গ্রামীণ এলাকার আবাস প্রকল্পের উপভোক্তা নির্বাচন নিয়ে বিরোধীদের তিরে বিদ্ধ রাজ্যের শাসকদল। ওই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কেন্দ্র রাজ্যকে বরাদ্দও বন্ধ করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রঘুনাথপুর পুরএলাকার দুঃস্থদের জন্য ‘হাউস ফর অল’ প্রকল্প নিয়েও বেনিয়মের অভিযোগে সরব বিরোধীরা। পুরসভার বিরুদ্ধে বাড়ি তৈরির টাকা দিতে গড়িমসি করার অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দারাও। যদিও তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা তা মানতে নারাজ।
রঘুনাথপুর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চাঁদাগড়িয়ার বাসিন্দা সন্ধ্যা মেটে জানাচ্ছেন, বছর দেড়েক আগে তিনি ‘হাউস ফর অল’ প্রকল্পের প্রথম কিস্তির ৭০ হাজার টাকা পান। নতুন বাড়ি তৈরির আশায় পুরনো বাড়ি ভেঙে পাকা ঘর তৈরির কাজে হাত লাগান তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় কিস্তির টাকা এখনও তিনি পাননি। সন্ধ্যা জানাচ্ছেন, প্রথম কিস্তির টাকায় বাড়ির মেঝে পর্যন্ত করতে পেরেছেন। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘পরের কিস্তির টাকা না পেয়ে বিপাকে পড়েছি। মেঝের উপরে ত্রিপল খাটিয়ে ছেলে-পুত্রবধূদের নিয়ে থাকছি।’’ মাঝে ত্রিপল ছিঁড়ে যাওয়ায় পুরসভায় গিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, সেখানে মেলেনি। রুপোর হার বন্ধক রেখে সে টাকায় ত্রিপল কিনেছেন।
বিরোধীদের অভিযোগ, শহরের ১৩টি ওয়ার্ডে ‘হাউস ফর অল’ প্রকল্পে পরের কিস্তির টাকা না পেয়ে সমস্যায় পড়েছেন সন্ধ্যার মতো অনেকেই। কেউ বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছেন। কেউ ফিরেছেন পুরানো ঝুপড়িতে বা ভাঙা ঘরে।
কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বৃদ্ধ শিবরাম দাস। তাঁর কথায়, ‘‘২০২২-র এপ্রিলে প্রথম কিস্তির ৭০ হাজার টাকা পেয়ে পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন ঘর তৈরি শুরু করি। দ্বিতীয় কিস্তিরও ৭০ হাজার টাকা দিয়েছিল পুরসভা। তাতে বাড়ি সম্পূর্ণ হয়নি। অগত্যা ভাড়াবাড়িতে সপরিবারে থাকছি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘পরের কিস্তির টাকা দ্রুত মিলবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল পুরসভা। কিন্তু পাইনি। অগত্যা ব্যাঙ্ক ঋণ নিই। স্ত্রী-ও তাঁর স্বনির্ভর গোষ্ঠী থেকে ঋণ নেন। সে টাকায় ছাদ ঢালাই করেছি। কিন্তু ঘর এখনও অসম্পূর্ণ। ঋণের কিস্তি মেটাতে, বাড়িভাড়া দিতে সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছি।’’
একই অবস্থা ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিমা মেটের। বছর দেড়েক আগে ওই প্রকল্পের প্রথম কিস্তির ৭০ হাজার টাকা পেয়ে পুরনো বাড়ি ভেঙেছিলেন। তাঁর দাবি, পরের কিস্তির টাকা মেলেনি। এখন থাকতে হচ্ছে ভাড়াবাড়িতে। প্রতিমার কথায়,‘‘মাছ বিক্রি করে সামান্য আয় করি। ঠিক সময়ে বাড়িভাড়া দিতে পারি না।’’ ওই ওয়ার্ডের চাঁদাগড়িয়ার অঞ্জনা বাউরি প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছিলেন বছর দেড়েক আগে। তিনিও বাড়ি ভাঙেন। অঞ্জনার দাবি, পরের কিস্তির টাকা মেলেনি। এখন ভাঙা বাড়ির পাশে বাঁশ-ত্রিপলের ঝুপড়ি বানিয়ে থাকছেন তিনি। পুত্রবধূকে বাপের বাড়ি পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন। অঞ্জনা বলেন, ‘‘আগেই ভাল ছিলাম। নতুন ঘরের আশায় পুরনো বাড়ি ভেঙে ঝুপড়িবাসী হয়ে গেলাম।’’ ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের নন্দ বাউরির দাবি, তিনি দুই কিস্তিতে এক লক্ষ ৪০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। পুরনো ঘর ভেঙে তার পাশের নতুন ঘর তৈরি শুরু করেন। পরের কিস্তির টাকা না পাওয়ায় ঘর সম্পূর্ণ হয়নি। এখন থাকেন জীর্ণ ছোট এক মাটির বাড়িতে।
কংগ্রেস ও বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার উদাসীনতা এবং ভুল নীতির জন্যই অন্তত হাজারের বেশি বাসিন্দা এখন ভুগছেন। ওই প্রকল্পের বাকি কিস্তির টাকা না পেয়ে দেড় থেকে দু’বছর ধরে তাঁরা রোদে পুড়ছেন, শীতে কাঁপছেন, বৃষ্টিতে ভিজছেন। অভিযোগ মানেননি তৃণমূলের পুরপ্রধান তরণী বাউরি। তাঁর দাবি, ‘‘সুডা (স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি) থেকে যখন যেমন টাকা এসেছে, তখন তেমন দেওয়া হয়েছে উপভোক্তাদের।’’
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy