সাপের উপদ্রব সিউড়িতে। প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সাপ শীতকালে ‘ঘুমোয়’। গর্তে পড়ে থাকে নিস্তেজ অবস্থায়। প্রচলিত ধারণা এটাই। কিন্তু এ বার শীতে যে সংখ্যক সাপ উদ্ধার এবং সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটছে, তাতে সাপেরা শীতঘুমে নিয়েই প্রশ্ন উঠছে বলে মনে করছেন অনেকে। অন্য বারে শীতের তুলনায় এ বার যে বেশি সংখ্যক সাপ উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে, তা মেনে নিয়েছেন ভারত সরকারের বন্যপ্রাণ দুর্নীতি দমন শাখার সদস্য তথা সিউড়ি অজয়পুর স্কুলের শিক্ষক দীনবন্ধু বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘গত বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে সিউড়ি ও শহরতলি এলাকায় মোট ১৫টি সাপ উদ্ধার করেছিলাম। ডিসেম্বর শেষ হতে ৯ দিন বাকি থাকতেই সাপ উদ্ধারের সংখ্যা তা ছাড়িয়ে গিয়েছে। তালিকায় রয়েছে গোখরো, কেউটে, দাঁড়াশ।’’
সহমত পোষণ করেছেন দুবরাজপুরের যুবক অমিত শর্মা। তিনি বন দফতরের হয়ে বন্যপ্রাণ উদ্ধার করেন। তিনি বলেন, ‘‘গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে শুধু বিষধর সাপ উদ্ধার করেছিলাম ১০টি। এ বার নভেম্বর ও ডিসেম্বরের মধ্যে বিষধর সাপ উদ্ধার করেছি ১৬টি। তালিকায় রয়েছে চন্দ্রবোড়া, কালাচ, গোখরো। এর সঙ্গে ময়াল, ও নির্বিষ দাঁড়াশ যোগ করলে সংখ্যাটা আরও বাড়বে।’’
শুধু সাপ উদ্ধারই নয়, বেড়েছে সাপের কামড়ের সংখ্যাও। বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার তথ্য বলছে, গত বছর অক্টোবরে সাপে কামড়ের রোগীর সংখ্যা ছিল ২৬৯টি। চলতি অক্টোবরে সে সংখ্যাটা বেড়ে হয় ৪৬৪টি। গত নভেম্বরে সাপের কামড় খেয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন ১৬২ জন। এ বার নভেম্বরে ভর্তি হয়েছিলেন ২৫৯ জন। গত ডিসেম্বরে ৯৮ জন রোগী হাসপাতালে এসেছিলেন। চলতি বছরের হিসাব মেলেনি।
ছবিটা এক সিউড়ি জেলা হাসাপাতালের তথ্যেও। গত অক্টোবর ও নভেম্বরে সাপে কামড়ে রোগীর সংখ্যা ছিল ১১৮ জন। সেখানে চলতি বছরে এই দু’মাসে ২৬০ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। ডিসেম্বরের কত সংখ্যক সাপে কাটা রোগী এসেছেন সেটা স্পষ্ট না হলেও বেশ কয়েক জন হাসপাতালে ভর্তি হন বলে খবর। তবে তাঁদের একটি অংশই বিষধর সাপের কামড় খেয়েছিলেন বলে দাবি।
দীনবন্ধু বলেন, ‘‘সব সাপ শীত ঘুমে যায় না। বিশেষ করে চন্দ্রবোড়া এবং ময়ালের তো এটাই প্রজনন ঋতু। ফলে, অসাবধানতায় সাপের সঙ্গে সংঘাত ঘটতেই পারে। পাশাপাশি, সাপ দেখলেই মেরে ফেলার প্রবণতা কমেছে। ফলে সাপের সংখ্যা বাড়ছে। অন্য দিকে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সাপেরা বাসস্থান হারাচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঝোপ কেটে ফেলা, ফসল ওঠার পরে বা শুকনো ঝোপে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মতো বিষয়গুলিও।’’
সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক লক্ষ্মীনারায়ণ মণ্ডল বলেন, ‘‘সাপ ঠান্ডা রক্তের প্রাণি। প্রকৃতির তাপমাত্রা যেমন হবে তাদের দেহের তাপমাত্রাও তেমন হবে। ফলে, খুব শীত পড়লে গর্ত খুঁজে দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখে তারা। খুব শীতে, সাপেদের বিশেষ বাইরে থাকার কথা। দিন কয়েকের মধ্যেই হয়তো সাপ কম দেখা যাব।’’ প্রাক্তন অধ্যক্ষের সংযোজন, ‘‘সাপ যেহেতু এখন কম মারা হচ্ছে তাই সাপের সংখ্যা বাড়ছে। ঠিকমতো জায়গা পাচ্ছে না বলেই আশপাশে চলে আসছে।’’
স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানান, সাপের কামড় খেয়ে হাসপাতালে আসার সংখ্যা বেড়েছে। যাঁরা আসছেন, তাঁদের একটা অংশের মধ্যে বিষক্রিয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তবে ঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছলে মৃত্যু রুখে দেওয়া সম্ভব। বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলেন, ‘‘প্রতিটি হাসপাতালে এভিএস রয়েছে। শুধু সময়ে হাসপাতালে পৌঁছতে হবে।’’ ডাক্তাদের একাংশের মতে, এখনও অনেকে শৌচকর্ম করতে খোলা জায়গায় যাচ্ছেন। সেটাও সাপে কাটা রোগী বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy