বাকিবুর রহমানকে যখন রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে পাকড়াও করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা, তখনই তাঁর সঙ্গে প্রভাবশালীদের যোগের কথা উঠেছিল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও তাঁর আপ্ত সহায়কের বাড়িতে তল্লাশি শুরু করে ইডি। তখনই হাবড়ার লোকজনের মুখে মুখে বাকিবুর ও জ্যোতিপ্রিয়ের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। হাবড়ার বাসিন্দাদের দাবি, সেখানে জ্যোতিপ্রিয় ও বাকিবুরকে কখনও একসঙ্গে দেখা যায়নি। যদিও দু’জনের ঘনিষ্ঠতার কথা অনেকেরই শোনা।
হাবড়া-সহ গোটা উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় জ্যোতিপ্রিয়ের প্রভাব রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতিও ছিলেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের নেতা-কর্মীদের কাছে তিনি এখনও প্রভাবশালী। সেই জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে তল্লাশি শুরু হলে জেলা জুড়ে তৃণমূলে চর্চা চললেও সংবাদ মাধ্যমের সামনে নেতাদের মুখে কুলুপ।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ছেড়ে কথা বলছে না। হাবড়ার বিজেপি নেতা বিপ্লব হালদার বলেন, “জেলার সরবরাহকারীদের একাংশ মন্ত্রীকে উপঢৌকন দিয়ে রেশনের চাল-আটা ওজনে কম দিতেন। তবে আমি কখনও বাকিবুর ও মন্ত্রীকে প্রকাশ্যে একসঙ্গে দেখিনি। তাঁদের সখ্যের কথা শুনেছি।” হাবড়ার সিপিএম নেতা আশুতোষ রায়চৌধুরীর দাবি, বাকিবুর রেশন দুর্নীতির ডুবন্ত হিমশৈলের চূড়ামাত্র। হাবড়ায় এমন অনেক বাকিবুর রয়েছেন। তিনি বলেন, “তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী বা প্রশাসনের মদত ছাড়া এত বড় রেশন দুর্নীতি সম্ভব ছিল না।’’ আশুতোষও জানান, মন্ত্রীর সঙ্গে বাকিবুরকে কখনও দেখেননি। তবে বাকিবুর হাবড়া চালের বাজারে নিয়মিত আসতেন বলে শুনেছেন।
স্থানীয়দের দাবি, ২০২০ সালে হাবড়ায় রেশনপণ্যের বেআইনি মজুতের ঘটনা সামনে আসে। জয়গাছি রথতলা এলাকার গুদামে হানা দিয়ে প্রচুর খাদ্যসামগ্রী উদ্ধার করে পুলিশ। দু’জন গ্রেফতারও হয়। আশুতোষ বলেন, “ধৃতদের পরে কী হয়েছিল, তার কোনও খোঁজ মেলেনি।”
কী ভাবে চলত দুর্নীতি? ইডির নথিতে বলা হয়েছে, মিল মালিকেরা সরকারি টাকা মিলিয়ে নিলেও মিলত না সরবরাহকৃত রেশনের হিসেব। প্রতি কেজি আটার দামে অন্তত ২০০ গ্রাম কম দিতেন আটা কলের মালিকেরা। কখনও প্রতি কেজিতে ৪০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনে কম দেওয়া হত। দাবি, পুরোটাই চলত মিল মালিক ও সরকারি সরবরাহকারীদের বোঝাপড়ায়। সঠিক দামে কম আটা বুঝে নেওয়ার ভাল দাম পেতেন রেশনের সরকারি সরবরাহকারীরা।
জ্যোতিপ্রিয়ের বাকিবুর-যোগ নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে ইডি। তবে এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী। তৃণমূলের এক প্রভাবশালী জেলা নেতার কথায়, “আমাকে এ সবে জড়াবেন না।’’ বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে হাবড়া শহরে পুজোর বিসর্জনের কার্নিভালের আয়োজন করা হয়েছিল। সূত্রের খবর, এ বার কার্নিভালে আসার কথা ছিল জ্যোতিপ্রিয়ের। শেষ পর্যন্ত আসেননি। হাবড়ার পুরপ্রধান নারায়ণ সাহা অবশ্য বলেন, “মন্ত্রীর কার্নিভালে আসার কোনও কথা ছিল না। তিনি গত বারেও আসেননি।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)