Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Hinglo Reservoir

জলধারণ ক্ষমতা অর্ধেক, সংস্কারের অপেক্ষায় হিংলো

সেচ দফতর সূত্রের সূত্রে জানা গিয়েছে, সেচ ও জলপথ বিভাগের উদ্যোগে ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা খয়রাশোলের বাবুইজোড় এলাকায় হিংলো জালধারটি তৈরি হয় ১৯৭৬ সালে।

জল নেই হিংলো জলাধারে।

জল নেই হিংলো জলাধারে। নিজস্ব চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত 
খয়রাশোল শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:০১
Share: Save:

পলি জমে জলধারণের ক্ষমতা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩,৮৪৫ একর ফিটে। অথচ বর্ষা শেষ হওয়ার মাস দুয়েকের মধ্যেই জলাধারে জল তলানিতে। রবি ফসল বা বোরো ধান চাষের জন্য সেচের জল মিলবে এমন সম্ভাবনাও কার্যত নেই। খয়রাশোলের হিংলো জলাধারের বর্তমান ছবিটা এমনই। তিলপাড়া জলাধারের সংস্কার শুরু হলেও হিংলোর সংস্কারের আশু সম্ভাবনাও নেই বলে জানিয়েছে সেচ দফতর।

জলাধারের দায়িত্বে থাকা এসডিও (হিংলো সেচ) গৌতম চট্টোপাধ্যায় মানছেন সে কথা। তিনি বলেন, ‘‘এ বার বর্ষার শেষ দু’টি মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। আমনের সেচ দেওয়ার তেমন প্রয়োজন হয়নি। তবুও বর্ষার সময় জল ছাড়ার পরে যেটুকু জল রয়েছে, তা রবি মরসুমে সেচের জন্য পর্যাপ্ত হবে না।’’ কারণ, পলি জমে এই জলাধারের জলধারণ ক্ষমতা অর্ধেকে এসে ঠেকেছে বলে জানান গৌতম।

সেচ দফতর সূত্রের সূত্রে জানা গিয়েছে, সেচ ও জলপথ বিভাগের উদ্যোগে ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা খয়রাশোলের বাবুইজোড় এলাকায় হিংলো জালধারটি তৈরি হয় ১৯৭৬ সালে। উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। ঝাড়খণ্ড থেকে উৎপন্ন হিংলো নদের গতিপথে ওই জলাধারটি গড়ার মূলেই ছিল এলাকার সেচ ব্যবস্থার উন্নতি করা।

জলাধারটি তৈরি হওয়ার পরে খয়রাশোলের বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত এলাকা, দুবরাজপুর ও ইলামবাজার ব্লকের কিছুটা অংশের কৃষিজমি মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার একর জমিকে সেচের আওতায় আনা গিয়েছিল। কিন্ত ক্রমাগত পলি জমতে জমতে একাধারে যেমন জলাধারের জলধারণের ক্ষমতা কমেছে একই ভাবে দু’পাড়ের মাটি পড়ে কমেছে সেচখালগুলির নাব্যতা। ২১-এ সেচখাল সংস্কার করে পাড়া বাঁধানো বা ‘কংক্রিট লাইনিং’ করা হলেও অর্থাভাবে মূল জলাধারে পলি পরিষ্কার করা যায়নি বলে সেচ দফতর সূত্রে খবর। সূত্রের খবর, আশু সংস্কারের সম্ভাবনাও নেই।

দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হিংলো জলাধার যখন তৈরি হয়েছিল, তখন সেটির তলদেশের উচ্চতা ছিল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০৮ ফিট। জল রাখা যেত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩২৪ ফুট পর্যন্ত। কিন্তু দীর্ঘ দিন সংস্কারের অভাব এবং পলি জমতে জমতে বাঁধের নাব্যতা কমে যাওয়ায় ৩২৪ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত জল রাখতে গিয়ে বছর কয়েক আগে বাঁধে সমস্যা দেখা দেয়। সমস্যা দেখতে মালদহ এসেছিলেন সেচ দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার(নর্থ)। তিনি বাঁধ পর্যবেক্ষণ করে জানিয়ে দেন, এই বাঁধে ৩১৬ ফুট (সমুদ্রপৃষ্ঠের) উচ্চতার বেশি জল ধরে রাখা যাবে না। এর ফলে জলধারণের ক্ষমতা কার্যত অর্ধেক বা ৭ হাজার একর ফিট হয়ে গিয়ছে। সেচসেবিত এলাকাও কমে গিয়েছে ১৫ হাজার একরে। তার ফল ভুগছেন চাষিরা।

লাগোয়া ঝাড়খণ্ড এবং বীরভূমে লাগাতার দু’-চার দিন ভারী বৃষ্টি হলেই বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলে জলাধারটি। তখন জল ছেড়ে দিতে হয়। চলতি বছরে বর্ষার শেষ দিকে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিল। জলে ছেড়ে দিতে হওয়ায় সামান্য কিছুটা জল রয়েছে। কিন্তু তাও জয়দেব মেলার সময় পূণ্যার্থীদের স্নানের জন্য দিতে খরচ হয়ে যাবে। সেচের জন্য জল মিলবে, এমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

সেচ দফতরের এক অধিকারিক জানিয়েছেন, বাঁধ সংস্কার ও পলি উত্তোলন করে আগের অবস্থায় বাঁধকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বিপুল অর্থ খরচ রয়েছে। রাজ্যের পক্ষে এই বিপুল খরচ করা সম্ভব না-হওয়ায় বছর দুই আগেই বিশ্ব ব্যাঙ্ক-এ বাঁধ সংস্কারের প্ল্যান এস্টিমেট পাঠানে হয়েছিল। বেশ কিছু তথ্য আবার চেয়ে সেটা ফেরত আসে। সেপ্টেম্বর ফের সে সব তথ্য যোগ করে আবেদন ফের পাঠানো হয়েছে। এখনও কোনও প্রত্যুত্তর মেলেনি বলে দফতর সূত্রে খবর।

অন্য বিষয়গুলি:

khayrasole
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy