অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। —প্রতীকী চিত্র।
কখনও ‘আপনার হাত মানুষের রক্তে ভেজা’, কখনও ‘আপনি ইহুদিরাষ্ট্রপন্থী’— একের পর এক বিশেষণ জুটছে তাঁর, আমেরিকার বিদায়ী বিদেশ সচিব হিসেবে শেষ দিনগুলো মোটেই স্বস্তিতে কাটছে না অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের। ১৫ মাস ধরে চলা ইজ়রায়েল ও হামাস সংঘাত ও যুদ্ধবিরতি নিয়ে বহু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাঁকে। যার উত্তর তাঁর কাছে নেই, এমনটাই দাবি বিশেষজ্ঞদের।
নিজের বিদায়ী সাংবাদিক বৈঠকে তো সরাসরি অভিযোগ ও প্রশ্নের মুখেই পড়লেন তিনি। ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োয় স্পষ্ট, সেই প্রশ্নে বৈঠকে নেমে এসেছিল অস্বস্তিকর নৈঃশব্দ। সেই সঙ্গে অবশ্য কার্যত ঘাড়ধাক্কাও দেওয়া হয় সেই সাংবাদিককে।
আগামী ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণ করছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে, বিদায় নেবেন বাইডেন প্রশাসনের অংশ ব্লিঙ্কেন। সেই প্রেক্ষিতেই গত ১৬ জানুয়ারি সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি। তাতে উঠে আসে ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির কথা। বাইডেন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত ও ভূমিকাকে সমর্থন জানিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন ব্লিঙ্কেন, তখনই স্যাম হুসেইনি নামের এক সাংবাদিক তাঁর দিকে সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে দেন। স্যামের প্রশ্ন ছিল, “অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস, সকলেই ক্রমাগত দাবি করেছে যে গাজ়ায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইজ়রায়েল। আর আপনি বলছেন যুদ্ধবিরতির পদ্ধতিকে শ্রদ্ধা করতে?” প্রশ্ন শুনেই হঠাৎ চুপ করে যান ব্লিঙ্কেন।
তার পরেই স্যামকে আসন থেকে তুলে ঘরের বাইরে টানতে টানতে নিয়ে যান এক নিরাপত্তারক্ষী। প্রবল প্রতিবাদে স্যাম জানতে চান, একেই কি বাইডেন প্রশাসন বাক্স্বাধীনতা বলে?
তাতে অবশ্য কোনও লাভ হয়নি, সকলের স্তব্ধ ও স্তম্ভিত চোখের সামনে কার্যত ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়া হয় ওই সাংবাদিককে। দরজা বন্ধ হওয়ার সময় ব্লিঙ্কেনের উদ্দেশে তিক্ত প্রশ্ন ছুড়ে দেন স্যাম, “আপনি এক জন অপরাধী, কেন দ্য হেগ-এ নেই আপনি?” নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগেই ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস।
ঘটনাটার ভিডিয়ো করেন একাধিক সাংবাদিক। তাতেই দেখা গিয়েছে, ব্লিঙ্কেন এই পুরো সময়টিতে অদ্ভুত ভাবে চুপ করে ছিলেন, তবে তাঁর মুখে অস্বস্তি ছিল স্পষ্ট।
স্যামকে বার করে দেওয়ার পরে ব্লিঙ্কেন যখন ফের কথা বলতে শুরু করবেন, তখনই তাঁকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন আর এক সাংবাদিক। ম্যাক্স ব্লুমেনথাল নামের ওই সাংবাদিকের প্রশ্ন, মে মাসে এক বার যুদ্ধবিরতির কথা হলেও কেন ইজ়রায়েল ক্রমাগত হামলা চালিয়ে গিয়েছে গাজ়ায়? সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির কথা হওয়ার পরেও কেন একই জিনিস ঘটেছে? ব্লিঙ্কেনকে ইহুদিরাষ্ট্রপন্থী বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এ-ও বলেন, ব্লিঙ্কেনের পরিজন ইহুদিপন্থী, তাই তিনিও ইহুদিদের হয়ে ভাবেন। এই সাংবাদিক অবশ্য নিজেই পুরো প্রশ্নপর্বের ভিডিয়ো করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। ব্লিঙ্কেনের উদ্দেশে অভিযোগের আঙুল তুলে তিনি বলেন, “গণহত্যার সময় ব্লিঙ্কেন মৃদু হাসি হাসছিলেন।”
ব্লিঙ্কেন অবশ্য পুরো সময়টিতেই শান্ত থাকার চেষ্টা করেছেন। শান্ত ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন কেন বাইডেন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রয়োজনীয় এবং ইজ়রায়েলের সঙ্গে বহু মতপার্থক্য থাকলেও আমেরিকা নেতানিয়াহুকে সমর্থন করে।
এর আগেও এক বিদায়সংবর্ধনায় এক প্যালেস্টাইন সমর্থকের প্রতিবাদের মুখে পড়েন তিনি। ওই সমর্থক তাঁকে বলেন, “আপনাকে ইতিহাস মনে রাখবে গণহত্যার সচিব হিসেবে। আপনার হাত শয়ে শয়ে মানুষের রক্তে ভেজা।” সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ব্লিঙ্কেন সেখানেও শান্ত ভাবে ওই প্রতিবাদীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy