মা গায়ত্রী দে কোথায়, তিনি জীবিত নাকি মৃত— জানতে প্রয়াগরাজে যাচ্ছেন ছেলে।
এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে পাওয়া কুম্ভমেলায় পদপিষ্ট হয়ে মৃতদের ছবি দেখে প্রতাপ দে দাবি করেছেন, একটি দেহ তাঁর মা গায়ত্রীর। পুলিশ প্রশাসনকেও লিখিত ভাবে সেই কথা জানিয়েছেন রামপুরহাট শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাউড়িপাড়ার বাসিন্দা প্রতাপ। প্রশাসনের কাছে সরকারি ভাবে গায়ত্রী দে-র মারা যাওয়ার খবর এখনও নেই।
কিন্তু, মৃতদেহগুলি প্রয়াগরাজের যে হাসপাতালে রাখা আছে, সেই মোতীলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতাপকে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে জেলা প্রশাসন। সেই মতো প্রশাসন প্রতাপের আধার কার্ড-সহ আরও পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছে। পুরসভার তরফ থেকে গাড়ির ব্যবস্থা করে প্রতাপ-সহ ওই এলাকার এমন পাঁচ জনকে পাঠানো হচ্ছে, যাঁরা মৃতদেহ শনাক্ত করতে পারবেন। পুরপ্রধান সৌমেন ভকত জানান, রাতেই পুরসভার দেওয়া গাড়িতে রওনা দিয়েছেন প্রতাপেরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পঁচিশ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে মাঝে মাঝেই তীর্থ করতে বেরিয়ে যেতেন বছর আটান্নর গায়ত্রী দে। সম্প্রতি পুরী ঘুরে আসার পরে জয়দেব মেলা গিয়েছিলেন তিনি। তখনও গায়ত্রীর সঙ্গী ছিলেন খুড়তুতো বোন প্রমীলা দাস। যিনি এ বার কুম্ভমেলাতেও দিদির সঙ্গী ছিলেন। সব তীর্থস্থানেই পাঁচ দিনের বেশি থাকতেন না তিনি। তীর্থস্থান ঘুরে রামপুরহাটে দু’কামরার পাকা বাড়িতেই ফিরতেন। প্রতিবেশী কল্পনা ধীবর, রেখা ধীবর, ফুলি বাউড়িদের খেদ, ‘‘সুস্থ সবল মানুষটা ভাল ভাবে গেল। আর কী বিপর্যয় যে ওখানে ঘটে গেল! এখনও তার হদিসই মিলল না।’’
গায়ত্রীর ছেলে প্রতাপ শুক্রবার বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গিয়েছিলেন। বিধায়ক এ দিন দুপুর থেকেই গায়ত্রীর সন্ধানে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। এ দিন বাড়িতে গিয়ে প্রতাপ-সহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন আশিস। প্রতাপ বলেন, ‘‘দুপুরে এসডিও অফিস থেকে আমাকে ডেকেছিল। প্রশাসনের কথা মতো কুম্ভমেলায় পদপিষ্ট হয়ে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের দেহ দেখতে কুম্ভমেলায় যাব। সঙ্গে পাড়ার কাউকে নিয়ে যাব।’’
জেলাশাসক বিধান রায় জানান, গায়ত্রী দে-র বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে চিঠি করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনও খবর পাওয়া যায়নি। মহকুমাশাসক (রামপুরহাট) সৌরভ পাণ্ডে বলেন, ‘‘একাধিক মৃতদেহের ছবি দেখে একটি গায়ত্রীদেবীর বলে পরিবারের সদস্যেরা দাবি করেছেন। সেই মতো পরিবারের সদস্যদের প্রয়াগরাজে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সে কারণেই তাঁদের পরিচয়পত্রনেওয়া হচ্ছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)