কাশীপুরের শিবিরে স্বাস্থ্যপরীক্ষা। ছবি: সঙ্গীত নাগ।
অপুষ্ট শিশুদের পুষ্টি পুর্নবাসন কেন্দ্রে পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হলেও, বেশির ভাগের অভিভাবকেরাই সেখানে নিয়ে যাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। বিষয়টি নজরে এসেছিল প্রশাসনের। তার পরেই গ্রামীণ এলাকায় বিশেষ শিবির করে অপুষ্ট শিশুদের পুষ্টি পুনরুদ্ধারের প্রকল্প শুরু করেছে রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসন। পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকেরা সেখানে শিশুদের দেখছেন ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।
রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক প্রিয়দর্শিনী ভট্টাচার্যর উদ্যোগে এই প্রকল্প শুরু হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘পুষ্টি পুর্নবাসন কেন্দ্রে চরম অপুষ্ট শিশুদের পাঠানো জরুরি হয়ে পড়লেও, অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন কারণে শিশুদের নিয়ে সেখানে যেতে চাইছেন না মায়েরা। বিষয়টি নজরে আসার পরে তাই এ বার পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকদের পাঠানো হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে। সুসংহত শিশু বিকাশ দফতরের আধিকারিক ও কর্মীরা তাঁদের নিয়ে শিবিরগুলিতে যাচ্ছেন। সেখানে কী ভাবে শিশুদের পুষ্টি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব, সেই দিকগুলি বিশদে শিশুদের অভিভাবকদের জানানো হচ্ছে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সেপ্টেম্বর অবধি রঘুনাথপুর মহকুমার ছ’টি ব্লকে চরম অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা ছিল প্রায় ছ’শো। অনেককেই পুষ্টি পুর্নবাসন কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। কিন্তু তাদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েক জন গিয়েছিল পাড়া ব্লকে পুষ্টি পুর্নবাসন কেন্দ্রে। তা নজরে আসার পরেই গ্রামাঞ্চলে বিশেষ শিবির করার সিদ্ধান্ত নেন মহকুমাশাসক। পুজোর আগে সে প্রকল্প শুরু হয়। ইতমধ্যে নিতুড়িয়া ও সাঁতুড়ি ব্লকে শিবির হয়েছে।
সোমবার থেকে শিবির শুরু হয়েছে কাশীপুর ব্লকে।
কী হচ্ছে শিবিরে? কয়েকটি পঞ্চায়েতের চরম অপুষ্টিতে ভোগা শিশু ও তাদের অভিভাবকদের ডাকা হচ্ছে শিবিরে। সেখানে থাকছেন পাড়ার পুষ্টি পুর্নবাসন কেন্দ্রের পুষ্টিবিদ, স্থানীয় ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক জন চিকিৎসক, ব্লকের সিডিপিও, সুপারভাইজার ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা। শিবিরে আসা শিশুদের ওজন, উচ্চতা-সহ স্বাস্থ্যগত নানা দিক পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, কী মাত্রায় অপুষ্টিতে ভুগছে। সে অনুযায়ী সেখানেই তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে প্রয়োজনীয় ওযুধ দিচ্ছেন ও তাদের কী ধরনের পুষ্টিকর খাবার দিনের কোন সময়ে কী মাত্রায় খাওয়াতে হবে, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে দিচ্ছেন পুষ্টিবিদ। সিডিপিও এবং সুপারভাইজারেরা শিশুর পরিবারের সদস্যদের বিশদে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, কেন শিশুর পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামীণ এলাকায় দরিদ্র পরিবারগুলির পক্ষে স্থানীয় ভাবে সহজলভ্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পুর্নবাসন কেন্দ্রের পুষ্টিবিদ অঙ্কিতা রায় বলেন, ‘‘ছ’মাসের কম বয়সী শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়ানোর জন্য বলা হচ্ছে। তার বেশি বয়সীদের সহজলভ্য যে সব খাবারে প্রোটিন, আয়রন-সহ নানা পুষ্টিগুণ আছে, সেগুলিই খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’’ কয়েক জন সিডিপিও জানান, গ্রামে নানা শাক-আনাজ পাওয়া যায়। সেগুলি খাওয়ালেই শিশুদের পুষ্টি পুনরুদ্ধার সম্ভব। অভিভাবকেরা সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল নন বলেই পুষ্টির ক্ষেত্রে সমস্য তৈরি হয় শিশুদের। শিবিরে সে সম্পর্কে ধারণা তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। তবে শিবির করতে গিয়ে বেশ কিছু খারাপ দিক চোখে পড়েছে বলে জানান সিডিপিওদের অনেকে। সাঁতুড়ি ব্লকের সিডিপিও সায়ন্তনী বোস যেমন বলেন, ‘‘দেখা গিয়েছে, কিছু অভিভাবক পাঁচ টাকা খরচ করে শিশুদের ভাজাভুজির প্যাকেট কিনে দিচ্ছেন। কিন্তু সে টাকায় ডিম কিনে খাওয়াচ্ছেন না।’’
সোমবার কাশীপুর ব্লকের গৌরাঙ্গডিতে শিবির হয়। ব্লকের সিডিপিও কার্তিক মুখোপাধ্যায় জানান, শিবিরে ডাকা হয়েছিল মনিহারা, বড়রা, গৌরাঙ্গডি, কালীদহ পঞ্চায়েতের অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের। শিবিরে গিয়ে দেখা যায়, ওজন, উচ্চতা মাপার পাশাপাশি শিশুদের শারীরিক অবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার পরে তাদের খাদ্যতালিকা ঠিক করে দিচ্ছেন পুষ্টিবিদ। শিবিরে আসা তুলাদেড়িয়া গ্রামের সরলা মাহাতো, সুতাবই গ্রামের রেনুকা বাউরিরা বলেন, ‘‘নানা কারণে শিশুদের পুষ্টির দিকটা অবহেলিত থেকে যায়। কিন্তু খুব সহজেই কী ভাবে তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব, সেটা শিবিরে এসে জেনেছি।’’ কাশীপুরের সিডিপিও কার্তিকবাবু বলেন, ‘‘শুধু এক বার শিবির করেই প্রকল্পটি শেষ হচ্ছে না। অভিভাবকেরা তালিকা অনুযায়ী খাবার শিশুদের দিচ্ছেন কি না, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা এর পর থেকে নজরদারি চালাবেন। পরের শিবিরে শিশুদের পুষ্টি কতটা পুনরুদ্ধার হল, তা খতিয়ে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy