Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

হাসিনার রাস্তাতেই শরিফ, ভরসা পেয়ে নতুন করে পুরনো প্রাপ্য দাবি ঢাকার

রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালিয়া জেলে প্রাক্তন পুলিশ কমান্ডো মুমতাজ কাদরির ফাঁসিতে মৌলবাদী বিক্ষোভ আছড়ে পড়েছে পাকিস্তানে। ২০১১ সালে পঞ্জাব প্রদেশের রাজ্যপাল সলমন তাসিরকে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করে কাদরি। ২৮টি বুলেটে ঝাঁঝরা করে দেয় সলমনকে।

অমিত বসু
শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৬ ১২:৪৯
Share: Save:

রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালিয়া জেলে প্রাক্তন পুলিশ কমান্ডো মুমতাজ কাদরির ফাঁসিতে মৌলবাদী বিক্ষোভ আছড়ে পড়েছে পাকিস্তানে। ২০১১ সালে পঞ্জাব প্রদেশের রাজ্যপাল সলমন তাসিরকে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করে কাদরি। ২৮টি বুলেটে ঝাঁঝরা করে দেয় সলমনকে। ধর্মদ্রোহ আইনের সংস্কার চেয়ে তাসিরের এই পরিণতি। মৌলবাদী কাদরি হত্যা করে অনুতপ্ত তো হয়ইনি বরং আত্মগরিমা প্রকাশ করেছে। কাদরির প্রাণদন্ডে মৌলবাদীদের আক্রোশ বেড়েছে। পারলে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে এখনি ক্ষমতাচ্যুত করে। শরিফ নিশ্চল। মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদকে তিনি যে বরদাস্ত করবেন না সেই বার্তা স্পষ্ট। অর্থাত্ বাংলাদেশের আঁচ লেগেছে পাকিস্তানের গায়ে। তাদের অনুসরণ করছে পাকিস্তান। বাংলাদেশে খুনি মৌলবাদীদের একের পর এক ফাঁসি হচ্ছে। মৌলবাদীরা দাঁত ফোটাতে পারছে না। সাধারণ মানুষ খুশি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তারা সাধুবাদ জানাচ্ছেন। পাকিস্তানে মানুষের প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট নয়। তারা শরিফের পক্ষে না বিপক্ষে জানা যাচ্ছে না। শরিফ অবশ্য জানিয়েছেন, গণতন্ত্রেই তাঁর আস্থা। মানুষের ইচ্ছেকে রূপ দিতে তিনি বদ্ধপরিকর।

শরিফের মনোভাবের ইঙ্গিত পেয়ে বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে পুরোন দাবি নতুন করে তুলে ধরেছে। ১৯৭৩-এর ২৮ আগস্ট বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারতের বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী সেনাকর্তার বিচার করবে পাকিস্তান। তাদের উপযুক্ত শাস্তিও দেওয়া হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে যে ভাবে নৃশংস হত্যাকান্ডে এই পাক সেনাকর্তারা জড়িত ছিল, সতিই তার ক্ষমা নেই। ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে সিদ্ধান্তের পর স্বস্তিতে ছিল বাংলাদেশ। ভেবেছিল পাকিস্তান কথা রাখবে। কিন্তু তা হল না। উল্টে বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়াল পাকিস্তান। অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলিয়ে মৌলবাদ ও সন্ত্রাসে উস্কানি দিতে লাগল। প্রতিবাদ জানিয়ে লাভ হয়নি। সে কাজ তারা করেই যাচ্ছে।

আরও পড়ুন:

জামাতের ডাকা হরতালে সাড়া মিলল না বাংলাদেশে

বাংলাদেশে আটকে থাকা পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথাও ভাবছে না পাকিস্তান। আরও সমস্যা হচ্ছে, বাংলাদেশের পাওনা টাকা দিচ্ছে না তারা। বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান সরকারের প্ল্যানিং কমিশন ১৯৭৪ সালে ২ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা পাওনা দাবি করে পাকিস্তানের কাছে। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের আগে পাকিস্তানের সম্পত্তি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও সম্পদের পরিমাণ হিসেব করে টাকাটা চাওয়া হয়। বর্তমান বিশ্ববাজারে যার মূল্য আরও অনেক বেশি।

এত দিনে পাকিস্তান বাংলাদেশকে দিয়েছে একটি মাত্র পুরোন বোয়িং বিমান। যার আয়ু ছিল সীমাবদ্ধ। পাওনা নিয়ে কথা বলতে গেলেই কানে তুলো গুঁজছে পাকিস্তান। আবার পাওনার কথা অস্বীকারও করছে না। বাংলাদেশের সামনে এখন একটি পথই খোলা। তারা সেই রাস্তাতেই হাঁটতে চাইছে। এবার আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমেরিকা বাংলাদেশের পাশে থাকলে সুবিধে হত। আমেরিকা সব জেনেও চুপ করে আছে। হাসিনা সরকারের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক আপাতত ভাল হলেও, আমেরিকা বাংলাদেশের হয়ে পাকিস্তানকে চাপ দিতে নারাজ। বাংলাদেশ-পাকিস্তান দু’টি দেশকেই হাতে রাখতে আগ্রহী।

ভারত চাইলে এ ব্যাপারে কিছুটা করতে পারত। সেটাও হবে না। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক বিভিন্ন জটিল পথ পরিক্রমা করছে। দুই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, নওয়াজ শরিফ সদ্ভাব রক্ষা করে চললেও, পাকিস্তানের রাজনৈতিক শক্তি ভারতের মতো শক্ত জায়গায় নেই। শরিফের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। তিনি চাইলেও সবকিছু করতে পারেন না। বাধা থাকে। প্রতিকূলতায় সাঁতরাতে গিয়ে বিরুদ্ধ ঢেউয়ে বাধা আটকাচ্ছেন। তবু ২৯ ফেব্রুয়ারি তিনি ইতিহাস রচনা করেছেন মৌলবাদী খুনি কাদরিকে ফাঁসি দিয়ে। এখানে অন্তত হাসিনা-শরিফের দিশা এক। শরিফও জানেন, বাংলাদেশের পথটাই ঠিক। তার বিরুদ্ধে যাওয়া মানে অন্ধকারকে প্রশ্রয় দেওয়া।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE