক জল্পনা ভেসে বেড়াচ্ছে। কিছু কিছু সূত্রের দাবি, সুনক ক্যালিফর্নিয়ায় তাঁর পুরনো বন্ধু এবং সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। তাঁরা হয়তো সেখানে একটা হেজ ফান্ড সংস্থা খুলতে পারেন। ব্রিটেনে ফেরার আগে আমেরিকায় তিনি ওই রকম একটি সংস্থাই চালাতেন। ক্যালিফর্নিয়াতে সুনকদের একটা বাড়িও আছে। সুতরাং সেখানে ফেরা তাঁর কাছে কঠিন কিছু নয়।
আর একটা জল্পনা হল, আমেরিকায় ফিরলেও সেটা এক্ষুনি নয়। আপাতত কিছু দিন সুনক ব্রিটিশ এমপি হিসেবেই থাকবেন, হয়তো কিছু দাতব্য সংস্থা খোলার কথা ভাবতে পারেন। কারণ তাঁর মেয়েরা এখনও স্কুলে। স্কুল শেষ করে তারা আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাইলে তখন হয়তো ঋষিও আমেরিকায় ফিরবেন। ঋষি আর তাঁর স্ত্রী অক্ষতার দেখা হয় আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়েই।
সুনকদের এমনিতে ধনদৌলতের অভাব নেই। সম্পত্তির তালিকায় তাঁরা রাজপরিবারেরও উপরে। তবে অন্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের আরও নানা রকম আয়ের রাস্তা আছে। যেমন বরিস জনসন তো কোথাও বক্তব্য রাখতে হলে লক্ষ পাউন্ডও দক্ষিণা হেঁকে থাকেন। সুনকের বাজারদর এ ক্ষেত্রে অতটা ভাল নাও হতে পারে। স্মৃতিকথা লেখার জন্য প্রকাশকেরা তাঁর দরজায় আগাম সাম্মানিকের বিরাট অঙ্ক নিয়ে হাজির হবেন, এমন সম্ভাবনাও খুব উজ্জ্বল নয়। এমনিতে ব্রিটেনের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুনকের হয়তো বলার মতো বেশ কিছু গল্প আছে। কিন্তু সুনক খুব অমায়িক বা সুরসিক বলে পরিচিত নন। ফলে বাজারসফল স্মৃতিকথা লিখতে চাইলে তাঁকে একজন বকলম-লেখক জোগাড় করতে হবে।
বিজয়ী লেবার দলের সামনেও চ্যালেঞ্জের অভাব নেই। অর্থনীতির হাল বদলানো, স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি, রাজনীতিকদের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানোর দায়িত্ব এখন তাদের কাঁধে। সেই সঙ্গে তাদের ভাবতে হবে প্যালেস্টাইন নীতি নিয়েও। স্টার্মার এক সময়ে বলেন, ইজ়রায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। সেই কথাটা ব্রিটেনের মুসলিম সমাজ মোটেই ভাল ভাবে নেয়নি। অন্তত চারটি আসনে লেবার প্রার্থীরা নির্দলদের কাছে হেরেছেন স্রেফ গাজ়া নিয়ে তাঁদের অবস্থানের দরুন। দক্ষিণ লেস্টারে লেবার প্রার্থীকে হারিয়ে শওকত আদম বলেছেন, ‘এটা গাজ়ার জন্য’!
‘ইহুদিবিদ্বেষের’ প্রশ্ন তুলে লেবার দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল প্রবীণ নেতা জেরেমি করবিনকে। তিনি নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়ে সাত হাজার ভোটে জিতেছেন। সারে-র একটি আসন টোরিরা জিততে পেরেছেন, কারণ গাজ়াপন্থী অবস্থানের কারণে লেবার থেকে বহিষ্কৃত নেত্রী ফৈজ়া শাহিন সেখানে বিপুল ভোট কেটেছেন। ডিউসবেরি এবং বেটলি আসনেও নির্দল ইকবাল মহম্মদ লেবারকে হারিয়ে জিতে গিয়েছেন। খোদ স্টার্মারের আসনেও দ্বিতীয় হয়েছেন নির্দল প্রার্থী অ্যান্ড্রু ফিনস্টিন, যিনি জোর গলায় লেবারের গাজ়া-নীতির বিরোধিতা করেছেন। শুধু তাই নয়, মুসলিম এলাকাগুলিতে যে সব আসনে লেবাররা জিতেছেন, সেখানেও গাজ়া নিয়ে জনতার অসন্তোষ প্রচার পর্বে তাঁদের তাড়া করে বেড়িয়েছে। ব্র্যাডফোর্ড পশ্চিম আসনে নাজ় শাহ বা বার্মিংহাম ইয়ার্ডলে আসনে জেস ফিলিপ্সের অভিজ্ঞতা ভাল নয়। বহু স্থানীয় কাউন্সিলরের পদ থেকে লেবারের মুসলিম নেতারা পদত্যাগ করেছেন।
এখন লেবার দল অবশ্য গাজ়ায় সংঘর্ষবিরতির পক্ষেই কথা বলছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী স্টার্মার এবং বিদেশমন্ত্রী ডেভিড ল্যামিকে গাজ়া নিয়ে আরও ভাবনাচিন্তা করতে হবে। ভাবতে হবে কাশ্মীর নিয়েও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy