বেহাল: সিউড়ির ৮ নম্বর ওয়ার্ডে একটি জলের কল। নিজস্ব চিত্র
গ্রীষ্ম এবং জলসঙ্কট বর্তমানে সিউড়ি শহরে সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছরই তাপমাত্রার পারদ চড়তে না চড়তেই শহরের বেশ কিছু ওয়ার্ডে পানীয় জলের অভাব শুরু হয়ে যায়। এ বারও সিউড়ি পুরসভার ২, ৩, ১৭, ১৮, ১৯-সহ বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে ইতিমধ্যেই নামতে শুরু করেছে জলস্তর। একাধিক বার জল সমস্যা মেটাতে প্রতিনিধি দল এলেও সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ। সব মিলিয়ে সিউড়ির নাগরিকদের আশঙ্কা, এ বার গ্রীষ্মেও জলকষ্ট থেকে নিষ্কৃতি মিলবে না।
সিউড়ি পুরসভার দাবি, শহরে যে পরিমাণ জলের চাহিদা থাকে, তা পূরণ করা কঠিন। কারণ, শহরের জলের উৎস নিয়েই রয়েছে সমস্যা। পুরসভার পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, সিউড়ি শহরে পুরসভার অধীনে মোট পাঁচটি ওভারহেড জলাধার এবং চারটি ভূগর্ভস্থ জলাধার রয়েছে। তিলপাড়া ব্যারাজ সংলগ্ন এলাকা থেকে জল সংগ্রহ করা হয়। ওই জলাধারগুলি থেকে ২.৪৫ ‘মিলিয়ন লিটার পার ডে’ (এমএলডি) জল সরবরাহ করা সম্ভব। অথচ সিউড়ি পুর-এলাকায় জলের চাহিদা প্রায় ২৬ এমএলডি। যা দৈনিক জোগানের দশ গুণেরও বেশি। পুরসভার হিসাব অনুযায়ী, বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তত ১৫ এমএলডি জলও যদি জোগান দেওয়া যায়, তা হলে শহরে জলসঙ্কট অনেকটাই মেটানো সম্ভব। কিন্তু তাও বর্তমানের তুলনায় প্রায় ছ’গুণ।
বাসিন্দাদের দাবি, সে সব বাড়িগুলি শুধুমাত্র কুয়োর জলের উপরে নির্ভরশীল তাঁরাই সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন। শহরের বহু মানুষ জল সমস্যার হাত থেকে বাঁচতে বাড়িতে কুয়ো খুঁড়েছেন। কিন্তু কুয়োর জলস্তর অনেকটাই নেমে গিয়েছে। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অসীম ভট্টাচার্য বলেন, “প্রতি বছরই গ্রীষ্মের শুরু থেকেই কুয়োতে জল কমতে শুরু করে। এ বছরও একই অবস্থা। গত বছর সে ভাবে বর্ষা না হওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।” সিউড় রক্ষাকালীতলা এলাকায় তো পুরসভার জলের লাইনই পৌঁছয়নি।
কী ভাবে এই বিপুল পরিমাণ জলের চাহিদা মেটানো সম্ভব, তা খতিয়ে দেখতে ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা পুরসভা ও পুর ও নগরোন্নয় নিগমের দশ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল এসেছিল। তাঁরা বেশ কিছু সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেগুলির প্রত্যেকটিই সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।
ময়ূরাক্ষী নদীর জল তিলপাড়া জলাধারে আসার আগেই জোকা, খটঙ্গা-সহ কয়েকটি এলাকা থেকে বোরিং করে জল এনে পরিস্থিতি সাময়িক ভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব হলেও স্থায়ী সমাধানের জন্য ঝাড়খণ্ডের মশানজোড় জলাধার থেকে জল আনা ছাড়া কোনও উপায় নেই। কিন্তু আন্তঃরাজ্য এই জলপ্রকল্পের জন্য রাজ্য স্তরে বিভিন্ন দফতরের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। তাই এ বছরের মতো সমস্যা মেটাতে তিলপাড়া জলাধারের আশেপাশে আরও বেশি বোরিং করে জলের জোগান জেওয়া ছাড়া কোনও বিকল্প নেই বলে পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
প্রতিনিধি দল সিউড়ি পুরসভাকে এই সংক্রান্ত একটি বিস্তারিত ‘প্রজেক্ট রিপোর্ট’ পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে পাঠানোর কথাও বলে। কিন্তু তা সম্পূর্ণ তৈরি হয়নি বলে জানা গিয়েছে। ফলে, এ বছর গ্রীষ্মে পরিস্থিতি পরিবর্তনের কোনও সম্ভাবনাই নেই বলে পুরসভা সূত্রে খবর। সমস্যার কথা মেনে নিচ্ছেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা উপ-পুরপ্রধান বিদ্যাসাগর সাউও। তিনি বলেন, “যত ক্ষণ না জলের সঠিক উৎস পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ শহরে এই সমস্যা থাকবেই। আমরা সদরে পাড়ায় পাড়ায় গভীর নলকূপ বসিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy