—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
নিজস্ব ভবনের অভাবে নানা সমস্যা নিয়ে চলছে রঘুনাথপুর মহকুমার পাঁচশোরও বেশি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। মহকুমার ছ’টি ব্লক থেকে রঘুনাথপুর পুরশহর, সর্বত্র একই পরিস্থিতি। ব্লকগুলির সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্প দফতরের আধিকারিকদের দাবি, উপযুক্ত সরকারি জমি না মেলায় আটকে রয়েছে ভবন নির্মাণ। একই দাবি রঘুনাথপুর পুরকর্তৃপক্ষেরও।
সূত্রের খবর, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন না থাকার সমস্যা সব চেয়ে বেশি কাশীপুর ব্লকে। সেখানে ৫৬৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ২১৪টিরই ভবন নেই। পাড়া ব্লকে প্রায় ১০০টি কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন নেই। রঘুনাথপুর ১ (৫২টি) ও ২ ব্লকের (৮৩টি) ছবিও উজ্জ্বল নয়। সাঁতুড়ি ও নিতুড়িয়া ব্লকে যথাক্রমে ৩৯ ও ৩০টি কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন নেই। সব মিলিয়ে মহকুমার ছ’টি ব্লকে ৫১৮টি কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন নেই। আর রঘুনাথপুর পুরএলাকায় থাকা ২৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৪টির নিজস্ব ভবন না থাকায় ভুগছেন উপভোক্তারা।
কেমন ভোগান্তি? বিভিন্ন কেন্দ্রের কর্মী ও সহায়িকারা জানান, কেন্দ্র থেকে ছ’বছর বয়স পর্যন্ত শিশু ও প্রসূতিদের রান্না করা পুষ্টিকর খাবার দেওয়া নিয়ম। ভবন না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে তা দেওয়া যাচ্ছে না। কাঁচা মালপত্রই দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুদের অক্ষর পরিচয় করিয়ে প্রাথমিকে ভর্তির জন্য প্রস্তুত করা হয়। ব্যাহত হচ্ছে সেই কর্মসূচিও।
কর্মীরা আরও জানান, ভবন না থাকায় কেন্দ্র চালাতে হচ্ছে কোনও স্কুলে। কোথাও তা চলছে গ্রামের হরিমেলা, মনসামেলা এমনকি ক্লাবঘরে। এ ভাবে খোলা ও অনেক ক্ষেত্রে সঙ্কীর্ণ জায়গায় কেন্দ্র চালিয়ে শিশুদের উপযুক্ত পঠনপাঠন দেওয়া সম্ভব নয়। গরমে ও বর্ষায় সমস্যা বাড়ে। যেমন, রঘুনাথপুর পুরশহরের বেদিয়াপাড়ায় প্রাথমিক স্কুলের মিড-ডে মিল তৈরির রান্নাঘরে চলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। একই ভাবে শুঁড়িকুলিতে কেন্দ্র চালানো হয় স্কুলের বারান্দায়। এ ছাড়া, অনেক জীর্ণ ঘরে ঝুঁকি নিয়ে কেন্দ্র চালাতে হয়।
কেন এই পরিস্থিতি? বিভিন্ন ব্লকের আধিকারিকেরা জানান, জমির অভাবই সমস্যার মূলে। অনেকের মত, শিশুশিক্ষা কেন্দ্র বা এসএসকে প্রকল্প শুরুর সময়ে যে ভাবে প্রথমে পরিকাঠামো তৈরি করে প্রকল্প শুরু করা হয়েছিল, তা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র প্রকল্প শুরুর সময়ে হয়নি। তার ফল ভুগতে হচ্ছে। এর সঙ্গে জুড়েছে সরকারি নানা বিধি-নিষেধ। কোনও গ্রামে কারও দান করা জমিতে হয়তো কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। পরে দেখা গিয়েছে, তার পরিবর্তে নানা সুযোগ-সুবিধা দাবি করছেন জমিদাতা ব্যক্তি বা তাঁর পরিবার। বর্তমানে দান করা জমিতে তাই কেন্দ্র গড়তে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছে।
কয়েকটি ব্লকের সিডিপিওরা বলেন, ”কেন্দ্র গড়ার জন্য সরকারি বা স্কুলের জমিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু গ্রামে সরকারি জমি তেমন নেই। যদিও বা মিলছে গ্রাম থেকে অনেকটা দূরে। সেখানে উপভোক্তারা যেতে চাইছেন না। এ দিকে, অনেক স্কুল ভবিষ্যতে আরও ক্লাসরুম তৈরির পরিকল্পনা মাথায় রেখে ফাঁকা জমিতে কেন্দ্র গড়তে অনুমতি দিতে টালবাহানা করছে।” এ ছাড়া, বাড়ি ভাড়া নিয়ে কেন্দ্র চালাতেও সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে জানান তাঁরা।
এই পরিস্থিতিতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালানোর মূল উদ্দেশ্য সিদ্ধ হচ্ছে না, মত অনেকের। রঘুনাথপুর পুরশহর-সহ ব্লকের চার পঞ্চায়েতের কেন্দ্রগুলির সুপারভাইজারের দায়িত্বে থাকা নন্দা দে বলেন, ”ভবন না থাকার মতো পরিকাঠামোর অভাবে কর্মীরা ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছু করে উঠতে পারছেন না।” তাঁদেরও কিছু করণীয় নেই বলে জানিয়ে রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান তরণী বাউরি বলেন, ” অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ভবন তৈরি হোক, আমরা চাই। তবে ছোট ঘন জনবসতিপূর্ণ পুরশহরে সরকারি জমি কার্যত নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy