দেশের পার্বত্য এলাকা, ‘সম্ভাবনাময়’ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলিতে বিমানবন্দর উন্নয়নের কথা শনিবার কেন্দ্রীয় বাজেটে ঘোষণা হয়েছে। ‘উড়ান’ প্রকল্পের আওতায় বাজেটে হেলিপ্যাড থেকে ছোট বিমানবন্দরের উন্নতিকরণের কথা বলা হলেও, এ রাজ্যের জন্য আলাদা ঘোষণা নেই। আবার পুরনো ছোট বিমানবন্দরগুলির কী হবে, স্পষ্ট নয় তা-ও। সে সূত্রে তরজা শুরু হয়েছে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে।
কলকাতার পরে, রাজ্যের একমাত্র বাণিজ্য-সফল বিমানবন্দর বাগডোগরা। উত্তরবঙ্গে কোচবিহার বিমানবন্দর চালু থাকলেও, তা নির্ভরশীল একটি মাত্র উড়ানের উপরে। বালুরঘাট, মালদহ বিমানবন্দর নিয়ে স্পষ্ট ঘোষণা বাজেটে হয়নি। পুরুলিয়া নিয়ে সমীক্ষা-পরিদর্শন হলেও এখনও তা নিয়ে কিছু বলা হয়নি। তাই নতুন বাজেট ঘোষণায় এ রাজ্যে কাজ চলতে থাকা বা তৈরি হয়ে পড়ে থাকা বিমানবন্দরগুলির আদতে কী হবে, তা নিয়ে ধন্দ বর্তমান।
যদিও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের দাবি, ‘সম্ভাবনাময়’ জেলার প্রকল্পে রাজ্য সরকার এখনও যোগ দেয়নি। তিনি বলেন, ‘‘উড়ান প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় বালুরঘাট বিমানবন্দরটিকে উন্নয়নের তালিকায় আনতে হবে।’’ দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক বার বার বিমানবন্দরটি পরিদর্শন করেছে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি।
একই অবস্থা পুরুলিয়ার। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া’র এক প্রতিনিধি দল পুরুলিয়ায় এয়ারস্ট্রিপ পরিদর্শন করে। ওই বছরেই সেপ্টেম্বরে তৃণমূলের এক প্রতিনিধি দল নয়াদিল্লিতে তৎকালীন অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার সঙ্গে দেখা করে রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় বিমানবন্দর গড়ার প্রস্তাব দেয়। সূত্রের খবর, সে তালিকায় পুরুলিয়ার ছড়রার নামও ছিল। ‘ফেডারেশন অব মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম ইন্ডাস্ট্রি’র পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক মনোজ ফোগলা বলেন, “এয়ারস্ট্রিপটি চালু হলে যোগাযোগের প্রশ্নে পুরুলিয়া এগিয়ে যেত।’’ পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো বলছেন, ‘‘এয়ারস্ট্রিপটি বর্তমানে রাজ্যের আওতায় রয়েছে। কেন্দ্রের তরফে রাজ্যকে চিঠি দেওয়া হলেও, রাজ্যের সাড়া মেলেনি।”
উত্তরের কোচবিহার বিমানবন্দর কোনও ভাবে চলছে। মালদহ বিমানবন্দরে আড়াই কোটি টাকা খরচে রানওয়ে তৈরি হলেও শৌচাগার, পার্কিং জ়োন, দমকল কেন্দ্রের মতো পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। সে পরিকাঠামো হলে, ১৯ আসনের বিমান ওঠানামা করতে পারবে। বাজেটের ঘোষণায় সম্ভাবনার কথা থাকলেও, তাতে কতটা কাজ হবে সে প্রশ্ন করছে রাজ্যের শাসক দল। তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের অন্যতম মুখপাত্র তথা শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গৌতম দেব বলেছেন, ‘‘পুরোটাই কাগজে আর প্রচারে চলছে। কাজের কাজ কী হচ্ছে, তা মানুষ গত বছরগুলির অভিজ্ঞতা থেকে দেখতেই পাচ্ছেন।’’
যদিও রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, ‘‘কলকাতার কাছে ভাঙড়, খড়্গপুরে কলাইকুন্ডা, উত্তরবঙ্গের বাগডোগরা, হাসিমারায় বিমানবন্দরের উন্নয়নে জমি দেয়নি রাজ্য। তৃণমূলকে বলব, কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলুন।’’ রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘২০১৬ সালে এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার কাছ থেকে ৩০ বছরের জন্য মালদহ বিমানবন্দর লিজ় নেওয়ার পরেও, এক ছটাক রানওয়ে কেন তৈরি করা গেল না? রাজ্যকে এ সবের জবাব দিতে হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)