ওয়াশিংটনের বিমান দুর্ঘটনায় ব্ল্যাকবক্স খতিয়ে দেখে একাধিক প্রশ্ন তুলছেন তদন্তকারীরা। ঘটনার সময় কি সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারের পাইলট রাতচশমা পরেননি? সেই কারণেই কি চপারটি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি উঁচুতে উঠে গিয়েছিল? প্রশ্ন উঠেছে। ব্ল্যাকবক্স থেকে পাওয়া শেষ মুহূর্তের কথোপকথন এবং বিমানের যাবতীয় তথ্য বিশ্লেষণ চলছে। এখনও দুর্ঘটনার কারণ নিশ্চিত করতে পারেনি আমেরিকার ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফ্টি বোর্ড (এনটিএসবি)।
তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সময়ে যাত্রিবাহী বিমানটির উচ্চতা ছিল ৩২৫ ফুট। শনিবার সন্ধ্যায় (স্থানীয় সময়) এনটিএসবির তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, সেনার চপারটি ২০০ ফুটের বেশি উচ্চতায় উড়ছিল, ওই রুটে যা সর্বোচ্চ। অর্থাৎ, সর্বোচ্চ সীমা পেরিয়ে গিয়েছিল চপার। বিমানের ব্ল্যাকবক্স এবং তথ্য রেকর্ডকারী যন্ত্র (ডেটা রেকর্ডার) থেকে এই তথ্যগুলি পাওয়া গিয়েছে। প্রত্যেক বিমানেই ব্ল্যাকবক্স থাকে। যেখানে বিমানের গতিবিধি, উচ্চতার মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য রেকর্ড করা হয়। দুর্ঘটনার পরের দিন পটোম্যাক নদী থেকে ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
ওয়াশিংটনের বিমান দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তদন্তের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এনটিএসবি-র সদস্য টড ইনম্যান বলেন, ‘‘হেলিকপ্টারটি সেনার প্রশিক্ষণের কাজে নিযুক্ত ছিল। পাইলটের বিশেষ রাতচশমা পরার কথা ছিল। তিনি আদৌ তা পরেছিলেন কি না, আমরা এখনও সে বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত নই। এর জন্য আরও বিশদে তদন্ত প্রয়োজন। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। তদন্ত শেষ হলে দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে কথা বলা যাবে।’’
আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বিমানটির অবতরণের কথা ছিল রেগান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল বিমানবন্দরে। অভিযোগ, ঘটনার সময়ে সেখানে পর্যাপ্ত কর্মচারী ছিলেন না। বিবিসি জানিয়েছে, সাধারণত বিমান এবং হেলিকপ্টারের ‘ট্র্যাফিক’ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিমানবন্দরে দু’জন করে কর্মী দায়িত্বে থাকেন। কিন্তু দুর্ঘটনার সময়ে ছিলেন এক জন কর্মী। তবে ঘটনার ঠিক দু’মিনিট আগে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলার থেকে কপ্টারটিকে সতর্ক করা হয়েছিল। বিমানের অবস্থান সম্পর্কে কপ্টারকে জানানো হয়েছিল।
বিমানের ব্ল্যাকবক্স থেকে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার এক সেকেন্ড আগে পাইলট কোনও মৌখিক বার্তা পেয়েছিলেন। বিমানের মুখ উপরের দিকে তোলা হয়েছিল। কিন্তু তার পরমুহূর্তেই তীব্র সংঘর্ষের শব্দ শোনা যায়।
সেনাবাহিনীর চপারটিতে মোট তিন জন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে দু’জনের নাম আগেই প্রকাশ করা হয়েছিল। বিমানের সঙ্গে সংঘর্ষের মৃত্যু হয়েছে স্টাফ সার্জেন্ট রিয়ান অস্টিন ও’হারা (২৮) এবং চিফ ওয়ারান্ট অফিসার অ্যান্ড্রু লয়েজ ইভ্স (৩৯)। শনিবার পাইলটের নাম প্রকাশ করেছে আমেরিকান সেনা। বিমানে ছিলেন ক্যাপ্টেন রেবেকা লোবাক। এ ছাড়া, যাত্রিবাহী বিমানটিতে মোট ৬৭ জন ছিলেন। প্রত্যেকেরই মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে আমেরিকার প্রশাসন। এখনও পর্যন্ত ৪২টি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে নদী থেকে। অনেককে পরিবার শনাক্তও করেছে।