একটি স্কুল ছাত্রদের ক্লাসে প্রশ্ন করতে উৎসাহ দেয়। আর একটি স্কুলে সেই সঙ্গে প্রতি দিন ক্লাস শুরুর সময় শিক্ষকেরা শোনাতেন প্রাক্তনীদের সাফল্যদের কথা। রাজ্যের দুই প্রান্তের এই দু’টি বিদ্যালয় বাঁকু়ড়া জেলা স্কুল ও কোচবিহারের জেনকিন্স থেকে এ বার মিলিত ভাবে মাধ্যমিকের প্রথম দশ জনের মধ্যে রয়েছে ১৪ জন ছাত্র।
সব মিলিয়েও এই দু’টি স্কুলের ফল বেশ ভাল। দু’টি স্কুলই এলাকাবাসীর কাছে গর্বের। গত দু’দশকে বাঁকুড়া জেলা স্কুলের পাঁচ জন মাধ্যমিকে রাজ্যে প্রথম হয়েছে। প্রায় প্রতি বছরই এই স্কুলের একাধিক ছাত্রের নাম রাজ্যের প্রথম দশ জনের মধ্যে উঠে এসেছে। তবে এ বারের চোখ ধাঁধানো সাফল্য মিলেছে। মেধা তালিকায় প্রথম, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও দশম স্থানে এই স্কুল থেকে মোট ন’জনের নাম রয়েছে।
সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন
কী করে ধারাবাহিক ভাবে এই সাফল্য ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে? স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণধন ঘোষের জবাব, ‘‘আমাদের ছাত্রদের জানার খিদে বেশি। আমরা তাদের সে ভাবেই তৈরি করি।’’ শিক্ষকেরা জানান, ক্লাসে ছাত্রদের কাছ থেকে পরপর প্রশ্ন আসতে শুরু করে। ধৈর্য ধরে সব প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়। দেখা হয়, সে প্রশ্নের উত্তর ছাত্র ঠিকঠাক বুঝেছে কি না, তা-ও। কৃষ্ণধনবাবুর কথায়, ‘‘তাই আমাদের ছাত্ররা একধাপ এগিয়ে থাকে।’’
সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে স্কুলের পরিবেশ। ছাত্রদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা রয়েছে। সুরজিৎ লোহার, শুভদীপ মণ্ডল, জয়প্রকাশ বিটরা জানিয়েছে, তারা পরস্পরকে সাহায্য করত। কিন্তু একে অপরকে টপকে যাওয়ার প্রতিযোগিতাও ছিল। তাতে স্কুলের তরফেও ইন্ধন জোগানো হয়। কৃষ্ণধনবাবু বলেন, ‘‘এর ফলেই ওদের সেরাটা বেরিয়ে আসে।’’
জেনকিন্সে ছাত্রদের এই ইন্ধনটা দেওয়া হয় অতীত সাফল্যের কাহিনি শুনিয়ে। ১৮৬১ সালে মহারাজা নরেন্দ্রনারায়ণের উদ্যোগে তৈরি এই স্কুলের ছাত্রেরাও বরাবর মেধা তালিকায় স্থান করে নেয়। রাজ্যে প্রথম হওয়ার শিরোপাও মিলেছিল একবার। কিন্তু ‘টিম জেনকিন্স’ এ বার সব সাফল্যকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। মেধা তালিকার চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম এবং নবম স্থানে রয়েছে এই স্কুলের মোট পাঁচ ছাত্র। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এ বছর যারা দশম শ্রেণিতে উঠল, তাদের এ বার আমরা এই পাঁচ ছাত্রের কথা বলে উৎসাহ দেব।’’ বলা হবে, এই পাঁচ জন মাধ্যমিকের জন্য ঠিক কী কী ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিল তা-ও। এই স্কুলেও ক্লাসে ছাত্রদের প্রশ্ন করতে উৎসাহ দেওয়া হয়।
স্কুলের শিক্ষক প্রভাতকুমার রায়ের কথায়, ‘‘আসলে এটা দলগত সাফল্য। ছাত্রেরা খেটেছে। আমরা পাশে থেকেছি। পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে ওদের মনকে উজ্জীবিত করতে চেয়েছি।’’ তাই নিয়ম করে শিক্ষকরা স্বল্প সময়ের জন্য হলেও ছাত্রদের বলতেন পুরনো দিনের সফল ছাত্রদের কাহিনি। তাতেই কাজ হয়েছে।
এদিন সকালে রেজাল্ট জানাজানি হওয়ার পর থেকেই মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে দুই স্কুলের শিক্ষকদেরই। ছাত্ররাও পৌঁছে যায় স্কুলে। খুশিতে ফেটে পড়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। কতবার দেখা মুখগুলো আরেকবার ভাল করে দেখে নিতে চাইছিল সকলে। যেন উৎসবের মেজাজ চলে আসে। পড়াশোনার পরিবেশও ছিল না এ দিন। তবে কোনও স্কুলই ছুটি দেওয়া হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy