ঘটনাস্থল: শালবদরার পাথর কল। —নিজস্ব চিত্র।
শালবাদরা পাথর শিল্পাঞ্চলে দু’টি ক্রাশারে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হামলা চালিয়ে ডাম্পার এবং ভারী যন্ত্রে আগুন দিয়ে চলে গেল কয়েক জন। ক্রাশার কর্মীদের একাংশের দাবি, হামলাকারীরা মাওবাদী। তারা ক্রাশার খুলতে বলে হুমকি দিয়ে গিয়েছে। ওই শিল্পাঞ্চল থেকে ঝাড়খণ্ডের মাওবাদী উপদ্রুত বিভিন্ন এলাকা জঙ্গলপথে বেশি দূরে নয়। হামলাকারীরা কি মাওবাদী? সরাসরি জবাব এড়িয়ে জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলেন, ‘‘আমরা সমস্ত সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছি।’’
যে দু’টি কারখানায় হামলা হয়েছে সেগুলি শিল্পাঞ্চলের চাঁদেরজোল ও আলুপাহাড়ি এলাকায়। একটি কারখানা শালবাদরা পাথর শিল্পাঞ্চল মালিক সমিতির সম্পাদক সুখেন্দু রায় এবং সহকারী সম্পাদক আফতাব হোসেনের। অন্যটির মালিক মনোজ ছাজের। শালবাদরা পাথর শিল্পাঞ্চলের মালিক সমিতির সভাপতি হাজি সোহরাব বলেন, ‘‘গত ছ’মাস ধরে রাস্তায় জায়গায় জায়গায় গাড়ি আটকে জুলুম করে চাঁদা আদায় চলছিল। পাথর বোঝাই করতে আসা চালকেরা সেই ভয়ে শিল্পাঞ্চলে ঢুকতে চাইছিলেন না। বাধ্য হয়ে আমরা কাজ বন্ধ রেখেছি।’’ মাস তিনেক ধরে শিল্পাঞ্চল কার্যত বন্ধ রয়েছে। সোহরাব জানান, পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সুরাহা হয়নি। দিন কুড়ি আগে বিভিন্ন এলাকায় মাওবাদীদের নাম করে শিল্পাঞ্চল কাজ চালু করার দাবিতে পোস্টার দেওয়া হয়েছিল। তার পরেই এই হামলার অভিযোগ।
কী হয়েছিল বৃহস্পতিবার রাতে?
দু’টি কারখানার নাইটগার্ড ও ম্যানেজাররা জানান, রাত ১টা নাগাদ কয়েক জন একটি কারখানার আশপাশে অন্ধকারে ঘোরাঘুরি করছিল। টর্চের আলো ফেলতেই ভাগ হয়ে দুষ্কৃতীরা দু’টি কারখানার দিকে এগিয়ে আসে। তাদের পরণে ছিল জংলা ছাপ পোশাক। হনুমান টুপিতে মুখ ঢাকা। পায়ে জুতো। কারও কারও হাতে ভোজালি, রড এবং ছোট আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।
একটি কারখানার নাইট গার্ড দাবি করেছেন, দুস্কৃতীরা হিন্দিতে কথা বলছিল। নাইট গার্ডদের এক জায়গায় এনে মাথা নীচু করে বসিয়ে দেয়। প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ম্যানেজারদের বের করে আনা হয়। তার পরে একটি ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে শিকল তুলে দেওয়া হয়। সূত্রের খবর, একটি কারখানার নাইটগার্ড পুলিশের কাছে দাবি করেছে ওই দুষ্কৃতীরা মাওবাদীদের নাম করে স্লোগান দিচ্ছিল। তারা বলে যায়, ‘‘এত দিন ক্রাশার বন্ধ রয়েছে। মানুষ অনাহারে রয়েছে। এ বারে না খুললে আরও সমস্যা হয়ে যাবে।’’ একটি ক্রাশারের দু’টি ডাম্পার এবং অন্য ক্রাশারের একটি ভারী যন্ত্রে আগুন ধরিয়ে দেয় হামলাকারীরা। প্রায় ঘণ্টা খানেক তারা সেখানে ছিল বলে নাইট গার্ডদের দাবি। কোন দিক দিয়ে পালিয়ে যায়, সেটা আর বুঝতে পারেননি তাঁরা।
শুক্রবার ভোর ৪টে নাগাদ নাইট গার্ড ও ম্যানেজাররা বন্ধ ঘরের পিছন দরজা খুলে আগুন নেভান। সকালে খবর দেন মালিকদের। পুলিশ ও দমকল এলাকায় যায়। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এখনও কেউ গ্রেফতার বা আটক হয়নি।
শালবাদরা পাথর শিল্পাঞ্চল ঝাড়খণ্ডের সীমানায়। শিল্পাঞ্চলের পরেই শুরু হচ্ছে জঙ্গল। চলে গিয়েছে গিরিডি পর্যন্ত। জঙ্গলের রাস্তায় ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়া থানা শিল্পাঞ্চল থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে। ওই থানা এলাকায় মাওবাদীরা অনেক দিন ধরেই সক্রিয় বলে জানা যায়। বেশ কয়েক বছর আগে শালবাদরার একটি ক্রাশারে আগুন দেওয়ার ঘটনায় পুলিশ মাওবাদী যোগের প্রমাণ পেয়েছিল। ঝাড়খণ্ডের দুমকা এলাকার এক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল।
হামলা হওয়া ক্রাশারের একটির মালিক আফতাব হোসেন বলেন, ‘‘সকালে নাইট গার্ডের থেকে খবর পেয়ে এলাকায় এসে দেখি পাথর বোঝাই করার যন্ত্রের ইঞ্জিন আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্য কারখানার দু’টি ডাম্পার পুড়েছে। ছ’মাস ধরে ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। তার উপরে এত বড় ক্ষতি হল।’’ এই ঘটনার তদন্তের পাশাপাশি শিল্পাঞ্চলে অচলাবস্থা কাটাতে পুলিশ, প্রশাসনের পদক্ষেপ দাবি করেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy