প্রতীকী ছবি
রদিপুর, বড়জোলের পরে এ বার তারাপীঠ। ফের খুনের অভিযোগকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল।
শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে একশো মিটার দূরত্বে পুকুর থেকে এক যুবকের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার হয় তারাপীঠ থানার খামেড্ডা গ্রামে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম চন্দন মাল (৩২)। পেশায় টোটোচালক চন্দন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাতে ফেরেনি। এ দিন তাঁর দেহ পুকুরে অর্ধেক ডোবানো অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। পুলিশ কুকুর এবং সিআইডি তদন্তের দাবিতে দেহ উদ্ধারে বাধা দেন গ্রামবাসীরা। প্রথমে তারাপীঠ থানা, পরে রামপুরহাট সার্কেল ইন্সপেক্টর এবং শেষে এসডিপিও (রামপুরহাট) ঘটনাস্থলে গিয়ে দফায় দফায় মৃতের পরিবারের সঙ্গে কথা বললেও দেহ উদ্ধার করতে পারেননি। দুপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী এলাকায় পৌঁছে দেহ তুলে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত করার জন্য পাঠায়।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ধারাল অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছে ওই যুবককে। নিহত চন্দন সক্রিয় বিজেপি কর্মী হওয়ায় এই ঘটনাকে ঘিরেও রাজনীতির রং লেগেছে। বিজেপি কর্মীদের একাংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের কর্মী খুন শিরোনামে প্রচার চালাতে থাকেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় ঘটনার নিন্দা করে টুইট করেন। এ দিন সকালে বিজেপি-র জেলা কমিটির সদস্য কৃষ্ণ কুমার মণ্ডল এবং রামপুরহাট ২ মণ্ডল সভাপতি দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় এলাকায় পৌঁছে মাস দুয়েক আগে দুই গ্রামের একটি ঘটনা নিয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সরব হন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে খামেড্ডা গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ ওই দুই নেতাকে মারধর করে এলাকা থেকে সরিয়ে দেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বিজেপি কর্মীরা চন্দন-খুন এবং নেতাকে মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে তারাপীঠ থানার বেসিক মোড়ে রামপুরহাট-সাঁইথিয়া রাস্তা অবরোধ করেন।
কেন খুন হলেন চন্দন, তা স্পষ্ট নয়। জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে এই খুনের ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ পাওয়া যায়নি। তদন্ত চলছে। দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ দিনই বিকেলে বর্ধমান জেলা পুলিশ থেকে কুকুর এনে তদন্ত হয় ওই গ্রামে।
শুক্রবার সকালে খামেড্ডা পৌঁছে দেখা যায়, গ্রামের শেষ দিকে বড়পুকুরের একটি ঘাটের কাছে চন্দনের দেহ জলে অর্ধেক পড়ে। ধারাল অস্ত্রের আঘাতে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে এসেছে। পুকুরের চারপাশে ভিড়। পুকুরের এক পাড়ে চন্দনের মা, বাবা, স্ত্রী, দুই ছেলে, দাদা বৌদি কান্নাকাটি করছেন। চন্দনের ভাইপো পাপাই মাল, অঞ্জন মাল সহ গ্রামবাসীদের
একাংশ পুলিশকে দেহ তুলতে বাধা দেয়। ডাঙা থেকে একটু দূরে গম জমির খেতে রক্তের দাগ। পুলিশ কর্মীরা জায়গাটিকে ঘিরে রয়েছেন। পাপাইয়ের দাবি, গম জমিতে খুন করে দেহ তুলে নিয়ে গিয়ে পুকুরে ফেলা হয়েছে।
টোটো চালক চন্দন একটি ট্রাক্টরেরও মালিক। তাঁরা তিন ভাই। গোটা পরিবার একসঙ্গে থাকে। চন্দনের বাবা স্বপন মাল জানান, ট্রাক্টর গত বছর কিনেছিলেন তাঁর ছোট ছেলে। ভাইপোকে ট্রাক্টরের ব্যবসা দেখভাল করতে দিয়েছিলেন চন্দন। স্বপনবাবু বলেন, ‘‘এ বছর অঘ্রাণে বাড়ির খামারে রাখা ট্রাক্টরের ইঞ্জিনে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। সেই ঘটনায় কেউ ধরা পড়েনি। এখন ছোট ছেলেকে খুন করল। আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। এই কারণে পুলিশ কুকুর এনে এবং সিআইডি তদন্তের দাবি করেছি।’’
চন্দন মালের স্ত্রী খুশি মাল বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টোটো চালিয়ে বাড়ি ফেরার পরে চা খাওয়ার সময় একটা ফোন পেয়ে স্বামী বেরিয়ে গিয়েছিল। রাতের খাবার রেখে দুই ছেলেকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। ভোরের দিকে ঘুম ভেঙে দেখি, স্বামী বাড়ি ফেরেনি। খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। সকালে গ্রামের লোকেরা খবর দেয়, বড়পুকুরে স্বামীর দেহ পড়ে আছে।’’ পাপাই বলেন, ‘‘সন্ধ্যায় কাকাকে কে বা কারা ফোন করে ডেকেছিল, সেটা পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy