সাহায্য: ত্রাণের ভরসায় দিন কাটছে মন্দারমণি ও কালিন্দী গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের। ছবি: সুমন বল্লভ
ভুবনেশ্বরী জয়কৃষ্ণ স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে কুলতলির পশ্চিম দেবীপুরের তনুশ্রী জানা। ইয়াসে মাতলা নদীর বাঁধ ভেঙে ভেসে গিয়েছে তাদের মাটির বাড়ি। দিনকয়েক আগে স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের অ্যাডমিড কার্ড দিয়েছিল। সেই কার্ড-সহ বইখাতা— সবই ভেসে গিয়েছে নোনা জলে। তনুশ্রীর কথায়, “এত দিন ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছি। পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাক চাই না। বন্ধুদের থেকে বই জোগাড় করে ঠিক পড়ে নেব। চিন্তা অ্যাডমিট কার্ডটা নিয়ে।”
পরীক্ষার ক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতি যেমন খতিয়ে দেখতে হচ্ছে, তেমনই ইয়াস-বিধ্বস্ত জেলার পড়ুয়াদের সমস্যার কথাও উঠে আসছে। এ দিন ইয়াস-বিধ্বস্ত এলাকার বহু পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তনুশ্রীদের মতো অনেকেই চান পরীক্ষা হোক। তবে সমস্যা যে রয়েছে, তা-ও মনে করিয়ে দিচ্ছেন অনেকে।
গোসাবার রানিপুরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সুলগ্না সর্দার বলেন, “নদীর জল ঢুকে বাড়িঘর ভেসেছে। তবুও আমরা চাই পরীক্ষাটা হোক। আমাদের অনেক অসুবিধা আছে ঠিকই, তবু পরীক্ষা দিতে পারব।” পাখিরালয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সুমিত জানার বাবা অভয়বাবু বলেন, “স্কুল দীর্ঘদিন বন্ধ। অনেক কষ্টে অনলাইনের মাধ্যমে পড়াশোনা করেছে সকলে। পরীক্ষাটা হোক।”
ইয়াস-বিধ্বস্ত হাসনাবাদের বাঁশতলি বিশ্বাসপাড়ার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মৌসুমী বিশ্বাস বলেন, “বইপত্র অনেকগুলিই ভেসে গিয়েছে। ঘর হারিয়ে ত্রিপলের ছাউনিতে আছি। কোনও ক্লাব বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ত্রাণ দিতে এলেই ছুটতে হচ্ছে। না হলে খাওয়াটা জুটবে না। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে যে পরীক্ষা দেব ভাবতে পারছি না।” হিঙ্গলগঞ্জের স্যান্ডেলের বিল এলাকার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সুচরিতা মণ্ডল বলেন, “ত্রাণ শিবিরে আছি। বইখাতা নিয়ে এসেছি। কিন্তু এত মানুষের মাঝে পড়াশোনা করতে পারছি না।” রূপমারি হাই স্কুলের শিক্ষক সুধাংশুশেখর মণ্ডল বলেন, “ত্রাণ শিবিরে পড়াশোনার উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। এই অবস্থায় পরীক্ষা দেওয়া প্রায় অসম্ভব।” রূপমারি পঞ্চায়েতেরই হলদা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাফুজ আহমেদ বলেন, “এখন তো আমাদের বেশির ভাগ পরীক্ষার্থী ত্রাণ শিবিরে আছে। তবে একমাস পরে হলেও পরীক্ষাটা নেওয়া হোক। করোনা-বিধি মেনে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে আমরা শিক্ষকরা প্রস্তুত।” সাগরদ্বীপের খান সাহেব আবাদ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়দেব দাস বলেন, “পরীক্ষা এই মুহূর্তে কোনও মতেই সম্ভব নয়। পুজোর পরেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হোক।”
ঘরবাড়ি হারিয়ে ত্রাণ শিবিরে বা ত্রিপলের ছাউনিতে দিন কাটছে পূর্ব মেদিনীপুরের ইয়াস-বিধ্বস্ত উপকূলের বহু ছাত্রছাত্রীরই। সমস্যায় থাকলেও এদেরও বেশিরভাগই কিন্তু চায় পরীক্ষাটা হোক। কাঁথি-১ ব্লকের শৌলা গ্রামের বাসিন্দা পিউ পাত্র এ বার মাধ্যমিক দেবে। তার কথায়, “পরীক্ষা হওয়াটাই একান্তই দরকার। অনলাইন পদ্ধতিতে কিংবা নিজের স্কুলে পরীক্ষা হলে সুবিধা হয়।”
পিউ যে স্কুলের ছাত্রী, সেই নয়াপুট সুধীর কুমার হাই স্কুলের উদ্যোগে দুর্গত ছাত্রছাত্রীদের এলাকায় গিয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা চালু হয়েছে। ভেজা বইখাতা শুকিয়েই চলছে পড়াশোনা। প্রধান শিক্ষক বসন্তকুমার ঘোড়ই বলেন, “মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিকল্প কোনও ব্যবস্থা নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy