Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ইউক্রেন জ্বলছে, সঙ্কটে চিড়িয়াখানার পশুরা

কখনও মস্কো, কখনও কিয়েভ। ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে দু’পক্ষের পেশি আস্ফালন চলছেই। কোনও অবস্থাতেই কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে রাজি নয়। আর দু’দেশের এই দড়ি টানাটানির মাসুল গুনছে নিরীহ পশুরা।

সংবাদ সংস্থা
কিয়েভ শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৪ ০৩:৪৯
Share: Save:

কখনও মস্কো, কখনও কিয়েভ। ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে দু’পক্ষের পেশি আস্ফালন চলছেই। কোনও অবস্থাতেই কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে রাজি নয়। আর দু’দেশের এই দড়ি টানাটানির মাসুল গুনছে নিরীহ পশুরা।

পূর্ব-পশ্চিমের দ্বন্দ্বে টানা তিন মাস ধরে ইউক্রেন অশান্ত। আর এই রাজনৈতিক টানাপড়েনে বহু মানুষের যেমন প্রাণ গিয়েছে, তেমনই করুণ দশা এ দেশের চিড়িয়াখানার পশুদের। খারকিভের একটি চিড়িয়াখানার পশুরা এখন উপোস করে দিন কাটাচ্ছে। কার্যত মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুনছে তারা। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, রাজনৈতিক ডামাডোলের ফলে এখানকার পশুরা খাবার পাচ্ছে না। পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর যে পশুগুলিকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।

ওই চিড়িয়াখানার ডিরেক্টর অ্যালেক্সি গ্রিগোরিয়েভ জানাচ্ছেন, তাঁদের কাছে আগামী কাল পর্যন্ত খাবার মজুত রয়েছে। কিন্তু তার পরে কী হবে কেউ জানে না। তাঁর কথায়, “দেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমরা এ বিষয়ে একটি চিঠিও দিয়েছি। আমাদের কাছে অর্থ নেই। পশুদের পর্যাপ্ত খাবার দিতে পারছি না। কালকের পর পশুদের একে একে মরতে দেখতে হবে। এ ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। আমাদের হাত-পা বাঁধা।” পশুদের দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন অ্যালেক্সি। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছেন, গত তিন মাস ধরে কার্যত বিনামূল্যে পশুদের খাবার পাঠিয়েছে সরবরাহকারী সংস্থাটি। কিন্তু এখন তারাও হাত তুলে দিয়েছে। নিখরচায় তারা আর খাবার দিতে পারবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। ফলে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের এখন মাথায় হাত।

অ্যালেক্সি জানাচ্ছেন, চিড়িয়াখানায় একটি গর্ভবতী হাতি আছে। কিন্তু তার খিদে মেটানোর সামর্থ্য তাঁদের নেই। ফলে আর কিছু দিনের মধ্যেই হাতিটি না খেতে পেয়ে মারা যাবে বলে আশঙ্কা করছেন চিড়িয়াখানার ডিরেক্টর। তবে শুধু তো ওই হাতিটা নয়। বাঘ হোক বা সিংহ। চিড়িয়াখানার প্রতিটি পশুই এখন ধুঁকছে। অ্যালেক্সি বললেন, “খাবার দেওয়ার সময় ওদের আচরণ পাল্টে যায়। কিন্তু খেতে না পেয়ে বেজার মুখে ওরা আবার খাঁচায় ফিরে যাচ্ছে।”

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, খারকিভ শহরের প্রশাসন চিড়িয়াখানার পশুদের জন্য অর্থ অনুদান দিয়েছিল। তখন এই জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটা ক্ষীণ আশা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি কিয়েভের অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের প্রয়োজনে সেই অর্থ চেয়ে নিয়েছে। ফলে পশুদের এই দুর্দশা মুক্তির আপাতত কোনও উপায় নেই।

এই পরিস্থিতিতে মস্কোকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়া হবে না বলে আজ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইউক্রেনের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী আরসেনি ইয়াতসেনিয়াক। সেই সঙ্গেই রুশপন্থীদের মিছিল আর পাল্টা মিছিল ঘিরে আজও গোলমাল হয়েছে ইউক্রেনের নানা প্রান্তে। রাজধানী কিয়েভে আজ প্রচুর মানুষের জমায়েত হয়েছিল। ইয়াতসেনিয়াক সেখানেই ইউক্রেনকে তাঁদের নিজেদের জমি বলে হুঙ্কার দিয়েছেন। উল্টো দিকে, পূর্বের ডোনেটস্ক শহরে আবার রুশপন্থীরা বিশাল মিছিল বার করেছিলেন আজই। রুশ পতাকা হাতে নিয়ে মিছিলের মূল ডাকটাই ছিল ‘‘রাশিয়া, রাশিয়া।” ক্রিমিয়ার পশ্চিম প্রান্তে আবার ইউক্রেনের সীমান্তরক্ষীদের পণবন্দি করে রাখার অভিযোগ উঠেছে রুশ সেনা বিরুদ্ধে। ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমী দেশগুলির সঙ্গে কাল রাতেও আলোচনা হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার।

হুমকি আর পাল্টা হুমকি কিন্তু থামার নাম নিচ্ছে না। চিড়িয়াখানার ডিরেক্টর অ্যালেক্সি গ্রিগোরিয়েভ আক্ষেপ করে বলেন, “পশুরা তো কোনও ক্ষমতার জন্য লড়ছে না। তাদের কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শও নেই। তারা শুধু বাঁচতে চায়।” ইউক্রেনে যুযুধান দু’পক্ষের কানে কি বার্তাটা পৌঁছেছে?

অন্য বিষয়গুলি:

ukraine kiev russia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE