মলদ্বীপের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মহম্মদ সোলি।-ছবি: নিজস্ব চিত্র।
গণতন্ত্রের জয় মলদ্বীপে। অবসান ঘটতে চলেছে স্বৈরতন্ত্রের। রবিবার সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছিল। ফলাফল বেরিয়েছে সোমবার সকালে। তাতে ধরাশায়ী হয়েছেন আবদুল্লা ইয়ামিন। এতদিন দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।তাঁকে বিপুল ভোটে হারিয়েছেন বিরোধী জোটের প্রার্থী ইব্রাহিম মহম্মদ সোলি। সব কিছু ঠিকঠাক চললে খুব শিগিগির প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন।
সোমবার সাত সকালে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ করে সে দেশের নির্বাচন কমিশন। তাতে দেখা যায়, ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৬১৬ ভোট পেয়েছেন সোলি। প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের প্রাপ্ত ভোট ৯৬ হাজার ১৩২। জরুরি অবস্থার পর এমন ফলাফল অপ্রত্যাশিত ছিল না। তবে ইয়ামিন সরকার জনসাধারণের সিদ্ধান্ত মানবে কি না, তা নিয়ে ধন্দ ছিল। বেলা বাড়তে তা দূর হয়ে যায়।
প্রথমে বিদেশ মন্ত্রক একটি বিবৃতি জারি করে। তাতে বলা হয়, ‘‘মলদ্বীপ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী শ্রদ্ধেয় সোলি নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৬১৬ ভোট পেয়েছেন তিনি।’’ তার বেশ কিছু ক্ষণ পর টেলিভিশনে বিবৃতি দেন আবদুল্লা ইয়ামিন। তিনি বলেন, ‘‘মলদ্বীপবাসী নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। আমি তা মাথা পেতে নিয়েছি। ইব্রাহিম মহম্মদ সোলির সঙ্গে দেখা করেছি আজ। দেশবাসী ওঁকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বেছে নিয়েছেন। তার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছি।’’
আরও পড়ুন: সৌদিতে নারী বিপ্লব! সরকারি চ্যানেলে মহিলা নিউজ অ্যাঙ্করের অভিষেক
আরও পড়ুন: ঘরেই বিদ্ধ, ইমরান মুখ খুললেন
নির্বাচনী ফলাফলকে স্বাগত জানিয়েছে ভারত-সহ গোটা দুনিয়া। খবর পাওয়া মাত্র বিবৃতি জারি করে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। তাতে বলা হয়, ‘‘এই নির্বাচন শুধুমাত্র গণতন্ত্রের জয় নয়। এর ফলে মলদ্বীপে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং আইন শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবেশীকে গুরুত্ব দেওয়ায় বিশ্বাসী আমরা। আশাকরি ভবিষ্যতে একজোট হয়ে কাজ করব আমরা।যাতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত হয়।’ ’
বিরোধী রাজনীতিকদের জেলবন্দী করা, দেশ জুডে় স্বৈরচার কায়েম করা নিয়ে চলতি বছরের শুরুতে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয় ভারত মহাসাগরীয় দেশটিতে। তার জেরে ৪৫ দিনের জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন। তাতে আপত্তি তুলেছিল ভারত-সহ গোটা দুনিয়া। তবে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল চিন। ভারতের সঙ্গে মলদ্বীপের দীর্ঘ বোঝাপড়া সম্পর্কে অবগত ছিল তারা। তাই সুযোগ বুঝে তাতে বাগড়া দিতে নেমে পডে় বলে অভিযোগ। সকলের বিরুদ্ধে গিয়ে ইয়ামিন সরকারের পক্ষ নেয় বেজিং। স্বেচ্ছাচারিতায় মদত দেয়।
তাতে বল পায় আবদুল্লা ইয়ামিনের সরকার। দিল্লির তরফে তাদের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করা হলে, ভারতকে ম্যালে থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার আর্জি জানায় তারা। ভারতের সাহায্যের কোনও প্রয়োজন নেই বলে জানিয়ে দেয়। তবে মলদ্বীপের বিরোধী দলগুলি, এমনকি, সে দেশের নির্বাসিত প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাশিদ তার তীব্র প্রতিবাদ করেন।
আন্তর্জাতিক চোখ রাঙানির জেরে একরকম চাপে পড়েই তাই একে একে বিরোধী রাজনীতিক ও আইনজীবীদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় ইয়ামিন সরকার। সেই পরিস্থিতিতেই নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হয়। ইয়ামিন সরকারের বিরুদ্ধে জোট বাঁধতে শুরু করে বিরোধী দলগুলি। ইব্রাহিম মহম্মদ সোলিকে প্রার্থী ঘোষণা করে। নির্বাচনী প্রচার চলাকালীন তাঁকে গুরুত্বই দেয়নি ইয়ামিন সরকার। রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে কোনও খবর হয়নি। ভোটের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর বিপাকে পড়েছে তারা। সেই সঙ্গে বিপাকে পড়েছে চিনও। নয়া প্রেসিডেন্ট কি তাদের আদৌ গুরুত্ব দেবে? নাকি দুঃসময়ের সঙ্গী ভারতকে প্রাধান্য দেবে? এই চিন্তাই এখন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বেজিংকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy