Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
TMC

‘তোর বাপকে গিয়ে বল, তোর বাড়ির পাঁচ কিমির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি’: শুভেন্দুকে অভিষেক

অভিষেকের কথায়,‘‘অধিকারী গড় আবার কী? এই জেলা একটা পরিবারের না কি?"

শুভেন্দু অধিকারী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুভেন্দু অধিকারী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁথি শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৯:৫৮
Share: Save:

শুভেন্দু অধিকারী এতদিন পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে যতগুলি অভিযোগ তুলেছেন, শনিবার কাঁথিতে কার্যত শুভেন্দুর পাড়ায় সভা করে তার প্রত্যেকটির ধরে ধরে জবাব দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গেই সরাসরি নাম করে নিশানা করলেন শুভেন্দু এবং তাঁর পরিবারকে।

কাঁথিতে শুভেন্দুর বাড়ি ‘শান্তিকুঞ্জ’-র কয়েক কিলোমিটার দূরে তৃণমূলের বিশাল সভা থেকে অভিষেক বলেছেন, ‘‘এমনিতে তো জোকারের মতো মুখ! তার উপর বড় বড় কথা! আমাকে বলছে যে, ‘এলে দেখে নেব। যদি না শোধরাও, ওই করব, তাই করব। আরে তোর বাপকে গিয়ে বল, তোর বাড়ির পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি! যা করার কর! আয়’! হিম্মত আছে? এই মেদিনীপুরের মাটিতে, তোমার মাটিতে, তোমার পাড়ায় তোমার এলাকায় দাঁড়িয়ে তোমায় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে যাচ্ছি।’’ এরপর তাঁর শ্লেষ, ‘‘চার আনার নকুলদানা, তার আবার ক্যাশমেমো। আমাকে থ্রেট দিচ্ছে! আজকে এলাম। আগামী দু’মাসের মধ্যে আরও পঞ্চাশ বার আসব। জামানত বাজেয়াপ্ত করব।’’

অভিষেকের বক্তৃতার প্রেক্ষিতে শনিবার বিকেলে শুভেন্দু ফেসবুক পেজে ‘তোর বাপকে গিয়ে বল’ মন্তব্যটি উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে— ‘কাঁথির জনসভা থেকে বাংলার সংস্কৃতি’। বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় টুইট করেছেন, ‘মুখের ভাষাতেই প্রমাণ, পিসির যোগ্য উত্তরসূরি। বাংলার মানুষ এই সংস্কৃতিকে মানবে না। ছুড়ে ফেলে দেবে’। শুভেন্দু আগেই বলেছিলেন, ‘‘আমি (অভিষেককে) ‘আপনি’ করে কথা বলি। ওর থেকে আমি ১৮ বছরের বড়।’’ অভিষেকের জবাব, ‘‘আমি কাউকে তুই-তোকারি করি না। কিন্তু বেইমানদের আমি তুই-তোকারি করি।’’

অভিষেকের আরও দাবি, দীর্ঘদিন ধরে বলা হয় মেদিনীপুর না কি অধিকারী পরিবারের ‘গড়’। কিন্তু তাঁর কথায়,‘‘অধিকারী গড় আবার কী? এই জেলা একটা পরিবারের না কি? এই জেলা তো মেদিনীপুরের মানুষের।’’ জনতার উদ্দেশে তাঁর আবেদন, ‘‘জোরে আওয়াজ তুলুন। পাঁচ কিলোমিটার দূরেই তো শান্তিকুঞ্জ। সেটা যেন থরথর করে কাঁপে।’’ শুভেন্দু এবং তাঁর পরিবারকে ‘মিরজাফর অ্যান্ড কোম্পানি’ হিসেবে চিহ্নিত করে ‘মেদিনীপুর থেকে বিতাড়িত’ করারও আহ্বান জানান অভিষেক। সারদা-কাণ্ডে প্রতারিতদের ‘পরামর্শ’ দেন ‘গদ্দার’-দের বাড়ি ঘেরাও করতে। তবে সেই সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘বাড়িতে বয়স্ক লোক রয়েছে। মাইকের আওয়াজ যাচ্ছে। আমি চাই না কোনও অঘটন ঘটুক।’’

গরুপাচার কাণ্ডে ধৃত এনামুল হকের সঙ্গে তৃণমূলের ‘যোগাযোগ’ নিয়ে শুভেন্দুর অভিযোগের জবাব তিনি ঠিক সময়ে দিয়ে দেবেন জানিয়েছেন অভিষেক। তাঁর মন্তব্য, ‘একদিনে সব দিয়ে দিলে হজম হবে না।’’ বরং তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ছ’মাস আগে যে বলত ‘বিজেপি হটাও, দেশ বাঁচাও। সে এখন বলছে, ‘তৃণমূল হটাও’। কেন? ডবল ইঞ্জিন সরকার হলে চুরি করতে সুবিধা হবে?’’

সম্প্রতি তমলুকের সভায় শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘‘তাইল্যান্ডের সিয়াম প্যারাগন ব্র্যাঞ্চে ম্যাডাম নারোলার (অভিষেকের স্ত্রী) নামে অ্যাকাউন্টে প্রত্যেক মাসে ৩৬ লক্ষ টাকা করে ঢুকেছে।’’ কাঁথিতে অভিষেকের জবাব, ‘‘এখন আবার আমার সঙ্গে লড়াই না করে আমার বউকে টার্গেট করেছে! বলছে, আমার বউয়ের নাকি এখানে অ্যাকাউন্ট আছে। সেখানে অ্যাকাউন্ট আছে। আরে, আমার বউয়ের কলকাতা ছাড়া কোথাও অ্যাকাউন্ট নেই! আমি তো তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়েছি।’’ শুভেন্দুর তোলা কলকাতা বিমানবন্দরে সোনা পাচারের অভিযোগ সম্পর্কে ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘আমার বউ নাকি দু’বছর আগে এয়ারপোর্টে সোনা নিয়ে ধরা পড়েছিল। তোর সিআইএসএফ আর সিবিআই কি নাকে নস্যি দিয়ে ঘুমোচ্ছিল? এয়ারপোর্টে তো ৫০০ সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। আমি তো চ্যালেঞ্জ করছি। সিসিটিভি-র ফুটেজ থাকলে কেন প্রকাশ্যে আনছ না?’’ এর পরেই তোলাবাজির অভিযোগ সম্পর্কে তাঁর জবাব, ‘‘আমার তোলাবাজির প্রমাণ দিতে পারলে আমি বলব, আমাকে দাঁড় করিয়ে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে চলো।’’

কাঁথির জনসভায় অভিষেক বক্তৃতা করেছেন প্রায় ২৮ মিনিট। খানিকটা উত্তেজিতই দেখিয়েছে তাঁকে। বলেছেন, ‘‘আমার এখানে সভা আছে, সাতদিন-আট দিন আগে বলেছিলাম। ফেসবুকে আবার অনেকে ভিডিয়ো ছাড়ছে, যাতে আমি ভয়ে এখানে না আসি। আমাকে ভয় দেখাবে ভাবছে!’’ ঘটনাচক্রে, এর আগে শেষ বার ২০১৫-র জানুয়ারিতে পূর্ব মেদিনীপুরে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন অভিষেক। নন্দকুমার-দিঘা জাতীয় সড়কের ধারে মঠ চণ্ডীপুরে সভায় মঞ্চের উপরেই অভিষেকের উপর হামলা চালিয়েছিল এক যুবক। হামলাকারী সেই যুবকের একটি ভিডিয়ো সম্প্রতি বিতর্ক তৈরি করে। বিজেপি-তে যোগ দেওয়া শুভেন্দু-অনুগামী কণিষ্ক পণ্ডা হামলাকারী ওই যুবককে পাশে বসিয়ে নেটমাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিয়োতে কটাক্ষ করেন অভিষেককে। এ নিয়ে পুলিশে অভিযোগ জানান কাঁথির তৃণমূল নেতারা।

শুভেন্দুর ‘ভাইপো’ আক্রমণের জবাবে অভিষেক বলেন, ‘‘কথায় কথায় কী বলছে! ঘুমোচ্ছে ভাইপো, সকালে উঠছে হাঁটছে ভাইপো, খাচ্ছে ভাইপো। আতঙ্ক হয়ে গিয়েছে। ১৫ মিনিট বক্তৃতা করলে ১০ মিনিট খালি ভাইপো-ভাইপো করছে। এত ভয়!’’ শুভেন্দুর ‘তোলাবাজ’ প্রচারের জবাবে বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটকে লেখা জেলবন্দি সুদীপ্ত সেনের চিঠির প্রসঙ্গ তুলে অভিষেক বলেছেন, শুভেন্দু সারদা-কর্তার থেকে ৬ কোটি টাকা নিয়েছেন। এমনকি, সুদীপ্ত ফেরার হওয়ার আগের দিনও কাঁথির নেতা তাঁর কাছে টাকা নিতে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন তৃণমূল সাংসদ। সারদাকর্তা সোমনাথ দত্ত কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের (শুভেন্দু যে ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান) কোন পদে ছিলেন, সে প্রশ্নও তোলেন অভিষেক।

অভিষেকের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া শনিবার এক লাইনেই সেরেছেন শুভেন্দু। তা-ও নেটমাধ্যমে। এখন দেখার, প্রকাশ্য সভা থেকে তিনি কিছু বলেন কি না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy