সন্দেশখালির সভায় মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
হতাশা ঝেড়ে ওঁরা এসেছিলেন। ফিরলেন হতাশ হয়ে।
বছরের গোড়ায় জমি-আন্দোলন পর্বে আন্দোলনকারীরা (যাঁদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মহিলা) চেয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক বার সন্দেশখালিতে আসুন। না আসায় হতাশ হয়েছিলেন। তার পরেও সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনতে আন্দোলনকারী মহিলাদের অনেকে জড়ো হয়েছিলেন সন্দেশখালির ঋষি অরবিন্দ মিশনের মাঠে। চেয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে ‘অত্যাচার’ নিয়ে কথা বলতে। সেই সুযোগ হয়নি। প্রায় ৪০ মিনিটের বক্তব্যে এলাকায় জমি লুট, নারী নির্যাতনের অভিযোগ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি কিছু না বলায় ওই মহিলাদের কণ্ঠে হতাশা। মুখ্যমন্ত্রীর এই ‘নীরবতায়’ কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর টিপ্পনী, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সড়কপথে যাওয়া উচিত ছিল সন্দেশখালিতে। অধিকাংশ এলাকা ওঁর ভোট-ব্যাঙ্ক। পুষ্পবৃষ্টির মধ্য দিয়েই যেতেন।’’
সন্দেশখালি ছাড়াও বসিরহাট মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে মানুষ সভায় এসেছিলেন। পুলিশের দাবি, সংখ্যাটা প্রায় ২৫ হাজার। স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান ও তাঁর দলবলের ‘অত্যাচারের’ বিরুদ্ধে আন্দোলনে শামিল হওয়া দীপালি মণ্ডল ছিলেন সভাস্থলে। তাঁর খেদ, ‘‘আশা করে এসেছিলাম মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনতে। কিন্তু আমাদের উপরে নির্যাতন নিয়ে কিছু বললেন না।’’ কমলিকা সর্দার নামে আর এক মহিলার কথায়, ‘‘এখানে শুধু মহিলাদের সম্মানহানিই হয়নি, প্রচুর জমি কেড়েছে শেখ শাহজাহানের বাহিনী। তা নিয়ে কিছু বললেন না মুখ্যমন্ত্রী। কোথায় যাব তা হলে আমরা?’’
শাহজাহান বা তাঁর কাকা শেখ জব্বারের বিরুদ্ধে নতুন করে শাসানি দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে মুখ না খুললেও মুখ্যমন্ত্রী গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করেছেন। কখনও বলেছেন, ‘‘আমি আপনাদের পাহারাদার হিসেবে কাজ করি।’’ কখনও বলেছেন, ‘‘অত্যাচার, কুৎসা, অপপ্রচার ভেঙে ফেলুন। ধ্বংস নয়, সৃষ্টি চাই। ভয় পাবেন না। এগিয়ে চলুন।’’ তবে তাতে মন ভরেনি হালদারপাড়া, পাত্রপাড়া, ঝুপখালি, জেলেখালি থেকে আসা অনেক প্রতিবাদী মহিলার। তাঁদের মধ্যে অন্যতম রত্না দলুই বলেন, ‘‘এখনও রাত হলে দুষ্কৃতীদের হুমকি শুনতে হয়। জমি দখল হয়। মেছোভেড়ি লুট হচ্ছে। তাই আশা নিয়ে এসেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী সে সব নিয়ে কিছু না বলায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি।’’
বিজেপি নেতা পলাশ সরকারের দাবি, ‘‘সন্দেশখালির মা-বোনেরা চেয়েছিলেন তাঁদের উপরে হওয়া নির্যাতনের কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতে। তাঁরা হতাশ।’’ সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর মুখে সন্ত্রাসের কথা না থাকায় বোঝা যাচ্ছে, শাহজাহানেরা তৃণমূলের সম্পদ।’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি (গ্রামীণ) অমিত মজুমদারের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চান না সন্দেশখালি সন্ত্রাসমুক্ত হোক বা সেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক।’’ সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতোর পাল্টা দাবি, ‘‘মানুষ শান্তিতে আছেন। তাঁদের জমি, মেছোভেড়ি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আসায় মানুষ খুশি হয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy