বাড়ির কাছেই নদী। কিন্তু সেই নদীর বালির দাম আকাশছোঁয়া। ইটের দামও কোথাও কোথাও চড়া বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে বাংলার বাড়ির (গ্রামীণ) উপভোক্তারা বাড়ি কী ভাবে শেষ করবেন, ভেবে কূল পাচ্ছেন না। জেলা সফরে এসে সমস্যার কথা শুনেছেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। তিনি সমস্যা মেটানোর ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন।
বাংলার বাড়ি প্রকল্পে বাঁকুড়া জেলার প্রায় ৬৮ হাজার এবং পুরুলিয়া জেলার ৩৬,৮০৮ জন প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার করে টাকা পেয়েছেন। কেউ যাতে টাকা ফেলে না রেখে দ্রুত বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন, সে ব্যাপারে নজরদারি শুরু করেছে প্রশাসন। প্রশাসন জানিয়েছে, লিন্টেল ঢালাই হলে তবে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা ছাড়া হবে। সে টাকা দেওয়ার কথা মে-জুন মাসে। কিন্তু বালির দাম বৃদ্ধির জেরে ভিত খুঁড়েও চিন্তায় উপভোক্তারা।
নির্মাণ বিশেষজ্ঞদের মতে, ২৫ বর্গ ফুট বাড়ি তৈরি করতে বলা হয়েছে। সে জন্য প্রায় ১৫ ট্রাক্টর বালির প্রয়োজন। উপভোক্তাদের দাবি, এক ট্রাক্টর বালির দর গড়ে চার হাজার টাকা। শুধু বালি কিনতেই বরাদ্দের অর্ধেক টাকা বেরিয়ে যাবে!
বাঁকুড়ার জুনবেদিয়া পঞ্চায়েতের শীতলাডিহি গ্রামের বিধবা আলো শূর দেওয়ালের অনেকখানি তুলেছেন। তবে লিন্টেল ঢালাইয়ের আগেই তাঁর প্রথম কিস্তির বেশি খরচ হয়ে গিয়েছে। এখন নির্মাণ সামগ্রীর দোকানে ধার করে কাজ চালাচ্ছেন। আলো বলেন, ‘‘এক ট্রাক্টর ইটের দর ১৩ হাজার ২০০ টাকা, বালি বস্তা প্রতি ৬০ টাকা। চার গাড়ি ইট ও প্রায় ২৫০ বস্তা বালি কিনতেই প্রায় ৬৭ হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। বাড়ি করতে গিয়ে ধারের জালে জড়িয়ে পড়ছি।’’ খাতড়া মহকুমায় বালির দর সব চেয়ে বেশি। ইঁদপুরের বাসিন্দা মীনা বাউরি, বাবুলাল বাউরি জানান, বাড়ির ভিত তৈরি করতেই প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেল।
পুরুলিয়ায় বালির দর আরও চড়া। সমস্যা তাই আরও বেশি। বান্দোয়ানের টুম্পা পাণ্ডে জানান, সাড়ে ছ’হাজার টাকায় এক ট্রাক্টর বালি ও কিছু ইট কেনার পরে কী ভাবে কাজ শেষ করবেন চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন। পুরুলিয়া ১ ব্লকের রুদড়া গ্রামের রাকেশ মাহাতো ও ডিমডিহা গ্রামের পাপ্পু পাণ্ডে বলেন, ‘‘বাজারে বালি নেই। যেটুকু আছে, তা কেনাও সম্ভব নয়।’’ কাশীপুরের কার্তিক সরেন বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত থেকে বাড়ি তৈরি করতে তাড়া দিচ্ছে। পঞ্চায়েতকে বলেছি, আপনাদের টাকা দিচ্ছি। আপনারাই বাড়িটা তৈরি করে দিন।’’
এই টাকায় কী ভাবে বাড়ি তৈরি সম্ভব প্রশ্ন তুলে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিত মাহাতো।
পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর দাবি, ‘‘বালির কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করা হচ্ছে কিনা সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তদন্তের প্রয়োজন।’’ জেলা সম্মেলনে এসে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, নির্মাণের জন্য বালি কোথা থেকে মিলবে? আসলে বালি পাচার হয়ে যাচ্ছে। বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গার দাবি, ‘‘বালির দাম এতটা চড়ে যাওয়ার পিছনে কারা রয়েছেন, সবাই জানেন। উপভোক্তাদের কাছ থেকে সরাসরি কাটমানি না নিতে পেরে, ঘুরিয়ে বালির দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে।’’
তবে তৃণমূলের নেত্রী তথা রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুর আশ্বাস, ‘‘বালির দাম বৃদ্ধির সমস্যা নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়াও জানান, বিষয়টি তিনি প্রশাসনের নজরে আনবেন। (চলবে)
তথ্য সহায়তা: শুভেন্দু তন্তুবায়
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)