গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
রাজভবনের বিজ্ঞপ্তির পাল্টা চিঠি দিল বিকাশ ভবন। রাজভবনের সচিবালয়ে পাঠানো হয়েছে সেই চিঠি। রাজ্যপালের সিনিয়র স্পেশ্যাল সেক্রেটারির কাছে। তার প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের। চিঠিতে বিকাশ ভবন জানিয়েছে, গত ২ সেপ্টেম্বর যে বিজ্ঞপ্তিটি রাজভবন থেকে জারি করা হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ বেআইনি। রাজ্যে এ সংক্রান্ত যে আইন রয়েছে, তা ভাঙা হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
রাজভবনের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, আচার্যের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সার্বভৌম অধিকর্তা হলেন উপাচার্যই। তাঁর অধীনস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা তাঁরই নির্দেশ মেনে কাজ করবেন। সরকার তাঁদের নির্দেশ দিতেই পারে। কিন্তু সেই নির্দেশ তাঁরা মানতে বাধ্য নন। গত ২ সেপ্টেম্বর জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আসার পরে শিক্ষাজগতের অনেকেই মনে করেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ কার্যত শূন্যে নামিয়ে আনল রাজভবন। এমনকি, উচ্চ শিক্ষা দফতরকে ওই নির্দেশে অপাঙ্ক্তেয় করে দেওয়া হয়েছে বলেও মত দেন অনেকে। কিন্তু সোমবার সেই বিজ্ঞপ্তির পাল্টা চিঠি দিয়ে বিকাশ ভবন জানিয়ে দিল, রাজভবন যা করেছে, তা মেনে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। রাজভবনের সেই ক্ষমতাই নেই। এ সংক্রান্ত আইন এবং তার বিশদ ব্যাখ্যা-সহ ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে প্রাপকদের।
কী আছে সেই চিঠিতে?
প্রথমেই বিকাশ ভবন জানিয়েছে, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্যের ক্ষমতা সংক্রান্ত আইনের কথা। রাজ্য সরকারের বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত দফতরের বিশেষ কমিশনারের স্বাক্ষর সম্বলিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালেই এ সংক্রান্ত আইন (ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটিজ রুলজ ২০১৯) প্রণয়ন করা হয়েছিল। ওই আইনের ৮(৫) ধারা অনুযায়ী, আচার্য যে কোনও সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে চাইলে তা করতে হবে শিক্ষা দফতর মারফত। সেই নির্দেশ তখনই কার্যকর হবে যদি তাতে শিক্ষা দফতরের সায় থাকে। আইনে রয়েছে, আচার্যের কোনও সচিবালয়ও থাকবে না।
বিকাশ ভবনের ব্যাখ্যা
রাজভবন এবং উপাচার্যদের পাঠানো ওই চিঠিতে বিকাশ ভবন ওই আইনের ব্যাখ্যাও দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে—
১। আচার্য যে সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উদ্দেশে বিজ্ঞপ্তিটি জারি করেছেন, আইন অনুযায়ী সেটি উচ্চশিক্ষা দফতর মারফত জারি করা উচিত ছিল। কিন্তু আদতে তা হয়নি।
২। আইন অনুযায়ী, আচার্যের নির্দেশে পদক্ষেপ করা যাবে তখনই, যদি সেই নির্দেশে শিক্ষা দফতর মান্যতা দেয়। কিন্তু ওই বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষা দফতর কোনও সিলমোহর দেয়নি। তাই ওই নির্দেশ কার্যকর করার প্রশ্নই ওঠে না।
৩। ২০১৯ সালে তৈরি ওই আইন এখনও সর্বার্থে জারি রয়েছে।অথচ বিজ্ঞপ্তি জারি করার সময়ে তা মানা হয়নি।
৪। রাজ্য সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির যে নিজস্ব আইন, সেখানেও বলা হয়েছে, আচার্যের ক্ষমতার কথা। রাজ্যপালই আচার্য, তবে তিনি তাঁর ক্ষমতা ততটাই প্রয়োগ করতে পারবেন, যতটা ওই আইনে তাঁকে দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের কোনও সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়ই আচার্যকে এই ধরনের বিজ্ঞপ্তি জারি করার ক্ষমতা দেয়নি।
৫। তা ছাড়া, যে বিজ্ঞপ্তিটির কথা বলা হচ্ছে, সেটি রাজ্যপালের সচিবালয় থেকে জারি করা হয়েছে। তাতে সই রয়েছে রাজ্যপালের সিনিয়র স্পেশ্যাল সেক্রেটারির। তিনি এ ধরনের কোনও নির্দেশ জারি করতে পারেন না।
৬। মনে রাখতে হবে রাজ্যপাল রাজ্যের আইনসভার লিখিত আইনে তৈরি একটি পদ। তিনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হিসাবে কাজ করবেন, তখন রাজ্যপাল হিসাবে কাজ করতে পারেন না।
সোমবার বিকাশ ভবনের তরফে এই ছ’টি কারণ দেখিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘গত ২ সেপ্টেম্বর রাজভবনের সচিবালয়ের তরফে সিনিয়র স্পেশ্যাল সেক্রেটারি যে বিজ্ঞপ্তিটি জারি করেছেন, তা নিয়ে রাজ্যপোষিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পদক্ষেপ করার প্রয়োজন নেই।’’
বিজ্ঞপ্তির দ্বিতীয়াংশের জবাব
ওই বিজ্ঞপ্তিতেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর জারি করা একটি নির্দেশ নিয়েও আপত্তি তোলা হয়েছিল রাজভবনের তরফে। ঝাড়গ্রামে গিয়ে সাধু রামচাঁদ মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন প্রশাসনিক শূন্যপদ পূরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয় বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে। এমনকি, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক এবং ফিনান্স অফিসারকেও নিয়ে যাওয়া হয় ঝাড়গ্রামের বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে। বিজ্ঞপ্তিতে এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশের কথা উল্লেখ করে রাজভবন জানিয়েছিল, এই নির্দেশ রাজ্য দিতে পারে না। উচ্চ শিক্ষাসচিবের এই কাজ করার অধিকার নেই। নিয়ম মেতাবেক, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার যাচ্ছেন, যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাচ্ছেন এবং যিনি রেজিস্ট্রার, তাঁদের মধ্যে আলোচনা করেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সোমবার বিকাশ ভবনের চিঠিতে এই আপত্তিরও পাল্টা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। বিকাশ ভবন জানিয়েছে, গত ৯ অগস্ট এ ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা কোনও ভাবেই ওই দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার ভঙ্গ করে না। কারণ যাঁদের ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবেই দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি, ওই দায়িত্ব ছিল সাময়িক। সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থেই ওই পদক্ষেপ করা হয়েছিল বলেও জানিয়েছে বিকাশ ভবন।
কী করণীয়
সোমবার রাজভবনকে লেখা চিঠিতেবিকাশ ভবন জানিয়েছে, এই ‘বেআইনি’ কাজের সমাধান করতে কী করতে হবে রাজভবনকে। রাজভবনের সচিবলয়কে লেখা চিঠিতে বিকাশ ভবন বলেছে, ‘‘উপরোক্ত পরিস্থিতির সাপেক্ষে রাজ্যপালের সচিবালয়কে অনুরোধ, তাঁরা যেন গত ২ সেপ্টেম্বরে জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তি রাজ্যপালের কাছে পাঠান, যাতে তিনি ওই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করতে পারেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy